সাকিব-নুরুলের প্রতিরোধ, খালেদের গর্জন কেবলই বাড়াল আক্ষেপের দীর্ঘশ্বাস
১ম টেস্ট, নর্থ সাউন্ড (টস- ওয়েস্ট ইন্ডিজ/ বোলিং)
বাংলাদেশ- ১০৩ ও ২৪৫ (সোহান ৬৪, সাকিব ৬৩, জয় ৪২, রোচ ৫/৫৩, জোসেফ ৩/৫৫, মেয়ার্স ২/৩০)
ওয়েস্ট ইন্ডিজ- ২৬৫ ও ৪৯/৩, ১৫ ওভার (ক্যাম্পবেল ২৮*, ব্ল্যাকউড ১৭*, খালেদ ৩/১৪)
জয়ের জন্য ওয়েস্ট ইন্ডিজের প্রয়োজন ৩৫ রান
৩য় দিন, স্টাম্পস
ইনিংস ব্যবধানে হারের আশঙ্কা নিয়ে দিন শুরু করেছিল বাংলাদেশ। দিনের শেষেও জয়ের পাল্লাটা ভারী ওয়েস্ট ইন্ডিজের দিকেই। তবে মাঝের সময়টুকু বাংলাদেশ লড়াই করেছে সাধ্যমতই। স্বল্প লক্ষ্য নিয়ে ব্যাট করতে নামা ওয়েস্ট ইন্ডিজের টপ অর্ডারে ভীতি সঞ্চার করেছিলেন খালেদ আহমেদ একাই; ৯ রানেই ৩ উইকেট খুইয়ে বসেছিল ওয়েস্ট ইন্ডিজ। তবে জন ক্যাম্পবেল ও জার্মেইন ব্ল্যাকউড দিনের শেষার্ধে দ্রুত রান তুলে জয়ের নৌকায় দিয়ে রেখেছেন এক পা।
৮৪ রানের লক্ষ্য নিয়ে ক্যারিবিয়ানরা যখন ব্যাটিংয়ে নেমেছিলেন তাদের জয় তখন মনে হচ্ছিল সময়ের ব্যাপার। তবে খালেদ হারের আগেই হার মানতে ছিলেন নারাজ। টেস্টে দ্বিতীয় বারের মত ক্রেইগ ব্র্যাথওয়েটকে ফেরালেন, সেটাও নিজের প্রথম বলেই। ভাগ্যের ছোঁয়া তিনি অবশ্য পেয়েছিলন কেননা লেগ সাইড দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বলে আলতো টোকা দিয়ে নুরুলের হাতে বল তুলে দিয়েছিলেন উইন্ডিজ অধিনায়ক। তবে ওই ওভারেই রেইফারকেও উইকেটের পেছনে তালুবন্দি করে গর্জে ওঠেন খালেদ। এক ওভার পরে এনক্রুমাহ বনারের এক রিভিউ নিয়ে হতাশ হতে হয়। তবে আক্ষেপের কোনও সুযোগ না রেখে ওই ওভারেই বনারের স্টাম্প উপড়ে ফেলেন খালেদ। এরপরের অধ্যায়টুকু ক্যারিবিয়ানদের জয়ের নোঙর পোতার।
জয়ের সেই পথটা অবশ্য ক্যারিবিয়ানদের জন্য মসৃণ করতে দেননি সাকিব আল হাসান ও নুরুল হাসান সোহান। দিনের শুরুতেই শান্ত ফেরার পর দারুণ প্রতিরোধ গড়েছিলেন জয়। তবে অন্য প্রান্তে মেয়ার্স-রোচের তোপে ফিরে যান মুমিনুল-লিটন। ইনিংস পরাজয়ের শঙ্কা তখন প্রবল। রোচের শিকার হয়ে ১৫৩ বলে জয়ের ৪২ রানের ইনিংসের সমাপ্তি ঘটলে ১০৯ রানে ৬ উইকেট খুইয়ে বসে বাংলাদেশ।
তারপরেই ম্যাচের মোড় হুট করেই বদলে দেন সাকিব-নুরুল। বিপদ সামলে লাঞ্চে যান দুজন। এরপরের সেশনে এসে একেবারে আসন গেঁড়ে বসেন উইকেটে। ৮ রানের মাথায় অনেক বাইরের বলে ব্যাট চালিয়ে বেঁচে যান নুরুল। তবে এরপরেই দুজনে দেখিয়েছেন মনোযোগ ও শট বাছাইয়ের দারুণ প্রয়োগ। দুজনের জন্য এই টেস্টে প্রথমবারের মত দেখা মেলে উইকেট শুন্য এক সেশনের। ৯৫ রান তুলে ওই সেশনে দুজন অপরাজিত থেকেই যান চা-বিরতিতে।
নতুন বল হাতে নিতে তখন বাকি ৪-৫ ওভার। এই চিন্তা মাথায় নিয়ে নতুন সেশনে যখন মোকাবেলা করতে নামলেন দুজন তখন নতুন বলের সেই আশঙ্কা সত্যি হয়ে ধরা দিল। তাতে বোলিংয়ের যতটা না ভুমিকা তার চেয়ে দুজনের খামখেয়ালিপনাটাই বড় হয়ে থাকল। বাইরের এক বল তাড়া করে রোচকে উইকেট দিয়ে আসলেন সাকিব; ভাংল ১২৩ রানের জুটি। ৬ রানের জন্য মধ্যে প্রায় ১০ম স্টাম্পের বল তাড়া করে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে নুরুলও ফিরলেন। বাকি টেইল ছাঁটাই করেন জোসেফ ও রোচ মিলে। রোচ পেয়ে যান ১০ম বারের মত ৫-উইকেট, ২৪৯ উইকেট পেয়ে মাইকেল হোল্ডিংয়ের কাতারেও আসেন। আর ১৩ রানের মধ্যে ৪ উইকেট হারিয়ে বাংলাদেশ উইন্ডিকে দিল জয়ের সুবাস। তবে সেই জয়ের পথ দুর্গম ঠিকই করেছিলেন বোলাররা, যেমনটা তারা করেছিলেন প্রথম ইনিংসেও। আক্ষেপটা তাই থাকবে ফিল্ডিংয়ে, নষ্ট করা রিভিউগুলোতে।