লো-স্কোরিং রোমাঞ্চে তামিমদের বিদায় করে ফাইনালে নাজমুলরা
নাজমুল একাদশ ১৬৫ অল-আউট, ৩৯.৩ ওভার (মুশফিক ৫১, আফিফ ৪০, সাইফ ৫/২৬, মোস্তাফিজ ৩/৩৬, মাহাদি ২/৩৪)
তামিম একাদশ ১৫৬ অল-আউট (লক্ষ্য- ৪১ ওভারে ১৬৪), ৪০.৪ ওভার (তামিম ৫৭, মিঠুন ২৯, অঙ্কন ২২; তাসকিন ৪/৩৬, আল-আমিন ১/১৮)
নাজমুল একাদশ ৭ রানে জয়ী
সাইফউদ্দিন হেলমেটটা আকাশে ছুঁড়ে মারলেন, যেন খন্ড-খন্ড হয়ে গেল তা। তার হতাশাটা ছিল এমনই। ওপাশে তখন উল্লাসে মেতেছেন সৌম্যরা। মিরপুরে প্রেসিডেন্টস কাপে ‘ফাইনাল-নির্ধারনী’ ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত রুপ নিল লো-স্কোরিং থ্রিলারে, যেখানে এদিক-ওদিক হেলে গিয়ে শেষ হাসি নাজমুলদের। ৪১ ওভারে ডি-এলে ১৬৪ রান তাড়া করতে গিয়ে শেষ ৩০ বলে ৫ উইকেটে ৩১ রান দরকার ছিল তামিমদের, তবে সেটি করতে পারেননি তারা। মিঠুনের পর সাইফ আশা জুগিয়েও হতাশ হয়েই ফিরে গেছেন। ফলে তামিমদের বিদায়ঘন্টা বেজে গেছে, মাহমুদউল্লাহদের নিয়ে শুক্রবারের ফাইনালে চলে গেছেন নাজমুলরা।
সর্বোচ্চ একজন বোলার ৯ ওভার করতে পারবেন, শেষ ওভারে নাজমুল শান্তর হাতে অপশন হিসেবে ছিলেন দুই স্পিনার রিশাদ ও আফিফ। তবে তিনি আনলেন তখনও বোলিং না করা সৌম্যকে, ১ম বল ডটের পর দ্বিতীয় বলে ডাবলস নিতে গিয়ে শরিফুল রান-আউট হয়েছিলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে। তৃতীয় বলে ছয় মেরে আশা জুগিয়েছিলেন সাইফ, তবে এরপরের বলে আবারও মারতে গিয়ে লং-অনে ধরা পড়লেন তিনি, আউট হলেন শেষ ব্যাটসম্যান হিসেবে।
রানতাড়ায় শুরুতেই বিজয়কে হারিয়ে ফেললেও তামিম-অঙ্কনের জুটিতে ঠিক পথেই ছিলেন তারা। টুর্নামেন্টে এদিন নিজের সেরা ব্যাটিংটা করেছেন তামিম। অবশ্য শুরুটা করেছিলেন বেশ সতর্ক, প্রথম ২৩ বলে করেছিলেন ৩ রান। এরপর তাসকিন আহমেদকে স্ট্রেইট ড্রাইভে চার মেরে ছন্দ পেয়েছেন যেন, অবশ্য এরপর বড়সড় আউটসাইড-এজ হলেও হয়েছিল চার। এরপর তাসকিনকে কাভার ড্রাইভের পর রাহিকে স্ট্রেইট ড্রাইভে মেরেছেন আরেকটি চার।
রাহিকে আরেকটি মিড-অফের ওপর দিয়ে চার মেরেছিলেন, ফিফটি পূর্ণ করেছেন ৭৭ বলে। তার সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট হয়ে মাহিদুল অঙ্কন ফিরে গেলে ভেঙেছে ৬৮ রানের জুটি। থার্ডম্যানে খেলে অঙ্কনের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হয়েছিল তামিমের, স্ট্রাইক-প্রান্তে তাসকিনের ডিরেক্ট থ্রোয়ে ফিরতে হয়েছে অঙ্কনকে।
মুশফিকুর রহিম এরপর চোটে পড়েছেন, আল-আমিনের লাফিয়ে ওঠা বলে এজড হয়েছিলেন রাব্বি, ডানদিকে ছুটে সেটি ধরতে গিয়েছিলেন মুশফিক। ডাইভ দিয়েছিলেন, তবে বাড়িয়ে দেওয়া ডানহাত পড়েছে বাজেভাবে। কাঁধে বরফ লাগিয়ে ফিজিওর সঙ্গে উঠে গিয়েছিলেন তিনি ২৬তম ওভারে।
মুশফিকের চোটের পর রাহির বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে এজড হয়েছেন তামিম। এতক্ষণ ধরে রানের জন্য ভুগতে থাকা রাব্বির নাসুমকে বড় শটের চেষ্টা বৃথা গেছে, হয়েছেন বোল্ড। এর আগে করেছেন ৩৩ বলে ৬ রান। মোসাদ্দেক এরপর তাসকিনের বাইরের বলে হয়েছেন এজড, রান তখন বেড়ে গেছে বলসংখ্যার চেয়ে।
মাহাদি তাসকিনকে আপার-কাট করতে গিয়ে ক্যাচ দিয়েছেন, আকবর মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন তার বলেই। এর আগে মিঠুন একটা ছয় মেরেছিলেন তাসকিনকে, পুল করে মিডউইকেটে। তবে ৪০তম ওভারে ৩২ বলে ২৯ রান করে তিনি ধরা পড়লেন আল-আমিনকে পুল করতে গিয়ে মিডউইকেটে, নাঈমের ভাল ক্যাচে। এরপর আশা হয়ে ছিলেন সাইফই, তবে শেষটা তো তার হলো হতাশার।
অবশ্য প্রথম ইনিংস শেষে তিনি করেছিলেন উদযাপনই, নিয়েছিলেন ৫ উইকেট। শুরুতে ২৫ রানে ৩ উইকেট হারালেও মুশফিকুর রহিম ও আফিফ হোসেনের ৯০ রানের জুটি ভাঙার পর নাজমুল একাদশ শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে ৩৬ রানে।
টসে জিতে ব্যাটিং নেওয়া নাজমুল একাদশের টপ-অর্ডারও টুর্নামেন্টের ‘অলিখিত রীতি’ মেনে বেশিদূর এগুতে পারেনি, ২৫ রানেই হারিয়েছিল ৩ উইকেট। সাইফউদ্দিনের বেরিয়ে যাওয়া বলে খোঁচা মেরে প্রথম ফিরেছিলেন সৌম্য সরকার, এরপর মাহাদিকে তুলে মারতে গিয়ে টপ-এজড হয়ে মিডউইকেটে ধরা পড়েছেন পারভেজ হোসেন ইমন। অধিনায়ক নাজমুল হোসেন শান্ত মোস্তাফিজের স্লোয়ারে মিড-অনে দিয়েছেন ক্যাচ।
আফিফ-মুশফিকের জুটি থিতু হওয়ার আগেই মিরপুরে নেমেছিল তুমুল বৃষ্টি। বেশ খানিক্ষণ বন্ধ থাকার পর ম্যাচ শুরু হয়েছে ৪১ ওভারের হিসেবে। বৃষ্টির পর যথাক্রমে মোস্তাফিজকে মুশফিক ও শরিফুলকে কাভার ড্রাইভে চার মেরে শুরু করেছিলেন আফিফ। দুজনই ছন্দে ছিলেন ভালই।
খালেদকে ফ্লিক করে ইনিংসের একমাত্র ছয়টি মেরেছিলেন মুশফিক, এরপর ফিফটি পূর্ণ করেছিলেন ৭৪ বলে। তবে এরপরের বলেই তুলে মারতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে শরিফুলের ডাইভিং ক্যাচে পরিণত হয়েছেন মুশফিক। আফিফ ফিফটি মিস করেছেন মাহাদিকে রিভার্স-স্কুপ করতে গিয়ে মিস করে বোল্ড হয়ে, ৬১ বলে ৪ চারে তিনি করেছেন ৪০।
এরপর ৫ ওভারে ৫টি উইকেট হারিয়েছে নাজমুল একাদশ। ক্রিজ থেকে বেরিয়ে সাইফকে খেলতে গিয়ে বোল্ড হয়েছেন তৌহিদ হৃদয়। ইরফান শুক্কুরের উইকেট অবশ্য দুর্ভাগ্যজনক, মোস্তাফিজকে দারুণ এক স্কুপ করে ছয় মেরেছিলেন তিনি, তবে ক্রিজের বেশিই ডিপে চলে গিয়ে হয়েছেন হিট-উইকেট।
রিশাদ সাইফের বলে, তাসকিন মোস্তাফিজের বলে হয়েছেন এলবিডব্লিউ। আল-আমিনকে বোল্ড করে এরপর পাঁচ পূর্ণ করেছেন সাইফ, করেছেন তার নিয়মিত উদযাপন।
তবে সেটিই শেষ হয়ে থেকেছে তার জন্য, তামিমের দলের জন্যও।