• আইপিএল
  • " />

     

    আইপিএলে যে কারণে অবিক্রিত থেকে গেলেন সাকিব

    আইপিএলে যে কারণে অবিক্রিত থেকে গেলেন সাকিব    

    বিপিএলের দারুণ ফর্ম হিসেবে নিলে সাকিব আল হাসানকে নিয়ে আইপিএলের নিলামে তোলপাড় পড়ে যাওয়ার কথা। কিন্তু হলো এর উল্টো। নিলামের দুইদিনেও কোনো দল পাননি সাকিব। প্রথমদিন অবিক্রিত থাকার পর দ্বিতীয়দিনও তাকে তোলা হয় নিলামে। কিন্তু সেবারও আগ্রহ দেখায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। আইপিএলের ৯ আসর খেলা সাকিবকে নিয়ে কেন আগ্রহী নয় কেউ? 

    দল না পাওয়ার নেপথ্যে ভূমিকা থাকতে পারে সাকিবের গত আইপিএলের পারফর্ম্যান্সের। আগের আসরে কলকাতা নাইট রাইডার্সের হয়ে ৮ ম্যাচে করেছেন মাত্র ৪৭ রান। উইকেট নিয়েছেন চারটি। ব্যাটে-বলে দারুণ এক অলরাউন্ডার হলেও, টি-টোয়েন্টির ‘এক্স ফ্যাক্টর’ ব্যাপারটি সেভাবে হয়তো সাকিবের মাঝে খুঁজে পায়নি কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। এই বিপিএলের আগে সাকিব আন্তর্জাতিক টি-টোয়েন্টিতেও চোখ ধাঁধানো কিছু করতে পারেননি। 

    প্রথমদিন সাকিবের সাথে অবিক্রিত ছিলেন মোহাম্মদ নবি, ডেভিড মিলারও। সেদিনই জানা যায় ফ্র্যাঞ্চাইজিদের আগ্রহ বুঝে দ্বিতীয়দিনও নিলামে তোলা হবে অবিক্রিত ক্রিকেটারদের। ডেভিড মিলার-নবিরা দ্বিতীয় দফায় দল পেলেও সাকিবকে কেউ নেয়নি। অর্থাৎ, সাকিবের প্রতি আগ্রহ ছিল কোনো না কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজির। কিন্তু শেষ মুহূর্তের সিদ্ধান্তেই হয়তো সাকিবের জন্য দর হাঁকায়নি তারা। 

    আসছে মার্চে ৩৫-এ পা দিবেন সাকিব। দল না পাওয়ার ক্ষেত্রে এই অলরাউন্ডারের বয়সও একটা বড় বাধা হতে পারে। হয়তো একই কারণে দল পাননি সুরেশ রায়না। আইপিএলে তার দীর্ঘদিনের সঙ্গী চেন্নাই সুপার কিংসও আগ্রহ দেখায়নি নিলামে। বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যানের বয়স এখন ৩৫। 

    ভিত্তিমূল্য এবং বাংলাদেশ জাতীয় দলের সূচিও সাকিবের দল পাওয়ার অন্তরায় হতে পারে। ভিত্তিমূল্য ছিল দুই কোটি। এবারের আইপিএল নিলামে সর্বোচ্চ শ্রেণিতেই ছিলেন সাকিব। তার জন্য কোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি বিড করলে, হয়তো অন্য কেউ এসেও যোগ দিত নিলামের কাড়াকাড়িতে। সাকিবেরও হতো চড়া দাম। এত দাম দিয়ে কিনলে সাকিবকে পুরো আসরের জন্য পেতে চাইবে যেকোনো ফ্র্যাঞ্চাইজি। 

    এই চাওয়াতে বাধা দিচ্ছে বাংলাদেশ জাতীয় দলের সূচি। আইপিএলের শুরু আর শেষদিকে জাতীয় দলের হয়ে ব্যস্ত থাকবেন সাকিব। তখন দক্ষিণ আফ্রিকা ও শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে খেলবে বাংলাদেশ। ভারতীয় গণমাধ্যমের খবর, ২৭ মার্চ শুরু হতে পারে এবারের আইপিএল। তাদের অন্যান্য সূত্র অবশ্য বলছে, এপ্রিলের ২ তারিখও মাঠে গড়াতে পারে আইপিএল। 

    এদিকে বাংলাদেশের দক্ষিণ আফ্রিকা সফরের তিন ম্যাচের ওয়ানডে সিরিজ ১৮ মার্চ শুরু হয়ে শেষ হবে ২৩ মার্চ। দুই টেস্টের সিরিজ শুরু হবে ৩১ মার্চ। শেষ হবে ৮ এপ্রিল। যদিও দেশের শীর্ষ সংবাদমাধ্যমগুলোর বরাতে জানা গেছে, টেস্ট সিরিজে খেলবেন না সাকিব। 

    দক্ষিণ আফ্রিকা সফর থেকে ফিরে ঘরের মাঠে মে মাসে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে টেস্ট সিরিজ খেলবে বাংলাদেশ। সেই সিরিজে অবশ্য সাকিব থাকছেন। অনুমিতভাবেই তখন আইপিএলের জন্য ফাঁকা থাকছেন না তিনি। আইপিএলেও তখন চলবে শেষাংশের খেলা। কাজেই সাকিবের সাথে মিলছে না আইপিএলের সূচি। নিলামের আগে ভারতীয় বোর্ডকেও তা জানিয়েছে বিসিবি। 

    টুর্নামেন্টের বেশিরভাগ ম্যাচে কোনো ক্রিকেটারকে যদি না-ই পাওয়া যায়, তাহলে কোন ফ্র্যাঞ্চাইজিই সেই ক্রিকেটারের ওপর বিনিয়োগ করতে যাবে? যেখানে খরচের বিপরীতে প্রাপ্তি অনেক কম। সাকিবের ক্ষেত্রেও হয়তো একইভাবে হিসেব মিলিয়েছে ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলো। এর ওপর সাকিবকে কিনলে তিনি খেলবেন বিদেশি কোটায়। বলা চলে সেই ক্ষেত্রে একজন বিদেশি ক্রিকেটারের স্লটও ফাঁকাই থাকবে সংশ্লিষ্ট ফ্র্যাঞ্চাইজিটির।  

    মার্কি সেটের দশ ক্রিকেটারের পর নিলাম ওঠেন ব্যাটসম্যানরা। এরপর অলরাউন্ডারদের নিয়ে হওয়া তৃতীয় সেটের নিলামের চার নম্বরে ওঠানো হয় সাকিবের নাম। তখন অনেকটা সময়জুড়ে নিলামের কক্ষে ছিল নীরবতা। নিলাম সঞ্চালকও বারবার তাকাচ্ছিলেন ফ্র্যাঞ্চাইজি মালিকদের দিকে। ক্যামেরার ফোকাসও ছিল সেদিকেই। কিন্তু কোনো দলই দর হাঁকায়নি সাকিবের জন্য। নিলামের দ্বিতীয়দিনও হয়েছে একই দৃশ্যের পুনঃপ্রচার। 

    ২০১১ সালের পর এবারই প্রথম আইপিএলের নিলামে অবিক্রিত রইলেন সাকিব। অথচ সাকিবের সাম্প্রতিক ফর্ম ও ফ্র্যাঞ্চাইজি ক্রিকেটের অভিজ্ঞতার বিচারে নিলামে তাকে নিয়ে আগ্রহের কমতি থাকার কথা ছিল না। 

    সাকিব-রায়নার সঙ্গে অবিক্রিত থেকে গেছেন মুজিব উর রহমান, অইন মরগান, অ্যারন ফিঞ্চ, স্টিভেন স্মিথ, বেন কাটিং, ময়েসেস হেনরিকসের মতো ক্রিকেটাররাও। তাদের নিয়েও ফ্র্যাঞ্চাইজিগুলোর ভাবনা হয়তো ঘুরপাক খেয়েছে আইপিএলের বিগত আসরে তাদের পারফর্ম্যান্স, কারো ক্ষেত্রে বয়স এবং বিনিয়োগের বিপরীতে প্রাপ্তির সম্ভাবনা নিয়ে।