• আইপিএল
  • " />

     

    নিজেদের শততম ম্যাচে জয়ের তৃপ্তি: 'রাজসিক রাহুল'; 'মারকুটে ম্যাক্সওয়েল'-এর পরে 'কুল কার্তিক'

    নিজেদের শততম ম্যাচে জয়ের তৃপ্তি: 'রাজসিক রাহুল'; 'মারকুটে ম্যাক্সওয়েল'-এর পরে 'কুল কার্তিক'    

    দিল্লি-বেঙ্গালুরু, ওয়াঙ্খেড়ে (টস-দিল্লি/ফিল্ডিং)
    রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স বেঙ্গালুরু- ১৮৯/৫, ২০ ওভার (কার্তিক ৬৬*, ম্যাক্সওয়েল ৫৫, শাহবাজ ৩২, ঠাকুর ১/২৭, অক্ষর ১/২৯, খলিল ১/৩৬)
    দিল্লি ক্যাপিটালস- ১৭৩/৭, ২০ ওভার (ওয়ার্নার ৬৬, পান্ট ৩৪, ঠাকুর ১৭, হেজলউড ৩/২৮, সিরাজ ২/৩১, হাসারাঙ্গা ১/৪০)
    ফলাফল: বেঙ্গালুরু ১৬ রানে জয়ী

     

    এবারের আসরে দীনেশ কার্তিক যেন হয়ে উঠেছেন দুর্দমনীয়! আরও একদিন ডেথ ওভারে ঝড় তুলেছেন; ম্যাক্সওয়েলের আক্রমণাত্মক ইনিংস থামার পর শাহবাজ আহমেদের সাথে জুটি গড়ে দলকে এনে দিয়েছেন এক সময়ে অকল্পনীয় মনে হতে থাকা দলীয় সংগ্রহ এনে দেন। ডেভিড ওয়ার্নারের ঝড়ো শুরুর পর যেই লক্ষ্য অতিক্রম করে যাওয়ার স্বপ্ন দেখছিল সেই স্বপ্ন পরে ভন্ডুল করেছেন তারই স্বদেশী জশ হেজলউড। কার্তিকের ইনিংসের মান রক্ষা করে মোস্তাফিজদের আশাহত করে বেঙ্গালুরু ফিরেছে জয়ের ধারায়।
     
    ম্যাক্সওয়েলের প্রতি আক্রমণের পর কার্তিক-শাহবাজ ঝড়

    মোস্তাফিজ-ঠাকুর-খলিলদের তোপে পাওয়ারপ্লেতে দুই ওপেনারকে হারানোর পর ঠিক পরের ওভারেই রান আউটে ভিরাট কোহলিকেও হারায় বেঙ্গালুরু। অথচ সেসবের তোয়াক্কা না করে উইকেটে এসেই প্রতি আক্রমণে যান গ্লেন ম্যাক্সওয়েল। কুলদিপ যাদবকে তিনি স্বাগত জানান ২টি করে চার ও ছয়ে ২৩ রান নিয়ে। পরের ওভারে প্রভুদেসাইকে হারালেও এরপর ৩০ বলে ফিফটি তুলে নেন আইপিএলে নিজের ১০০তম ম্যাচ খেলতে নামা ম্যাক্সওয়েল। তবে ম্যাক্সওয়েল-কুলদিপ দ্বৈরথে শেষ হাসি হাসেন কুলদিপই; ৩৪ বলে ৫৫ রান করা ম্যাক্সওয়েলকে লং অনে তালুবন্দি করে। ১৩ ওভারে যখন বেঙ্গালুরু ১০০ রানের মাইলফলক স্পর্শ করে তখনই তারা হারিয়ে বসেছে ৫ উইকেট। উইকেটে এসে কার্তিকও খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না বলে দিল্লি তখন ১৫০-এর মধ্যেই বেঙ্গালুরুকে বেঁধে ফেলার স্বপ্ন দেখছে। দুর্দান্ত ফর্মে থাকা সেই কার্তিকই তাদের স্বপ্ন ধূলিসাৎ করে দিলেন। বাংলাদেশী পেসারদের ডেথ ওভারে পেলেই যেন কার্তিকের চোখ জ্বলজ্বল করে ওঠে। যেই মোস্তাফিজ ৩ ওভার শেষে দিয়েছিলেন ২০ রান; ১৭তম ওভারেও যিনি দারুণ বল করে গুনলেন মোটে ৫ রান সেই মোস্তাফিজকেই বেঁছে নিলেন কার্তিক গিয়ার পাল্টানোর জন্য। উদ্ভাবনী সব শটের পাশাপাশি ব্যাকরণ মেনেও খেললেন কার্তিক; ওভারের প্রতি বলে বাউন্ডারি বের করে মোস্তাফিজের করা ১৮তম ওভারে নিলেন ২৮ রান! ২৬ বলেই ওই ওভারে ফিফটি পূর্ণ করেই থামেননি কার্তিক, টিকে থেকেছেন শেষ পর্যন্ত।  শেষ দিকে শাহবাজও চড়াও হয়েছিলেন। ২১ বলে ৩২* রানে শাহবাজ অপরাজিত থাকলে অন্য প্রান্তে ৩৪ বলেই ৬৬* রান করে কার্তিক এবারের আসরে ৬ ম্যাচের মধ্যে ৫ম বার থাকেন অপরাজিত! আর দলকে এনে দেন এমন এক সংগ্রহ যা এক সময় মনে হচ্ছিল অসম্ভব।

    অস্ট্রেলিয়ান দ্বৈরথে শেষ হাসি হেজলউডের

    পৃথ্বী শকে নিয়ে আরও একটি ঝড়ো শুরু করেছিলেন ডেভিড ওয়ার্নার। তবে অন্য প্রান্তে এদিন সহায়তা পাননি বললেই চলে। ৩৮ বলে ৬৬ রান করে যখন ফিরলেন সেটার কিছুটা দায় বর্তায় অন্য প্রান্তে মিচেল মার্শের শ্লথ ব্যাটিংয়ে। এরপর ঋষাভ পান্ট চেষ্টা করলেও ৩৭ রানের বেশি যেতে পারেননি। জশ হেজলউডের দুর্দান্ত এক ওভারে রভম্যান পাওয়েল ও ললিত যাদব ফেরার পরে ক্রমেই নিভে যায় দিল্লির আশা। শার্দুল ঠাকুরকেও নিজের শেষ ওভারে ফিরিয়ে দিল্লির কফিনে শেষ পেরেক ঠুকে দেন এই হেজলউডই।

     


     

    মুম্বাই-লক্ষ্ণৌ, ব্রাবোর্ন (টস-মুম্বাই/ফিল্ডিং)
    লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস- ১৯৯/৪, ২০ ওভার (রাহুল ১০৩*, পান্ডে ৩৮, ডি কক ২৪, উনাদকাট ২/৩২, মু.আশ্বিন ১/৩৩, অ্যালেন ১/৪৬)
    মুম্বাই ইন্ডিয়ান্স- ১৮১/৯, ২০ ওভার (সূর্যকুমার ৩৭, ব্রেভিস ৩১, তিলক ২৬, আভেশ ৩/৩০, স্টইনিস ১/১৩, বিষ্ণোই ১/৩৪)
    ফলাফল: লক্ষ্ণৌ ১৮ রানে জয়ী

     

    ব্রাবোর্নে মুম্বাই নেমেছিল হারের বৃত্ত থেকে বের হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে। তবে শততম আইপিএল ম্যাচ খেলতে নামা লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক লোকেশ রাহুলের ছিল অন্য পরিকল্পনা। শুরুটা ছিল সাবধানী; বুমরাহকে খেলছিলেন দেখেশুনে। টিমাল মিলস বোলিংয়ে এলে ফুল লেংথের প্রথম বলটাই এক্সট্রা কাভার দিয়ে বাউন্ডারিতে পাঠানোর পর ওয়াইড একটা বাউন্সার যখন সপাটে কাভারের ওপর দিয়ে মাঠছাড়া করলেন, তখনই রাহুল হয়ত টের পেয়েছেন আজ তারই দিন। টের পায়নি মুম্বাই বোলাররাই। ২০১৯ আইপিএলের পর রাহুল এই টুর্নামেন্টে খাটো লেংথের বলে আউট তো হননি বরং রান তুলেছেন ১৫০+ স্ট্রাইক রেটে। সেই রাহুলকেই পেসাররা দিয়ে গেলেন শর্ট বল; স্পিনাররাও দিতে থাকলেন তাই। সব বোলারদের লেংথ এলোমেলো করে রাহুল প্রায় একাই এগিয়ে নিয়ে যান দলকে। ফিফটি করতে সময় নিয়েছিলেন ৩৩ বল। তবে এরপর গিয়ার পাল্টে ১৯তম ওভারে যখন নিজের ৩য় আইপিএল সেঞ্চুরি ছুঁলেন তখন বলের সংখ্যা মোটে ৫৬! আইপিএলের ইতিহাসে প্রথম ব্যাটার হিসেবে শততম ম্যাচে সেঞ্চুরি পাওয়ার দিনে শেষমেশ অপরাজিত থাকলেন ৬০ বলে ১০৩* রান করে।

    রাহুলের কল্যাণে ২০০ রানের লক্ষ্য ছুঁড়ে দেওয়ার পর মুম্বাইকে কোনও পর্যায়েই মনে হয়নি ম্যাচের চালকের আসনে থাকতে। ডেওয়াল্ড ব্রেভিস ঝড়ো শুরু করলেও ১৩ বলেই ৩১ রান করে থামে তার যাত্রা। সূর্যকুমার এসে ত্রাস সঞ্চারের চেস্টা করলেও বিষ্ণোইকে বড় বাউন্ডারির ওপর দিয়ে আছড়ে ফেলতে গিয়ে তালুবন্দি হয়ে ফেরেন তিনি। শেষ দিকে পোলার্ড-উনাদকাটরা একটু হম্বিতম্বি করলেও দুশমন্থ চামিরার শেষ ওভারে ৩ উইকেট পড়লে শেষমেশ সহজ জয়ই পায় রাহুলের দল। আর টানা ৬ষ্ঠ ম্যাচ হেরে কার্যত শেষ হয়ে গিয়েছে মুম্বাইয়ের প্লেঅফের আশা।