দশ উইকেটের তৃপ্তির পরেও বাংলাদেশের মাথায় ঝুলছে ইনিংস ব্যবধানে হারের খড়গ
১ম টেস্ট, নর্থ সাউন্ড (টস- ওয়েস্ট ইন্ডিজ/ বোলিং)
বাংলাদেশ- ১০৩ ও ৫০/২, ২০ ওভার (তামিম ২২, জয় ১৮*, শান্ত ৮*, জোসেফ ২/১৪)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ২৬৫ (ব্র্যাথওয়েট ৯৪, ব্ল্যাকউড ৬৩, বনার ৩৩, মিরাজ ৪/৫৯, খালেদ ২/৫৯, এবাদত ২/৬৫)
বাংলাদেশ ১১২ রানে পিছিয়ে
২য় দিন, স্টাম্পস
প্রথম দিনে ১২ উইকেটের পর দ্বিতীয় দিনে দেখা মিলল ১০ উইকেটের। ওয়েস্ট ইন্ডিজকে বাংলাদেশ অবশ্য গুটিয়ে ফেলতে পারত আরও আগেই; নিজেদের অসাবধানতা ও ফিল্ডিংয়ে অপরিপক্কতার কারণে তা হয়ে ওঠেনি। দিনের শেষার্ধে দুই উইকেট হারিয়ে বসলেও ওয়েস্ট ইন্ডিজের দশ উইকেট তুলে নেওয়ার মাঝে কিছুটা হলেও তৃপ্তি খুঁজে পাবে বাংলাদেশ।
দিনের শুরু থেকেই বোলিংয়ে বাংলাদেশ ছিল তৎপর। ওয়েস্ট ইন্ডিজ ব্যাটারদের কাছে খালেদ-এবাদত-মোস্তাফিজরা তুলেছিলেন বেশ কিছু প্রশ্নই। প্রশ্নের উত্তর নিজেরা খুঁজে পাননি নিজেদের দোষেই। ১৪ রান থাকার সময় এবাদতের বল পরিষ্কারভাবে বনারের ব্যাটে চুমু খেয়ে নুরুলের গ্লাভসে চলে যায়; অথচ কেউ করেনি কোনও আবেদন। ২৩ রানে থাকায় সময় খালেদের বলে স্লিপে থাকা শান্তর কাছে ক্যাচ তুলে দেন বনার। অথচ শান্ত সেই কাচের যেন হাতও বাড়াননি; মাঠে কী খুঁজছিলেন এদিক সেদিক তাকিয়ে তখন তিনিই ভাল জানেন। বনারকে অবশ্য ৩৩ রানে আর্ম বলে বোল্ড করে সাকিব সেই আক্ষেপ রাখার সুযোগ রাখেননি।
আক্ষেপ বাড়িয়েছেন ব্র্যাথওয়েট। গতকাল পরিকল্পনা করে ফাঁদে ফেলেও লেগ স্লিপে মুমিনুল ও লিটন ক্যাচ ফেলায় বেঁচে গিয়েছিলেন ব্র্যাথওয়েট। আজও মিরাজের বলে শর্ট লেগে পড়ল ক্যাচ। ফিল্ডারদের খামখেয়ালি বোলারদের হতাশায় পুড়িয়েছে বেশ কয়েকবার। সেসবের সুযোগ নিয়ে উইকেটে আসা ব্ল্যাকউড ও সন্ন্যাসীর মত ধৈর্য দেখিয়ে চলা ব্র্যাথওয়েট পূর্ণ করেছিলেন নিজেদের ফিফটি। এমনকি ব্ল্যাকউডের ১৬তম টেস্ট ফিফটিটা ছিল তার ক্যারিয়ারের ধীরতম। অন্যদিকে ব্র্যাথওয়েট দেশের মাটিতে ৮ম সেঞ্চুরি থেকে ৬ রান দূরে থাকার সময় খালেদের পাতা এলবিডব্লিউর ফাঁদে পড়লেন। সেই অনুপ্রেরণায় দারুণ বল করতে থাকা মিরাজ চা-বিরতির আগের নিজের দুই ওভারেই ফেরালেন কাইল মেয়ার্স ও জশুয়া ডা সিলভাকে।
চা-বিরতির পরও দেখা মিলল সেই একই মিরাজের, সাথে দারুণ সঙ্গ দিলেন খালেদও। চা-বিরতির পরে নিজের দ্বিতীয় ওভারে এরপর জোসেফকে ফেরান মিরাজ। পরের ওভারেই এবাদতের শিকার হয়ে রোচ ফিরলেও ম্যাচে বাংলাদেশের সম্ভবত সেরা মুহূর্তটা এল এরপরের উইকেটে, ওই মিরাজের বদৌলতেই। খালেদের বলে এক্সট্রা কাভার দিয়ে উড়িয়ে মারতে গিয়ে উড়ন্ত এক মিরাজের অসামান্য ক্যাচে ৬৩ রানে কাটা পড়লেন ব্ল্যাকউড; বিষাদের এক হাসি নিয়ে বিদায় নেওয়া ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না তার। সিলসকে নিজের ৪র্থ শিকার বানিয়ে ওয়েস্ট ইন্ডিজ ইনিংসের সমাপ্তি টানেন এরপর মিরাজই।
ইনিংস হারের শঙ্কা মাথায় নিয়ে বাংলাদেশের শুরুটা অবশ্য ভালই হয়েছিল। দিনের একদম শেষ দিকে এসে জোসেফ ফিরিয়ে এনেছেন সেই শঙ্কাটাই। তার লেংথ বল তামিমের ব্যাটের কানা খুঁজে নিলে ডা সিলভার দুর্দান্ত এক ক্যাচে ২২ রানে ফেরেন তামিম। শেষ কয়েক ওভার সামলানোর জন্য এরপর মিরাজকে নামানো হলেও পরের ওভারেই জোসেফ ফেরান তাকে। দিনের বাকিটুকু জয় ও শান্ত কোনও বিপদ ছাড়াই শেষ করেছেন। তবে শান্ত মাঠ ছেড়েছেন ইনজুরি শঙ্কা নিয়ে। কাল যদি ব্যাট করতে না নামতে পারেন, তৃতীয় দিনেই টেস্টের সমাপ্তির আশঙ্কাটা হয়ত আরও জেঁকে বসবে বাংলাদেশ শিবিরে।