'বস বাটলার'-এর পর 'চতুর চেহেলে' রাজস্থানের ব্রাবোর্ন থ্রিলার জয়
রাজস্থান-কলকাতা, ব্রাবোর্ন (টস-কলকাতা/ফিল্ডিং)
রাজস্থান রয়্যালস- ২১৭/৫, ২০ ওভার (বাটলার ১০৩, স্যামসন ৩৮, হেটমায়ার ২৬*, নারাইন ২/২১, রাসেল ১/২৯, মাভি ১/৩৪)
কলকাতা নাইট রাইডার্স- ২১০, ১৯.৫ ওভার (শ্রেয়াস ৮৫, ফিঞ্চ ৫৮, উমেশ ২১, চেহেল ৫/৪০, ম্যাকয় ২/৪১, আশ্বিন ১/৩৮)
ফলাফল: রাজস্থান ৭ রানে জয়ী
১৬ ওভার শেষে কলকাতার স্কোরবোর্ড বলছে ১৭৮/৫। উইকেটে তখন ৫০ বলে ৮৫ করে জয়ের দিকে দলকে নেতৃত্ব দিয়ে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া শ্রেয়াস আইয়ার, সাথে কলকাতার হয়ে সাধারণত ওপেন করলেও ভারতের হয়ে মিডল অর্ডারে নিজের যোগ্যতার প্রমাণ দেওয়া ভেঙ্কটেশ আইয়ার। কলকাতার জয়ের পক্ষেই তখন বোধহয় বাজির দর বেশি। নিজের শেষ ওভার করতে যুজবেন্দ্র চেহেল এসে এরপর যা করলেন তা এক কথায় অবিশ্বাস্য! প্রথম বলে ভেঙ্কটেশকে ফেরানোর পর শেষ তিন বলে পূর্ণ করলেন হ্যাটট্রিক, একে একে শ্রেয়াস, মাভি ও কামিন্সকে ফিরিয়ে। কলকাতার সলিল সমাধির আয়োজন করে চেহেল যখন আছেন স্বভাবজাত হালকা মেজাজে তখনই আবার দৃশ্যপটে পরিবর্তন। রাজস্থানের সেরা পেসার ট্রেন্ট বোল্টকে তুলোধনা করে ম্যাচে আবার কলকাতাকে ফিরিয়ে আনলেন এমন একজন যাকে হয়ত রাজস্থান গোণায়ই ধরেনি - উমেশ যাদব! পেন্ডুলামের মত দুলতে থাকা ম্যাচের কাটা শেষমেশ রাজস্থানের দিকেই স্থির হয় ওবেড ম্যাকয়ের দুই উইকেট নেওয়া শেষ ওভারে। অথচ ব্রাবোর্নে জস বাটলারের আসরে ২য় সেঞ্চুরিতে রাজস্থান যখন মৌসুমের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহ পেয়েছিল তখন কি ভেবেছিল যে ব্যাটিং বিভাগে ধুঁকতে থাকা এই কলকাতাই এভাবে ম্যাচে প্রাণ সঞ্চার করবে। স্নায়ু ধরে রেখে শেষ পর্যন্ত যে রাজস্থান জয় পেল তার জন্য তাই এবারের অরেঞ্জ ক্যাপ ও পার্পল ক্যাপের দৌড়ে শীর্ষস্থানীয় এই দুই তারকাকে রাজস্থানের ধন্যবাদ জানাতেই হয়।
মূল কারিগর বাটলার; সহযোগী স্যামসন ও হেটমায়ার
দেবদুত পাডিকালকে নিয়ে শুরু থেকে চড়াও হয়ে বাটলার যখন দৌড়ে চার রান নিলেন তখনই যেন বার্তা দিলেন এদিন রানের সুযোগ পেলেই দুহাত লুফে নেবেন। দুজনে মিলে এবারের আসরে পাওয়ারপ্লেতে রাজস্থানের সর্বোচ্চ ৬০ রান তুলে ফেলেন। পরের ওভারেই প্যাট কামিন্সকে চার মেরে ২৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন বাটলার। ১০ম ওভারে নারাইনের শিকার হয়ে পাডিকাল ২৪ রানে ফিরলেও ততক্ষণে এবারে তাদের সর্বোচ্চ ৯৯ রানের ওপেনিং জুটি গড়ে ফেলেছেন দুজন মিলে। উইকেটে এসে স্যামসন সাথে সাথেই যোগ দিলেন বাটলারের আতশাবাজিতে। ১৯ বলে ৩৮ রান করে ১৬তম ওভারে রাজস্থান অধিনায়ক যখন বিদায় নিলেন তখনও ছুটছেন বাটলার; নেই কোনও গতি কমার লক্ষণ। পরের ওভারে প্রথম বলেই কামিন্সকে ছয় মেরে ৫৯ বলে ছুঁয়ে ফেলেন আসরে নিজের দ্বিতীয় সেঞ্চুরি। এক বল পরে কামিন্সের বাউন্সার মাঠ ছাড়া করতে গিয়ে শেষ হয় তার ৬১ বলে ১০৩ রানের অতিমানবীয় ইনিংস। আক্রমণের ব্যাটনটাও যেন উইকেটে থাকা হেটমায়ারকে পৌঁছে দিয়ে তবেই ফেরেন বাটলার। রাসেলক শেষ ওভারে ২টি ছয় ও ১টি চার মেরে ১৩ বলে ২৬* রানে অপরাজিত থেকে হেটমায়ার নিশ্চিত করেন বিশাল সংগ্রহ।
ফিঞ্চ ঝড়, শ্রেয়াসের অধিনায়কোচিত ইনিংসের আলো কেড়ে পাদপ্রদীপের তলে চেহেল
নারাইনকে এদিন কলকাতা ওপেন করতে নামালেও রানের খাতা খোলার আগেই রান আউট হয়ে ফেরেন তিনি। ফিঞ্চের ফর্মও সুবিধাজনক নয়। শ্রেয়াস এসে অবশ্য যখন হাত খুলে খেলতে শুরু করলেন তখন ফিঞ্চ তখন সময় নিয়েই খেললেন। চেহেলকে তিন চারে স্বাগত জানিয়েই হাত খোলেন এরপর ফিঞ্চ। ২৫ বলেই প্রাসিধ কৃষ্ণাকে চার মেরে পঞ্চাশ ছুঁয়ে ফেলেন তিনি। ওই ওভারেই বাউন্সার মাঠছাড়া করতে গিয়ে থামে ফিঞ্চের ২৮ বলে ৫৮ রানের ঝড়। পরের ওভারেই ৩২ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কলকাতা অধিনায়ক। অন্য প্রান্তে চেহেলের ওপর চড়াও হয়ে ওই ওভারের শেষ বলে যেন উইকেটটা একদম ছুঁড়েই দিয়ে আসেন ১১ বলে ১৮ রানে থাকা নিতিশ রানা। পরের ওভারেই দুর্দান্ত এক ক্যারম বলে রানের খাতা খোলার আগেই আন্দ্রে রাসেলের স্টাম্প রবিঞ্চন্দ্রন আশ্বিন উপড়ে ফেলেন; ছুটতে থাকা কলকাতা যেন হুট করেই খেই হারিয়ে বসে। পরের ওভারে স্যামসন যখন শ্রেয়াসের ক্যাচ ফেলে দেন, ৬৬ রানে থাকা শ্রেয়াস বোধহয় তখন ভেবেছিলেন ভাগ্য আজ তাদের সহায় হবে। ভাগ্যদেবী যে এক ওভারের মাঝেই এভাবে মুখ ফিরিয়ে নিবে তা কি আর ঘুণাক্ষরেও ভেবেছিলেন তিনি! চেহেলের ভেল্কিতে ওই এক ওভারে চার উইকেট হারিয়ে কলকাতা শিবির তখন বিধ্বস্ত। সেই শিবিরে হঠাৎই প্রাণ ফিরিয়ে আনলেন উমেশ; তাও আবার বোল্টকে দুই ছয় ও এক চার মেরে ওভারে ২০ রান তুলে। শেষ ওভারে যখন প্রয়োজন ১১ রান ও উইকেটেও আছেন উমেশ তখন কলকাতা পুনরায় জয়ের স্বপ্নে বিভোর। মাথা ঠাণ্ডা রেখে উইকেটে থাকা শেল্ডন জ্যাকসন ও উমেশকে ফিরিয়ে সেসব সম্ভাবনা মুহূর্তেই দুমড়ে মুচড়ে অবশ্য রাজস্থান শিবিরে স্বস্তি ফেরান ম্যাকয়।