গুজরাটের থ্রিলার জয়; ব্রাবোর্নে বেঙ্গালুরুর অভিশপ্ত দিনে হায়দ্রাবাদের পাঁচে পাঁচ
বেঙ্গালুরু-হায়দ্রাবাদ, ব্রাবোর্ন (টস-হায়দ্রাবাদ/বোলিং)
রয়্যাল চ্যালেঞ্জার্স হায়দ্রাবাদ- ৬৮, ১৬.১ ওভার (প্রভুদেসাই ১৫, ম্যাক্সওয়েল ১২, হাসারাঙ্গা ৮, নাটারাজান ৩/১০, ইয়ানসেন ৩/২৫, সুচিথ ২/১২)
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ- ৬৯/১, ২০ ওভার (অভিষেক ৪৭, উইলিয়ামসন *, হার্শাল ১/)
ফলাফল: হায়দ্রাবাদ ৯ উইকেটে জয়ী
২৩ এপ্রিল তারিখটা বেঙ্গালুরুর জন্য যেন দুই মেরুর দুই দিন! এই দিনেই আইপিএলের ইতিহাসের সর্বোচ্চ দলীয় সংগ্রহের পাশাপাশি এই দিনেই তারা ডুবেছিল আইপিএলের ইতিহাসের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহের লজ্জায়। এই ২০২২ সালে এসে ডুবল আরও এক লজ্জায় - আসরের সর্বনিম্ন দলীয় সংগ্রহ। হায়দ্রাবাদের মার্কো ইয়ানসেন দ্বিতীয় ওভারেই বেঙ্গালুরুর টপ অর্ডার ধসিয়ে দেওয়ার পরে যেই ভয় তারা পেয়েছিল সেটাই সত্যি করেছে এরপর নাটারাজান-জগদিশা সুচিথ-উমরান মালিকেরা। অভিষেক শর্মার দ্রুতগতির ইনিংসে মামুলি সেই লক্ষ্য অনায়াসে টপকে টানা পঞ্চম জয় পেল হায়দ্রাবাদ।
ইয়ানসেন ২য় ওভারে বল হাতে নিয়ে প্রথম বলেই ফেরালেন বেঙ্গালুরু অধিনায়ক ফাফ ডু প্লেসিকে। পরের বলে উইকেটে এসেই প্যাভিলিয়নের পথ ধরলেন ভিরাট কোহলি, টানা দুই ম্যাচে হলেন গোল্ডেন ডাকের শিকার! এই ২৩ এপ্রিলে শেষ যেবার গোল্ডেন ডাকের শিকার হয়েছিলেন কোহলি সেবার ৪৯ রানে গুটিয়ে গিয়েছিল বেঙ্গালুরু। নিয়তির কী নির্মম পরিহাস! এবারও হল ঠিক সেরকমটাই। আর সেই দুর্ভাগ্যের পথে ইয়ানসেন বেঙ্গালুরুকে আরও এক ধাপ ঠেলে দেন ওভারের শেষ বলে অনুজ রাওয়াতকে ফিরিয়ে। পরের ওভারে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল্কে নাটারাজান ফেরালে বেঙ্গালুরু শিবিরে আশঙ্কার দানা বেঁধে উঠতে শুরু করে। সুয়াশ প্রভুদেসাই-শাহবাজ আহমেদ জুটি শুধু ক্ষণিকের স্বস্তিই দিয়েছিল। এক ওভারেই সুচিথ এসে প্রভুদেসাই ও দীনেশ কার্তিককে ফিরিয়ে সেই আশঙ্কা আরও বাড়িয়ে দেন। পরের ওভারে উমরান মালিক এসে শাহবাজকেও ফেরালে প্রায় নিশ্চিত হয়ে যায় আরও একটি লজ্জার মুখে পড়তে যাচ্ছে বেঙ্গালুরু। সেই আশঙ্কা সত্যি করে নাটারাজান-ভুবনেশ্বর মিলে শেষ তিন উইকেট তুলে বেঙ্গালুরুকে গুটিয়ে দেন ৬৮ রানে।
স্বল্প সেই পুঁজি দেখেই রান রেট বাড়িয়ে নেওয়ার লক্ষ্যে শুরু থেকেই হাত খুলে খেলেন অভিষেক শর্মা। ২৮ বলে ৪৭ রানের দারুণ এক ইনিংসের সমাপ্তি জয়ের দ্বারপ্রান্তে এসে হলেও ১২ ওভার হাতে রেখেই জয় নিশ্চিত করেন কেন উইলিয়ামসন।
কলকাতা-গুজরাট, মুম্বাই (টস-গুজরাট/ব্যাটিং)
গুজরাট টাইটান্স- ১৫৬/৯, ২০ ওভার (হার্দিক ৬৭, মিলার ২৭, সাহা ২৫, রাসেল ৪/৫, সাউদি ৩/২৪, উমেশ ১/৩১)
কল্কাতা নাইট রাইডার্স- ১৪৮/৮, ২০ ওভার (রাসেল ৪৮, রিঙ্কু ৩৫, ভেঙ্কটেশ ১৭, শামি ২/২০, রশিদ ২/২২, দয়াল ২/৪২)
ফলাফল: গুজরাট ৮ রানে জয়ী
পুরো ম্যাচে বল না করা আন্দ্রে রাসেলের হাতে শেষ ওভারে যখন শ্রেয়াস আইয়ার বল তুলে দিলেন তখন হয়ত গুজরাট শেষ ওভারে তাদের পুঁজি আরও বড় করার চিন্তাই করছিল। সেসব আশা ভেস্তে দিয়ে প্রথম পেসার হিসেবে আইপিএলে শেষ ওভারে ৪ উইকেট তুলে নিলেন রাসেল। শেষ ওভারের ওই বীরত্বের পর রানতাড়ায় খেই হারিয়ে বসা কলকাতাকে আরও একবার উদ্ধার করার দায়িত্ব বর্তায় সেই রাসেলের কাঁধেই। চেষ্টা তিনি করেছিলেনও বটে। যোগ্য সঙ্গের অভাবে মোহাম্মদ শামি-রশিদ খানদের কাছে শেষমেশ আত্মসমর্পণ করতে হয়েছে তাকে।
রাসেলের শেষ ওভারটার মাহাত্ম্য আরও বেড়ে যায় গুজরাটের ইনিংসের গতিপথ বিবেচনায়। দলে ফেরা গুজরাট অধিনায়ক হার্দিক পান্ডিয়া নিজেকে তিনে তুলে এনেছিলেন। ব্যাট হাতে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়ে ৩৬ বলে আসরে নিজের ৩য় ফিফটি পূর্ণ করেন হার্দিক ৪৯ বলে ৬৭ রানের ইনিংস শেষে টিম সাউদিকে উইকেট দিয়ে যখন ফিরলেন ১৮তম ওভারে, দলের রান তখন ১৩৮। আগের ওভারে ডেভিড মিলারও ফিরে গেলে এই ওভারে সাউদি গুজরাটকে আরও চেপে ধরেন; ফেরান রশিদকেও। অসাধারণ এক স্পেলে ৩ উইকেট নিয়ে সাউদি শেষ করলে সেই ভিতের ওপর দাঁড়িয়ে শেষ ওভারে রাসেল দুই বার হ্যাটট্রিকের সুযোগ তৈরি করেছিলেন। প্রথম দুই বলে অভিনব মনোহর, লকি ফার্গুসনকে ফেরানোর পর শেষ দুই বলে ফেরান রাহুল তেওয়াতিয়া ও ইয়াশ দয়ালকে।
গুজরাটকে ইনিংস বেশি লম্বা করতে না দেওয়ার আত্মবিশ্বাস থেকে কোথায় শুরুটাও ভালো হবে কলকাতার, না তো শামি-ফার্গুসন-দয়ালদের তোপে ৮ ওভারেই ৫০ রান তুলতে কলকাতা খুইয়ে বসে ৪ উইকেট। তখন রশিদ খান আক্রমণে এসে আরও চেপে বসেন। ১৩তম ওভারে দয়াল এসে যখন ৩৭ রানে থাকা রিঙ্কু সিংকে ফেরান তখনই অন্য প্রান্তে থাকা রাসেল হাত খুলে ওই ওভারেই মারেন দুই ছয়। ঠিক পরের ওভারেই ভেঙ্কটেশ আইয়ারকে রশিদ ফেরানোর পরের ওভারে তিনি ফেরান শিভাম মাভিকেও। ম্যাচ বাঁচানোর সকল দায়িত্ব রাসেলের ওপর বর্তালে সেটা ঠিকঠাক পালন করছিলেন তিনি। শেষ ওভারে ১৭ রান প্রয়োজন হলে আলজারি জোসেফকে ছয় মেরেই শুরু করেন রাসেল। পরের বলেও একই কাজ করতে গেলে ফার্গুসনকে ক্যাচ দিয়ে শেষ হয় রাসেলের ২৫ বলে ৪৮ রানের ইনিংস। শেষ ওভারে জোসেফ ৯ রান গুনলে এবারের আসরে সর্বনিম্ন পুঁজি নিয়ে জয়ের রেকর্ড করে গুজরাট।