ওডিন স্মিথের শাপমোচনে পাঞ্জাবের স্নায়ু-পরীক্ষায় উত্তরণ
মুম্বাই-পাঞ্জাব, পুনে (টস-মুম্বাই/ফিল্ডিং)
পাঞ্জাব কিংস- ১৯৮/৫, ২০ ওভার (ধাওয়ান ৭০, মায়াঙ্ক ৫২, জিতেশ ৩০*, থাম্পি ২/৪৭, বুমরাহ ১/২৮, মু. আশ্বিন ১/৩৪)
মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স- ১৯৩/৯, ২০ ওভার (ব্রেভিস ৪৯, সূর্যকুমার ৪৩, তিলক ৩৬, স্মিথ ৪/৩০, রাবাদা ২/২৯, বৈভব ১/৪৩)
ফলাফল:পাঞ্জাব ১২ রানে জয়ী
চেন্নাইয়ের ভাগ্য খুললেও নিজেদের পঞ্চম ম্যাচে এসেও গেরো খুলল না মুম্বাইয়ের। তবে নিজেকে ঠিকই পুনরুদ্ধার করলেন বিপক্ষ শিবিরের একজন। রুদ্ধশ্বাস লড়াইয়ে জয়ীর ওপর প্রান্তে পরাজিতের বিষাদটা হয়ত বেশিরভাগেরই চক্ষুগোচরের আড়ালেই থেকে যায়। নিজেকে মেলে ধরে সেই শাপমোচন ঠিকই করলেন শেষ ওভারে মুম্বাইয়ের কফিনে পেরেক ঠুকে ৩ উইকেট নিয়ে। এর আগে শিখর ধাওয়ান-মায়াঙ্ক আগারওয়ালের ওপেনিং জুটির পরে জিতেশ শর্মার দারুণ ক্যামিওতে যেই বড় পুঁজি পেয়েছিল পাঞ্জাব তা হুমকির মুখে পড়েছিল ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের দুর্দান্ত ইনিংসে। হারের বৃত্ত থেকে এবারও মুম্বাইয়ের বের হওয়া হল না শেষে স্মিথ-রাবাদার দারুণ ডেথ বোলিংয়ে।
মায়াঙ্ক-ধাওয়ান: ব্যাটিং দ্যা পাঞ্জাব ওয়ে
আইপিএলের শুরুতেই পাঞ্জাব কোচ অনিল কুম্বলে ঘোষণা দিয়েছিলেন তার দল এবার বেশ কিছু ম্যাচেই ৭০-৮০ রানে গুটিয়ে যেতে পারে; তবে যেদিন তার দলের ব্যাটাররা সফল হবে সেদিন ১৮০-এর নিচে কোনও স্কোর হবে না। উইকেটে এসেই তেড়েফুঁড়ে খেলার এই প্রয়াস সেই প্রথম ম্যাচ থেকেই দেখা গিয়েছে পাঞ্জাবের ব্যাটিংয়ে, ব্যতিক্রম হল না এদিনও। ব্যতিক্রম শুধু ওপেনারদের সফলতায়। অধিনায়ক মায়াঙ্ক ও ধাওয়ান দুজনেই এদিন পেয়েছেন রানের দেখা। ধাওয়ান কিছুটা রয়েসয়ে শুরু করলেও মায়াঙ্কের সপ্রতিভ ইনিংসে পাওয়ারপ্লেতেই পাঞ্জাবের স্কোরবোর্ডে উঠে যায় ৬৫ রান। নবম ওভারে টিমাল মিলসকে দারুণ এক ছয় মেরে ২৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন পাঞ্জাব অধিনায়ক। পরের ওভারেই অবশ্য মুরুগান আশ্বিনকে মাঠছাড়া করতে গিয়ে শেষ হয় তার ৩২ বলে ৫২ রানের ইনিংস। এরপর অবশ্য ধাওয়ান কিছুটা গুটিয়ে যান; এমনকি ৪৪ রানে থাকার সময়ে পেয়েছিলেন জীবন। পরের ওভারেই অবশ্য ৩৭ বলে নিজের ফিফটি পূর্ণ করেন তিনি। অন্য প্রান্তে উইকেট হারানো ও শেষের দিকে গিয়ার পাল্টানোর তাগিদে বাসিল থাম্পিকে এক ছয় মারার পরের বলে একই কাজ করতে গিয়ে স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে ৫০ বলে ৭০ রান করে থামেন ধাওয়ান। তবে ঐযে পাঞ্জাব ব্যাটিংয়ের কথা বল হল-সেটিই এরপর দেখালেন জিতেশ শর্মা ও শাহরুখ খান।জয়দেব উনাদকাটের করা পরের ওভারে ২টি করে চার ও ছয়ে ২৩ রান নেন জিতেশ। শেষ ওভারে থাম্পিকে টানা দুই ছয় মারার পর শাহরুখ থামলেও ১৫ বলে ৩০* রানের দারুণ ক্যামিও শেষে অপরাজিত থাকেন জিতেশ।
পাদপ্রদীপের তলে বেবি এবি; সূর্যকুমারের লড়াই শেষে স্মিথের শাপমোচন
বড় লক্ষ্য তাড়ায় নেমে রোহিত শর্মা-ঈশান কিষান জুটি আরও একবার ব্যর্থ। মাত্র ২য় ভারতীয় হিসেবে টি-টোয়েন্টিতে ১০,০০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করার দিনে রোহিত করতে পারলেন ১৭ বলে ২৮ রান। পরের ওভারেই মাত্র ৩ রানেই কিষান ফিরলে ইনিংস মেরামতের দায়িত্ব বর্তায় দুই তরুণ তিলক ভার্মা ও ডেওয়াল্ড ব্রেভিসের ওপর। বেবি এবি সেই ভুমিকায় বিন্দুমাত্র বিচলিত না হয়ে ঠিকই নিজের জাত চেনালেন। রাহুল চাহারকে টানা ৪টি ছয় মেরে সাবেক মুম্বাই লেগ স্পিনারের লাইন একেবারে ছত্রভং করে দেন ব্রেভিস; ওভারেও নেন মোট ২৮ রান! অন্য প্রান্তে তিলকও ছিলেন না পিছিয়ে। তবে ওডিন স্মিথের বলে সুযোগ পাওয়ার ঠিক পরের বলেই বাউন্সার মাঠছাড়া করতে গিয়ে থামে ব্রেভিসের ২৫ বলে ৪৯ রানের দারুণ ইনিংস। ব্রেভিস ফেরার পর কিছুটা চাপে পড়েই বিপদজনক রান নিতে গিয়ে সূর্যকুমার যাদবের সাথে ভুল বুঝাবুঝিতে রান আউট হয়ে শেষ হয় তিলকের ২০ বলে ৩৬ রানের ইনিংস। অন্য প্রান্তে ক্রমাগত উইকেট হারাতে থাকা মুম্বাইকে আরও একবার ম্যাচে রেখেছিলেন এই মৌসুমে দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সূর্যকুমার। সঙ্গীর অভাবে একাই আক্রমণের দায়িত্ব নিয়ে খেলতে থাকা সূর্যকুমার ১৯তম ওভারে রাবাদার নিচু হয়ে আসা ফুল টস মাঠছাড়া করতে গিয়ে বাউন্ডারিতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ৩০ বলে ৪৩ রান করে। শেষ ওভারে স্মিথ একে একে উনাদকাট, বুমরাহ ও মিলসকে ফেরালে তাই আরও একবার হতাশা নিয়েই ফিরতে হয় মুম্বাইকে। এইতো সেদিনই তেওয়াতিয়ার কাছে শেষ দুই বলে ছয় খেয়ে ভেঙে পড়েছিলেন; তবে মায়াঙ্ক তার ওপর রেখেছিলেন শতভাগ আস্থা। অধিনায়কের আস্থার মর্যাদা রেখে কি দারুণভাবেই না ফিরে এলেন স্মিথ!