বিপিএল ২০২৩: রান, উইকেটের দৌড়ে এগিয়ে কারা
অনেক আলোচনা-সমালোচনার মধ্যেই মহাসমারোহে চলছে বিপিএল। মাঠে ও মাঠের বাইরে বিতর্ক যেন এই টুর্নামেন্টের এক অবিচ্ছেদ্য অংশ। তবে আশার বিষয় এই যে মাঠের খেলাতেও এবার উত্তেজনা রয়েছে বেশ। চট্টগ্রামের রান প্রসবা উইকেট গুলো যেন টুর্নামেন্টেও প্রাণ ফিরিয়েছে। আর সেই কারণেই বোধহয় জমে উঠেছে ব্যাটে-বলে এগিয়ে যাওয়ার লড়াই। এক নজরে দেখে আসা যাক রানের ও উইকেটের দৌড়ে কারা রয়েছেন এগিয়ে।
সর্বোচ্চ রান সংগ্রাহক
নাসির হোসেন (ঢাকা ডমিনেটর্স)
রান: ২৮৬
স্ট্রাইক রেট: ১৩০
ব্যাটিং গড়: ৭১.৫
সেরা ইনিংস: ৬৬*
ঢাকা ডমিনেটর্স অধিনায়ক যেন নিজের পুরনো রুপে ফেরত এসেছেন এই আসরে। ব্যাটে-বলে নিজের সর্বোচ্চটা দিয়েও অবশ্য ঢাকাকে তলানি থেকে ওঠাতেই পারছেন না। টানা ছয় ম্যাচ হেরে ঢাকার আশাও যেন কার্যত শেষ। তবে নাসির যেন এবার গোবরে পদ্মফুল হয়েই থেকেছেন আসর জুড়ে।
সাকিব আল হাসান (ফরচুন বরিশাল)
রান: ২৭৫
স্ট্রাইক রেট: ১৯৬.৪২
ব্যাটিং গড়: ৯১.৬৬
সেরা ইনিংস: ৮৯*
ছিলেন গত আসরের টুর্নামেন্ট সেরা। এবারও শুরুটা সেখান থেকেই করেছেন। ব্যাট হাতে বাইশ গজে রীতিমত তাণ্ডব চালাচ্ছেন। বড় ইনিংস খেলতে যদি কোনও দিন নাও পারেন, সেদিনও দ্রুত রান তুলে দলের স্ট্রাইক রেট ঠিক রাখার কাজটা সারছেন দক্ষতার সাথে। এবারও যদি সাকিব আসরের সেরা খেলোয়াড় হয়ে বসেন তাহলে অবাক হওয়ার অবকাশ নেই।
ইফতিখার আহমেদ (ফরচুন বরিশাল)
রান: ২৫৬
স্ট্রাইক রেট: ১৮১.৫৬
ব্যাটিং গড়: ১২৮.০০
সেরা ইনিংস: ১০০*
বিপিএলে সত্যিকার অর্থেই চলছে ‘ইফতি ম্যানিয়া’। বিপিএলের ইতিহাসের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ সংগ্রহ এনে দিতে সাকিবের সাথে রেকর্ড জুটি বেঁধে তিনি এবার পেয়েছিলেন নিজের টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি, পরের ম্যাচেও পেয়েছিলেন অনবদ্য ফিফটি। ‘ইফতি চাচা’কে এবার তাই যেন রোখাই দায়!
শোয়েব মালিক (রংপুর রাইডার্স)
রান: ২২৫
স্ট্রাইক রেট: ১৩৫.৫৪
ব্যাটিং গড়: ৫৬.২৫
সেরা ইনিংস: ৭৫*
বয়স যে তার ৪০ সেটা বোঝার উপায় নেই। ফিটনেস যেমন ধরে রেখেছেন, তেমনই ব্যাট হাতেও কাটাচ্ছেন রান প্রসবা এক আসর। এই শেষ ম্যাচেই ৭৫* রানের দারুণ এক ইনিংস খেলে চট্টগ্রামকে ব্যাকফুটে ঠেলে দিলেন। আসরে আরও বেশ কয়েকবার মালিকের ব্যাট হাসবে সেই আশা তাই রাখতেই পারে রংপুর।
উসমান খান (চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স)
রান: ২১২
স্ট্রাইক রেট: ১৫০.৩৫
ব্যাটিং গড়: ৩৫.৩৩
সেরা ইনিংস: ১০৩*
আসরের প্রথম দুই সেঞ্চুরি এসেছিল একই দিনে। সেই দুই সেঞ্চুরির দ্বিতীয়টি এসেছিল উসমানের ব্যাট থেকে, সেটাও দ্বিতীয় ইনিংসের ম্যাচ জয়ী এক সেঞ্চুরি। সেই সেঞ্চুরির পর অবশ্য নিজেকে সেই অর্থে মেলে ধরতে পারেননি তিনি। তবে উইকেটে যতক্ষণ থাকেন হাত খুলে খেলার চেষ্টাই চালিয়ে যান উসমান, স্ট্রাইক রেটটাও তার হয়েই কথা বলছে।
সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি
ওয়াহাব রিয়াজ (খুলনা টাইগার্স)
উইকেট: ১১
ইকোনমি রেট: ৬.৫১
স্ট্রাইক রেট: ১০.৬
সেরা বোলিং ফিগার: ৪-১৪
বুড়ো হাড়ের ভেল্কি দেখিয়ে এখন পর্যন্ত আসরের সর্বোচ্চ উইকেট শিকারি পাকিস্তানের বাঁহাতি পেসার ওয়াহাব রিয়াজ। এইতো শেষ ম্যাচেই চট্টগ্রামের বিপক্ষে শেষ ওভারে শুভাগত, মাহেদী ও নিহাদুজ্জামানকে ফিরিয়ে করলেন আসরের প্রথম হ্যাটট্রিক। খুলনাকে টুর্নামেন্টে ফিরিয়ে আন্তেও ওয়াহাবের তাই থাকতে হবে বড় ভূমিকা।
নাসির হোসেন (ঢাকা ডমিনেটর্স)
উইকেট: ৯
ইকোনমি রেট: ৭.১৭
স্ট্রাইক রেট: ১১.৩
সেরা বোলিং ফিগার: ২-১৬
শুধু ব্যাট হাতেই কথা বলছেন না, দলকে সাহায্য করতে নিয়মিত গুরুত্বপূর্ণ উইকেট তুলে নিচ্ছেন নাসির। ঢাকার ম্যাড়ম্যাড়ে এক মৌসুমের জন্য নাসিরের ব্যক্তিগত পারফর্ম্যান্স কিছুটা ম্লান বলা চলে। তবে ব্যাট হাতে দলকে বহুবার উদ্ধার করতে হওয়া নাসির বল হাতেও প্রায় নিয়মিত ভাংছেন উইকেটে থিতু হওয়া জুটি।
মাশরাফি বিন মূর্তজা (সিলেট স্ট্রাইকার্স)
উইকেট: ৯
ইকোনমি রেট: ৬.৭৫
স্ট্রাইক রেট: ১৩.৩
সেরা বোলিং ফিগার: ৩-৪৮
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের আশেপাশেও নেই প্রায় চার বছর হতে চলল। তাও যেন নিজের ধারটা হারাননি মাশরাফি। প্রখর বুদ্ধিমত্তা কাজে লাগিয়ে বরাবরের মতই পেসের অভাবটা পুষিয়ে দিচ্ছেন। ব্যাটারদেরকে জায়গা বানানোর সুযোগ না দিয়ে সেই সাথে উইকেট পাচ্ছেন নিয়মিত।
তানভির ইসলাম (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
উইকেট: ৮
ইকোনমি রেট: ৫.২৫
স্ট্রাইক রেট: ১৫.০
সেরা বোলিং ফিগার: ৪-৩৩
তানভির ইসলামক এবার যেন মোকাবেলা করার আগে যেকোনো ব্যাটারকে দুইবার ভাবতে হচ্ছে। ব্যাটারদের একেবারেই কোণঠাসা করে হাত খোলার কোনও সুযোগই দেন না এই বাঁহাতি অফ স্পিনার। গেল ম্যাচেও ঢাকার বিপক্ষে পাননি কোনও উইকেট, কিন্তু চার ওভারের কোটা পূর্ণ করে রান দিয়েছেন মোটে ১৩। পুরো আসরেই এমনটাই কিপটে তিনি। নিয়মিত যদি উইকেট নাও নিতে পারেন, রান আটকিয়ে অন্যদের জন্য সেই পথটা বাতলে দিচ্ছেন তানভির।
খুশদিল শাহ (কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ান্স)
উইকেট: ৮
ইকোনমি রেট: ৬.৬০
স্ট্রাইক রেট: ১৭.২
সেরা বোলিং ফিগার: ২-২০
তালিকায় হয়ত নামটা কিছুটা চমকপ্রদ বলা চলে। তবে সতীর্থ তানভিরের সাথে জুটি বেঁধে খুশদিল তার বাঁহাতি স্পিনে যেন হয়ে উঠেছেন ‘গোল্ডেন আর্ম’। শুধু তাই নয়, তানভিরকেও মাঝেমধ্যে উইকেট তুলে নিতে তিনি সাহায্য করে চলেছেন তার কিপটে স্পেল দিয়েও। প্রতি ম্যাচে চার ওভার বল করার সুযোগ না পেলেও কুমিল্লার প্রত্যাবর্তনে বল হাতে এবার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছেন খুশদিল।