• " />

     

    সিডন্সের নীড়ে ফেরা

    সিডন্সের নীড়ে ফেরা    

    এ দল, জাতীয় দলের পরেই, তাইতো? কিন্ত বাংলাদেশ এ দল ও ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের খেলা, তা নিয়ে খুব বেশি আগ্রহ দেখা গেল না। রাতে যখন টি-টোয়েন্টির রমরমা বিনোদন মিলবে, সেখানে রোদে পুড়ে লাল বলের খেলা দেখবেই-বা কজন! হাতেগুণে দর্শক তাই বিশেরও বেশি হবেন না সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামে। 

    নিরাপত্তারক্ষীদেরও মিলেছে বিশ্রাম আর বিশ্রাম। ঢুকার পথে একজন আমার সঙ্গীর হাতে থাকা পত্রিকাটা নিয়ে রাখলেন। কারো সময় কাটছে বসে বসে নিদ্রায়। কেউ কেউ ঘুরাঘুরি ও আর মেতে উঠেছেন আড্ডায়। স্টেডিয়ামপাড়ায় যা ব্যস্ততা, সেসব মাঠের খেলার সাথে যাদের যোগসূত্র আছে তাদেরই কেবল! 

    ততক্ষণে প্রথম সেশনের খেলা শেষ। 'বাপকা বেটা' ত্যাজনারায়ণ! শিবনারায়ণ চন্দরপল ক্রিজে যতটুকু সময় পার করেছেন, প্রতিপক্ষের ফিল্ডিংয়ে অস্বস্তি আর বিরক্তিই বাড়িয়েছেন শুধু মন্থর ব্যাটিংয়ে। টিকে থাকার উস্তাদ শিবনারায়ণের ছেলে ত্যাজনারায়ণও কম কীসে! আন্তর্জাতিক ক্রিকেটেই সেসবের প্রমাণ রেখেছেন, টেস্টে ইতোমধ্যে পেয়ে গেছেন ডাবল সেঞ্চুরিও। এ দলের হয়ে বাংলাদেশ সফরে এসে প্রথম চারদিনের টেস্টে প্রথম সেশনটা পার করে দিয়েছেন অনায়াসেই। ওপেনিং সঙ্গী কার্ক ম্যাকেঞ্জিকে নিয়ে প্রথম সেশন কাটিয়ে দিয়েছেন বিনা উইকেটে। 

    লাঞ্চের সময় শুরু হতে না হতেই দুদিক দিয়ে দুদলের কয়েকজন বের হয়ে আসতে শুরু করলেন একইদিকে। গন্তব্য সিলেট আন্তর্জাতিক স্টেডিয়ামের মিডিয়া সেন্টারের পাশের প্র‍্যাকটিস উইকেটগুলো। দুটি নেটে ব্যাটিং করতে থাকলেন উইন্ডিজ দুই ব্যাটার। আর অপর নেটে নাসুম আহমেদ। এই সিরিজের বাংলাদেশ এ দলে নাসুম নেই। সিলেটের ছেলে নাসুমের ঘরের মাঠে খেলা, জেমি সিডন্সের সঙ্গে ব্যাটিং নিয়ে কাজ করার সুযোগটা লুফে নিতেই হয়তো চেয়েছেন। 

    নাসুম ব্যাট করছেন, তার ঠিক পেছনে দাঁড়িয়ে জেমি সিডন্স। বল ছুড়ছেন রাজিন সালেহ, সঙ্গে দুই নেট বোলার, আরও সঙ্গী এ দলের স্কোয়াডের সদস্য তানভীর ইসলাম। প্রথম চারদিনের টেস্টের একাদশে জায়গা না পাওয়া এই বাঁহাতি স্পিনারের সাথে আব্দুর রাজ্জাক ও আব্দুল ওয়াহিদ গণি। যতক্ষণ নাসুম ব্যাট করেছেন, রাজ্জাকের সাথে বেশ গভীরভাবে কাজ করতে দেখা যায় তানভীরকে। দুজনই ব্যস্ত থাকেন কথাবার্তায়। নির্বাচকের ভূমিকায় সিলেটে আসা আব্দুর রাজ্জাক যেন কোচই বনে গিয়েছিলেন তখন!

    তানভীরের স্পিনে নাসুমকে বিশেষ করে সুইপ শটটা খেলতে বলছিলেন সিডন্স। ঠায় দাঁড়িয়ে পর্যবেক্ষণ করছিলেন সিডন্স, কোথায় সমস্যা কিংবা কোথায় ভুল শুধরাতে হবে সেসব ধরিয়ে দিচ্ছিলেন। নাসুমকেও মাঝেমধ্যে ফিরতি প্রশ্নে কিছু জেনে নিতে দেখা যায়। থ্রোডাউন, পেস-স্পিনের বিপক্ষে খেলছিলেন নাসুম, আর সজাগ সিডন্স পেছন থেকে নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছিলেন। মনে হচ্ছিল, সিডন্স যেন নীড়ে ফিরেছেন!

    জাতীয় দলের ব্যাটিং কোচের দায়িত্বে আবার ফিরেছিলেন বাংলাদেশে। ব্যাটিংয়ে দুর্দশায় থাকা বাংলাদেশ উন্নতি করবে পুরনো গুরুর হাত ধরে, সে আশাই ছিল বাংলাদেশি সমর্থকদের। কিন্ত সেভাবে উন্নতি তার সময়েও ফুটে উঠেনি আসলে। ব্যাটিং কোচের পদ থেকে কিছুদিন আগে যখন তার নাম মুছে যাওয়ার খবর এলো, জনমনের ধারণায় তাই তিনি পদত্যাগের পাত্রই ছিলেন। 

    জেমি সিডন্স দ্বিতীয় মেয়াদে বাংলাদেশে আসার পর ব্যাটিংয়ের নানা দিক নিয়েই কাজ করার কথা শুনিয়েছিলেন। পাওয়ার হিটিং নিয়ে বিশেষ করে কাজের কথা বলেছিলেন গণমাধ্যমে। কিন্ত জাতীয় দলের আঙ্গিনায় বসবাস করে বিস্তরভাবে কাজের ফুরসত মিলে না। একের পর এক সিরিজ, সেসবের মাঝে ব্যাটিং টেকনিকে বড়সড় পরিবর্তনের সুযোগ থাকে না, এমনটাই শুনতে পাওয়া যায় কোচেদের মুখে। আদতে রাতারাতি পরিবর্তন মোটেও সহজ কিছুও না! লম্বা সময় নিয়ে কাজের মোক্ষম সুযোগই বলতে হয় জাতীয় দলের বাইরেই। সিডন্সের চাওয়াও ছিল সেটি, তাই জাতীয় দলের কোচের পদে অব্যাহতি দেওয়া। নিচের স্তরে নেমে এসেছেন, উপরের স্তরে নিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে, বড় কিছু করার উদ্দেশ্যে!  

    ওয়েস্ট ইন্ডিজ এ দলের বিপক্ষে সিরিজ দিয়ে শুরু তার সে যাত্রা। সে যাত্রায় তিনি আগের তুলনায় থাকবেন কিছুটা ক্যামেরার আড়ালেই। ঘরোয়া ক্রিকেট যে মিডিয়ারও অনাদরেই থেকে যায়! আর থাকবেই-বা না কেন? এই যে 'এ' দলের সিরিজ, অথচ স্টেডিয়ামের প্রেসবক্সে নেই লাঞ্চের ব্যবস্থা! মিডিয়ার খাওয়া-দাওয়া নাকি বাজেটের বাইরের বিষয়!

    দর্শক, মিডিয়ার অনাগ্রহের এসব ক্রিকেটই এখন সিডন্সের কাজের ক্ষেত্র। সেখানে তিনি কাজ করে যাবেন ঘরোয়া ক্রিকেটারদের সাথে। নিচের স্তরে নেমে আসা সিডন্স তাদের প্রস্তত করবেন উপরের স্তর, জাতীয় দলের জন্য। আর কোন একজনের আমূল পরিবর্তন, উন্নতি হয়তো সিডন্সকে ক্যামেরার লেন্সে দাঁড় করাবে। সিডন্সও হয়তো সেভাবেই মিডিয়ার আগ্রহের বস্ত হতে চান। নীড়ে ফেরা সিডন্সের সাফল্যও তাতেই!