মোস্তাফিজদের বিপক্ষে রাহুল-মহসিনে লক্ষ্ণৌর জয়ের দিনে অধিনায়কত্বে ফিরেই ধোনির বাজিমাত
হায়দ্রাবাদ-চেন্নাই, পুনে (টস-হায়দ্রাবাদ/বোলিং)
চেন্নাই সুপার কিংস- ২০২/২, ২০ ওভার (গায়কোয়াড ৯৯, কনওয়ে ৮৫*, ধোনি ৮, নাটারাজান ২/৪২)
সানরাইজার্স হায়দ্রাবাদ- ১৮৯/৭, ২০ ওভার (পুরান ৬৪*, উইলিয়ামসন ৪৭, অভিষেক ৩৯, মুকেশ ৪/৪৬, স্যান্টনার ১/৩৬, প্রিটোরিয়াস ১/৪০)
ফলাফল: চেন্নাই ১৩ রানে জয়ী
অধিনায়কত্বে ফিরেই জয় পেলেন মহেন্দ্র সিং ধোনি। আসরের সর্বোচ্চ জুটি গড়ে রুতুরাজ গায়কোয়াড-ডেভন কনওয়ে আগেই গড়ে দিয়েছিলেন জয়ের ভিত। নিকোলাস পুরানের শেষ ওভারের ঝড় সামলে মুকেশ চৌধুরীর নিয়মিত উইকেট পাওয়া, রবীন্দ্র জাদেজার হিসেবী বোলিংয়ে শেষমেশ আর পেরে ওঠেনি হায়দ্রাবাদ।
২০৩ রানের লক্ষ্যে হায়দ্রাবাদের শুরুটা হয়েছিল ঝড়ো। তবে পাওয়ারপ্লে শেষ হওয়ার এক বল আগে ২৪ বলে ৩৯ রানে থাকা অভিষেক শর্মাকে থামান মুকেশ। পরের বলেই রাহুল ত্রিপাঠিকেও মুকেশ ফেরালে ৮৮ রানের মাথায় মিচেল স্যান্টনারের আঘাতে ফিরে যান দুর্দান্ত ফর্মে থাকা এইডেন মার্করাম। পুরানকে নিয়ে এরপর ইনিংস মেরামতের কাজ সারতে থাকা অধিনায়ক কেন উইলিয়ামসনও ফিরে যান গুরুত্বপূর্ণ সময়ে; দলীয় ১২৬ রানে ও নিজে ৩৭ বলে ৪৭ রানে থাকার সময়ে। প্রিটোরিয়াসের ওই আঘাতের পর পুরানকে এক প্রান্তে বেঁধে ফেলে অন্য প্রান্তে শশাঙ্ক সিং ও ওয়াশিংটন সুন্দরকে ফেরান মুকেশ। ওখানেই ম্যাচ হাতের মুঠো থেকে বের হয়ে যায়। শেষ ওভারে অবশ্য ৩৮ রানের সমীকরণ নিয়ে ওই মুকেশকেই ৩ ছয় ও ১ চার মেরে নিজের ফিফটি পূর্ণ করার পাশাপাশি যেন তার ওপর ঝালও মেটান আগের ওভারে দুবার জীবন পাওয়া পুরান।
পুরানের এই শেষের হতাশার সমান না হলেও শেষ হতাশা ছুঁয়ে গিয়েছিল রুতুরাজ গায়কোয়াডকে। কনওয়ের সাথে মৌসুমে দ্বিতীয়বার ওপেন করতে নেমে দারুণ খেলতে থাকেন দুজন। এক প্রান্ত আগলে খেলতে কনওয়ের বিপরীতে ৩৩ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন গায়কোয়াড। ফিফটির পর যেন রুদ্রমূর্তি ধারণ করেন। ১৫তম ওভারে মার্কো ইয়ানসেনকে ২ ছয় ও ১ চার মারার পথে এরই মধ্যে ৩৯ বলে ফিফটি পূর্ণ করেন কনওয়ে। অন্য প্রান্তে যখন সেঞ্চুরির দিকে এগিয়ে যাচ্ছিলেন ঠিক সেই সময়েই এসে গায়কোয়াডকে পুড়তে হল এক রানের আক্ষেপে; নাটারাজানের স্লোয়ারে কাট করতে গিয়ে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ক্যাচ দিয়ে ৫৭ বলে ৯৯ রান করে থামেন তিনি। ভাঙে মৌসুম সর্বোচ্চ ১৮২ রানের জুটি। থামেননি অবশ্য কনওয়ে; ৫৫ বলে ৮৫* রানের ইনিংসে চেন্নাইকে নিয়ে গিয়েছিলেন দুশো’র ওপারে, যা জয়ের জন্য পরে যথেষ্ট প্রমাণিত হয়।
লক্ষ্ণৌ-দিল্লি, ওয়াঙ্খেড়ে (টস-লক্ষ্ণৌ/ব্যাটিং)
লক্ষ্ণৌ সুপার জায়ান্টস- ১৯৫/৩, ২০ ওভার (রাহুল ৭৭, হুদা ৫২, ডি কক ২৩, ঠাক্লুর ৩/৪০, মোস্তাফিজ ০/৩৭)
দিল্লি ক্যাপিটালস- ১৮৯/৭, ২০ ওভার (পান্ট ৪৪, অক্ষর ৪২*, মার্শ ৩৭, মহসিন ৪/১৬, গৌতম ১/২৩, বিষ্ণোই ১/২৮ )
ফলাফল: লক্ষ্ণৌ ৬ রানে জয়ী
ওয়াঙ্খেড়ের নাম উঠলেই যেন সাথে লোকেশ রাহুলের নামও উচ্চারিত হয় সমস্বরে। প্রিয় মাঠে আরও একবার জ্বলে উঠেছিলেন লক্ষ্ণৌ অধিনায়ক, সাথে পেয়েছিলেন দীপক হুডার যোগ্য সঙ্গ। ওয়াঙ্খেড়ের রান প্রসবা পিচে সেই বড় লক্ষ্যের হাতছোঁয়া দূরত্বে দিল্লি ঠিকই চলে এসেছিল, দলীয় ব্যাটিং পারফর্ম্যান্সের জন্য। তবে মহসিন খানের দুর্দান্ত এক স্পেলে কাছে এসেও জয়টা অধরাই থেকে গিয়েছে দিল্লির জন্য।
দিল্লির বোলারদের ওপর অবশ্য শুরু থেকেই চড়াও হয়েছিল রাহুল-কুইন্টন ডি কক জুটি। ৪ ওভারেই ৪১ রান তুলে ফেলার পর ওই ওভারে শার্দুল ঠাকুরের কাছে উইকেট খুইয়ে দি কক থামেন ২৩ রানে। হুডাকে নিয়ে এরপর দিল্লির বোলারদের জীবন বিষিয়ে তোলেন রাহুল। দুজনে মিলে দলীয় শতরান ছুঁয়ে ফেলেন ১১তম ওভারেই। ৩৫ বলে রাহুল নিজের ফিফটি পূর্ণ করার পরের ওভারেই হুডা ফিফটি পূর্ণ করেন ৩২ বলে। ফিফটি পাওয়ার পরের ওভারেই ঠাকুরের শিকার হয়ে ৩৪ বলে ৫২ রানে থাকা হুডা থামলেও রাহুল চালিয়ে যান তার কাজ। ১৯তম ওভারে এসে অবশ্য ওই ঠাকুরই থামান ৫১ বলে ৭৭ রান করা রাহুলকে। মোস্তাফিজের করা শেষ ওভারে স্টইনিস-ক্রুনাল জুটি ১৫ রান তুললে দিল্লিকে ১৯৬ রানের লক্ষ্য বেঁধে দেয় লক্ষ্ণৌ।
চামিরা-মহসিনের আঘাতে তিন ওভারের মধ্যেই লক্ষ্যতাড়ায় দিল্লি হারিয়ে বসে শ ও ওয়ার্নারকে। মিচেল মার্শকে নিয়ে এরপর ১৮ বলেই ৫০ রানের জুটি গড়ে ফেলেন অধিনায়ক ঋশাভ পান্ট। ঝড়ো সেই জুটি থামে কৃষ্ণাপ্পা গৌতমের আঘাতে ২০ বলে ৩৭ রানে থাকা মার্শের বিদায়ে। কিছুক্ষণ পরে উকেতে এসে ললিতের বিদায়ের পর পান্টের সাথে যোগ দিয়ে রভম্যান পাওয়েল ঝড় তুলেছিলেন। দিল্লির জয়ের আশার পালে তাতে জোর হাওয়া লাগলে আবারও হন্তারকের ভুমিকায় অবতীর্ণ হন দুর্দান্ত বল করতে থাকা মহসিন। ৩০ বলে ৪৪ রানে থাকা পান্টের স্টাম্প উপড়ে ফেলার পর নিজের স্পেল শেষ করতে আসেন ১৭তম ওভারে; ২১ বলে ৩৫ রাণে থাকা পাওয়েলকে ফেরানোর পর ওই ওভারে ফেরান ঠাকুরকেই। দিল্লির রান তাড়া সেখানে মুখ থুবড়ে পড়লেও আশার আলো হয়েছিলেন অক্ষর পাটেল। শেষ ওভারে ২১ রান প্রয়োজন হলে প্রথম বল হাতে নেওয়া স্টইনিসকে অক্ষর-কুলদিপ মেরেছিলেন ১টি করে ছয়। অক্ষরের ২৪ বলে ৪২* রান ও কুলদিপের ৮ বলে ১৬* রানের ক্যামিও তাই হয়ত কাছে এসেও দূরে সরে যাওয়ার আক্ষেপেই পুড়িয়েছে দিল্লিকে।