• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    বাংলাদেশে ফেরার আগে কেমন ছিল হাথুরুসিংহের কোচিং ক্যারিয়ার

    বাংলাদেশে ফেরার আগে কেমন ছিল হাথুরুসিংহের কোচিং ক্যারিয়ার    

    রাসেল ডমিঙ্গোর বিদায়ের পর বাংলাদেশের পুরুষ দলের প্রধান কোচের দায়িত্বে আবারও চন্ডিকা হাথুরুসিংহে। যেই হাথুরুসিংহে অনেকটা অতর্কিতেই অব্যাহতি দিয়েছিলেন বাংলাদেশের প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে সেই হাথুরুসিংহেকেই ফিরিয়ে এনে বিসিবি দেশের ক্রিকেটের প্রতি কী বার্তা দিলেন সেটা নিয়ে অনেকের মনেই জেগেছে প্রশ্ন। সেই প্রশ্নের উত্তরটা বিসিবি সভাপতি নাজমুল হোসেন পাপন যেভাবে দিলেন তা দেশের সমর্থকদের মধ্যে খুব একটা আশা জাগাবে কি না সেটা নিয়েও সন্দেহ থাকতেই পারে।

    তিনি যেটা বললেন তাতে দর্শকদের বা ক্রিকেট নিয়ে চিন্তিতদের মাঝে এরকমই একটা বার্তা পৌঁছায় যে, ক্রিকেটীয় চিন্তার ঊর্ধ্বে গিয়ে এই শ্রীলঙ্কানের পক্ষে যেটা কাজে দিয়েছে সেটা হল কোনও টি-টোয়েন্টি ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে তার সম্পৃক্ত না থাকা। পাপন এমনকি ছুটির সময়ে থাকা সফর বা সিরিজগুলো নিয়ে খোলাখুলি তার উদ্বেগের কথা বলেছেন, “আমরা যেরকম উচ্চ মানসম্পন্ন কোচ চাই তাদের কেউই পুরো বছর থাকতে চান না। কেউ বলেন ১০০ দিন, কেউ বলেন ১৫০; আর কেউই ২০০ দিনের ওপর যাবেনই না, এমনকি মাঝারি মানের কোচেরাও। তার ওপর বেশিরভাগেরই আবার বিভিন্ন ফ্র্যাঞ্চাইজির সাথে ছুটি থাকায় ওদের টুর্নামেন্টগুলোর সময়েও ছুটি দিতে হয়। তো আমাদের যদি ওই সময়ে কোনও সিরিজ থাকে তখন আমরা কী করব!”

    হ্যাঁ, বাংলাদেশ দলকে বেশি সময় দিতে পারবেন এটাই প্রধান কারণ হলেও হাথুরুসিংহে যে একজন ক্ষুরধার ক্রিকেট ট্যাক্টিশিয়ান সেটা নিয়েও সন্দেহের অবকাশ নেই। তার অধীনেই বাংলাদেশ প্রথম টেস্ট জয় পেয়েছিল ইংল্যান্ড, শ্রীলঙ্কা ও অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে। তার পাশাপাশি ভারত, দক্ষিণ আফ্রিকা ও পাকিস্তানের বিপক্ষে প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় এসেছিল তার অধীনে। ২০১৫ বিশ্বকাপের স্বপ্ন যাত্রা বলুন আর ২০১৫-২০১৬ সময়কালে বাংলাদেশের ওয়ানডে আধিপত্য এসেছিল তার আর মাশরাফির নেতৃত্বেই। পরবর্তী মাশরাফির সাথে তার কোন্দলের গুঞ্জন বা ড্রেসিং রুমে তার সাথে খেলোয়াড়দের সম্পর্ক নিয়ে কানাঘুষা চললেও তার ক্ষুরধার মস্তিষ্ক নিয়ে প্রশ্ন তোলার সুযোগ কমই।

    তবে বাংলাদেশের সাথে তার সম্পর্ক ছিন্ন হয়েছিল কিছুটা অপেশাদারভাবেই; সেই শঙ্কাটা তাই থেকেই যায়। সেই শঙ্কার চেয়েও অবশ্য বাংলাদেশ ছাড়ার পর কোচিং জগতে তার বিচরণ কেমন ছিল সেটা নিয়েই চিন্তা হওয়া উচিৎ। শ্রীলঙ্কাকে আগে থেকে কথা দিয়ে রেখে তিনি বাংলাদেশ ছেড়েছিলেন। এরপর তিনি নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনি থান্ডারের সহকারী কোচ ও ব্যাটিং কোচের দায়িত্ব পালন করেছেন এক সাথেই। বাংলাদেশের কোচ হওয়ার আগেও নিউ সাউথ ওয়েলসের সহকারী কোচের দায়িত্বে ছিলেন তিনি। হাথুরু কোচিং ক্যারিয়ারটা এখন পর্যন্ত যেন একটা চক্রের মদ্ধিএ আবদ্ধ। তবুও পেছন ফিরে দেখা যাক বাংলাদেশ ছাড়ার পর কেমন গিয়েছে তার কোচিং জীবন।

    প্রধান কোচ, শ্রীলঙ্কা (২০১৭-২০১৯)

    টেস্ট: ৬ জয়, ১১ পরাজয়, ৪ ড্র (২১ ম্যাচ)
    ওয়ানডে: ১০ জয়, ২৯ পরাজয়, ৫ ড্র (৪৪ ম্যাচ)
    টি-টোয়েন্টি: ৪ জয়, ৮ পরাজয় (১২ ম্যাচ)

    শ্রীলঙ্কার সময়টা খুব একটা ভাল যায় না এই শ্রীলঙ্কানের। ২০১৯ বিশ্বকাপে রীতিমত নাকানিচুবানি খাওয়ার পরেই তাকে সময় বেঁধে দেওয়া হয়েছিল দলের দায়িত্ব ছাড়ার। বাংলাদেশের বিপক্ষে সিরিজে হারার পর এমনকি বোর্ড থেকে তাকে দল ছাড়ার নোটিশ দেওয়া হলেও দল ছাড়তে তিনি নারাজ ছিলেন। হাথুরু থাকা অবস্থায় তাই কোচ দেখা শুরু করে দিয়েছিল শ্রীলঙ্কা বোর্ড। এরপরের নিউজিল্যান্ড সিরিজের আগে না ছাড়লে তার বিরুদ্ধে মামলার হুমকিও দিয়েছিল বোর্ড। নিজ দেশের  বোর্ডের সাথে রেষারেষির মাধ্যমেই তাই শেষ হয়েছিল তার শ্রীলঙ্কা যাত্রা।

    সহকারী কোচ, নিউ সাউথ ওয়েলস ও সিডনি থান্ডার (২০২০-২০২৩)

    ২০১৩-১৪ মৌসুম ক্যারিয়ারের সায়াহ্নে থাকা যেই ফিল জ্যাকসকে হাতে কলমে কোচিং শিখিয়েছিলেন হাথুরু, সেই জ্যাকসের সহকারী হিসেবেই ২০২০ সালে একই দায়িত্বে ফিরেছিলেন তিনি। বাংলাদেশে যোগ দেওয়ার আগে তাদের কোচিং দল নিউ সাউথ ওয়েলসকে জিতিয়েছিল শেফিল্ড শিল্ড। দ্বিতীয় দফায় হাথুরু যখন একই দায়িত্বে ফিরলেন দলের তখন ভগ্নদশা। ৬ ম্যাচে মাত্র ১ জয় পাওয়ায় জ্যাকসকে বহিষ্কার করা হলেও হাথুরু ধরে রেখছিলেন তার জায়গা। সেখান থেকে ওই মৌসুমে এমনকি রানার-আপ হয়েছিল নিউ সাউথ ওয়েলস, পরের মৌসুমে হয়েছিল চতুর্থ।

    তবে শুরুতে যেমনটা বলা হয়েছিল, হাথুরুর শেষটা ক্রিকেটীয় দৃষ্টিকোণ থেকে খুব একটা সুবিধার ছিল না। বাংলাদেশে আসার আগে এই মৌসুমটায় নিউ সাউথ ওয়েলস একটিও জয় পায়নি শেফিল্ড শিল্ডে, সেটাও ছয় ম্যাচ খেলে। এমনকি মার্শ কাপেও ছয় ম্যাচে তাড়া জয় পেয়েছে ১টি।

    দিনশেষে, হাথুরুকে নিয়ে তাই প্রশ্ন থাকতেই পারে। বিভিন্ন সময়ে তাকে কন সহকারী কোচ হিসেবেই থেকে যেতে হয়েছে সেখান থেকেও তার ম্যান ম্যানেজমেন্ট নিয়ে ধারণা পাওয়া যায়। বাংলাদেশ ও শ্রীলঙ্কাতেও সেটার ব্যত্যয় ঘটেনি। দ্বিতীয় দফায় তাই তিনি কেমন করবেন বাংলাদেশে, সেটা সময়ই বলে দিবে।