অপ্রতিরোধ্য এগারো

প্যাভিলিয়ন-কিউট আয়োজিত স্পোর্টস ফিচার লেখা প্রতিযোগিতা 'খেলার লেখা, লেখার খেলা -১' এর দশজন বিজয়ীর লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে! আজ থাকছে অষ্টম স্থান অধিকারী আহমাদ বিন হুসাইন-এর লেখা 'অপ্রতিরোধ্য এগারো'।
পেছনে তাকালে প্রথম ক্রিকেটীয় স্মৃতি যেটা মনে পড়ে সেটা ’৯৬ এর বিশ্বকাপ ফাইনাল । শ্রীলঙ্কার অস্ট্রেলিয়া বধ। ডি সিলভার গ্রিল বিহীন বিখ্যাত হেলমেট পড়া মুখ কিংবা বিশালদেহী রানাতুঙ্গার চেহারা। যেহেতু সবচেয়ে পুরানো স্মৃতিটাই ’৯৬ এর তাই ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একাদশ বাছাইয়ের সময় বাংলাদেশ ক্রিকেটের পুরো ইতিহাস থেকে খেলোয়াড় নিতে পারিনি। নেট ঘেটে পুরানো সেই খেলোয়াড়দের পরিসংখ্যন ও পারফরম্যান্স হয়ত বের করা যেত সেটা করিনি কারন মনে হয়েছে তাতে লেখাটা আবেদন হারাবে। সীমাবদ্ধতাটা আগেই বলে নিলাম! এবার শুরু করা যাক...
ওপেনারদের হিসাবে আমার দলে থাকবে তামিম ইকবাল এবং মেহরাব হোসেন অপি। অপি সিনিয়র পার্টনার। দেখেশুনে খেলবে। ডিফেন্স এবং হিটিং দুটোই চলবে সমান তালে। ’৯৯ সালের দিকে মেরিল কাপে করা তার সেঞ্চুরিটি এখনও চোখে ভাসে। অপির সাথে থাকছে তামিম। এইখানে ডিফেন্স বলে কিছু নেই। প্রতিপক্ষকে গুড়িয়ে দেয়া আক্রমণাত্মক ব্যাটিং হবে। শুরুতে পাওয়ার প্লের সময়টাতে রান বাড়িয়ে নেয়ার জন্য এই দুইজনের জুটি হবে অতুলনীয়। সাথে স্থিতধী অপির কারনে শুরুতে একপাশের উইকেটও থাকবে সুরক্ষিত। আর বাড়তি পাওনা হিসাবে থাকবে লেফট হ্যান্ড- রাইট হ্যান্ড কম্বিনেশন।
তিন নাম্বারে ব্যাট করবে আশরাফুল। ওর কোয়ালিটি নিয়ে সন্দেহ নেই কারোরই। পাওয়ার প্লে কিংবা যে কোন সময়েই গ্যাপ খুঁজে শট খেলার ক্ষমতা আছে তার। সাথে আছে বড় ইনিংস খেলার যোগ্যতা। অস্ট্রেলিয়ার মত দলের সাথে ভালো মানের বোলিং এর বিরুদ্ধে খেলে সেঞ্চুরি, ইংল্যান্ডের সাথে ঝড়ের গতিতে তোলা ৯৪ কিংবা টেস্ট এ ইন্ডিয়ার সাথে করা সেই ১৫৮ তার অসাধারণ স্কিলেরই কিছু প্রকাশ। আশরাফুল এমন প্লেয়ার যে ক্রিজে থাকলে রানের চাকা কখনো থেমে থাকেনা। নিয়মিত স্ট্রোক- সিঙ্গেল মাঝের ওভার গুলোতেও রান এনে দিবে অনেক।
৪ এ থাকবে সাকিব আল হাসান। দুর্দান্ত এই ক্রিকেটারের অলরাউন্ডিং পারফরম্যান্স এর জন্য তাকে দলে রাখতেই হত। সিঙ্গেলস বা শট মারা দুটোতেই সমান সিদ্ধহস্ত। রানের চাকাও স্লো হবে না। আর বড় ইনিংস খেলার আগ্রহ এবং সেটা করার টেম্পারমেন্ট রাখায় সাকিবই হবে মিডল অর্ডারের প্রানভোমরা।
৫ নাম্বারে থাকছে পুরানো যোদ্ধা মিনহাজুল আবেদীন নান্নু। মিডল অর্ডারে ধরে খেলার জন্য কিংবা ঝটপট কিছু উইকেট পড়ে গেলে পরিস্থিতি স্ট্যাবল করার জন্য নান্নু পারফেক্ট। ’৯৯ তে নির্বাচকদের কিছু ভুল সিদ্ধান্তের কারনে নান্নুকে ছাড়াই বিশ্বকাপের দল পাঠানো হয়। পড়ে অবশ্য তাকে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। এবং সে ব্যাট দিয়েই যাবতীয় সন্দেহ ও সমালোচনার জবাব দেয়। মিডল অর্ডারে ধারাবাহিকভাবে রান করেছে সাথে ছিল একাধিক অর্ধশতক। এরকম একজন অভিজ্ঞ, হার না মানা দৃঢ়চেতা ঠাণ্ডা মাথার ব্যাটসম্যানকে মাঝখানে রাখা মানে দলকে একটা ভিত্তি দেয়া।
৬ এ থাকছেন নাসির। বিগ শট হবে সাথে হবে সিঙ্গেলস আর ডাবলস। খুব গতিশীল একজন প্লেয়ার। তার মিডিয়াম পেস বোলিংয়েও যোগ করবে বৈচিত্র্য।
এরপর ৭ এ উইকেটকিপার ব্যাটসম্যান হিসাবে থাকবেন পাইলট। পাইলট আর মুশফিকের মধ্যে বেশ ভালো প্রতিযোগিতা ছিল। কিন্তু মুশফিকের কিপিং স্কিলে যথেষ্টই ঘাটতি চোখে পড়েছে। আরও সময় লাগবে ওর। ব্যাটিংটা অবশ্য মুশফিকের ভালো এবং সে ব্যাটও করে টপ অর্ডারে। কিন্তু আমার দলের যেই কম্বিনেশন তাতে উইকেটকিপারের ব্যাটিং স্কিলের চেয়ে কিপিং স্কিলটাকেই প্রাধান্য দিয়েছি বেশি। আর ৭ এ এসে পাইলটও বেশ ভালোই ব্যাট করেন। তাড়াহুড়ায় রান তুলতে পারেন বেশ দ্রুত।
৮ এ থাকছেন মোহাম্মদ রফিক। বামহাতি স্পিনার এবং হার্ড হিটার ব্যাটসম্যান। লোয়ার অর্ডারে বিগ শট এর জন্য রফিক ভালো পছন্দ। তবে দলে তার মুখ্য ভূমিকা বলার হিসাবে। দ্রুত গতির বল, আর্মার গুলো কিংবা ঘূর্ণির জাদুতে যেকোনো বড় দল এবং বড় ব্যাটসম্যানকে কুপোকাত করতে পারেন তিনি।
৯ এ বোলার হিসাবে থাকবেন আব্দুর রাজ্জাক। এখানে তার অপশন হতে পারতেন খালেদ মাহমুদ সুজন। কিন্তু দলে নাসির এর উপস্থিতি এবং তার মিডিয়াম পেস বোলিং সুজনের অভাব বুঝতে দিবে না। রাজ্জাককে নেয়াতে বাহাতি স্পিনার এর সংখ্যা খানিক বেড়ে গেল। ডানহাতি ভালো স্পিনার বলতে নাইমুর রহমান দুর্জয় বা মাহমুদুল্লাহ রিয়াদ অপশন হতে পারতেন কিন্তু বোলিং এর মান এবং রেকর্ড বিবেচনায় রাজ্জাকের উপরই আস্থা রাখলাম। আর বাংলাদেশ যেহেতু বাহাতি স্পিনার তৈরির কারখানা (এনামুল হক মণি, এনামুল জুনিয়র, রফিক, রাজ্জাক, প্রয়াত মাঞ্জারুল রানা, সাকিব প্রমুখ) সেহেতু দলে তার প্রতিফলন থাকবেই!!
১০ এ থাকছেন দলে অভিষেক এর পর থেকেই অনেকটা অটোমেটিক চয়েজে পরিনত হওয়া মাশরাফি বিন মর্তুজা। লাইন- লেন্থ- পেস সব মিলিয়ে একজন আন্তর্জাতিক মানের ওপেনিং বোলার। যথেষ্ট মিতব্যায়ি। শুরুতে তার একটি বিধ্বংসী স্পেল যেকোনো বড় দল এবং বড় ব্যাটসম্যানকে বিপাকে ফেলে দিতে পারে। দলের আত্মবিশ্বাসও বাড়িয়ে দিতে পারে অনেক খানি।
১১ তে মাশরাফির পার্টনার কে হবেন এটা একটু দ্বিধার বিষয়। মাশরাফি ছাড়া আর কোন পেসারই দীর্ঘদিন ধরে ভালো খেলতে পারেননি। অনেকেই হয়ত নিজেদের সময়ে ভালো খেলে গেছেন। এক সময়ের হাসিবুল হোসেন শান্ত কিংবা তার পরের তাপস বৈশ্য , মুহাম্মদ শরীফরা এক সময় আক্রমনের পুরোভাগে ছিলেন। এরপরের নাজমুল হোসেন , শাহাদাত হোসেনরাও ছিলেন। ওপেনিং এ বামহাতি বোলারদের মধ্যে এককালে ছিলেন মঞ্জু পরে পেয়েছি সৈয়দ রাসেল কে। তবে বলের গতির ধীরতার কারনে এদের নেয়া যাচ্ছে না। একেবারেই শেষে এসে আমরা পাচ্ছি রুবেলকে। গ্রামীণফোন পেসার হান্ট থেকে উঠে আসা ঝড়ো গতির বোলার। আমি সর্বকালের সেরা দলটিতে মাশরাফির পার্টনার হিসাবে রুবেলকেই নিব। রুবেল যদিও একটু খরুচে বোলার,কিন্তু উইকেট তুলে নিতে তার জুড়ি নেই। গতি- বাউন্স দিয়ে প্রতিপক্ষকে তটস্থ রাখার ক্ষমতা আছে তার। আর আছে ফাস্ট বোলারের বন্যতা।
এই হচ্ছে ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একাদশ। দলটিতে যথাসম্ভব গতিশীল খেলোয়াড়দের জায়গা দেয়া হয়েছে। এতে মাঠে ফিল্ডিং এর মানও বেড়ে যাবে কয়েকগুন। রাখা হয়েছে লেফট – রাইট কম্বিনেশন। আছে অভিজ্ঞ –তরুন কম্বিনেশন। ঠাণ্ডা মাথার আর আক্রমণাত্মক মনের কম্বিনেশন। স্পেশালিষ্ট ব্যাটসম্যান- কার্যকর কিছু আলরাউন্ডার- স্পেশালিষ্ট বোলার এর অনন্য সমন্বয়। যে কোন দলকে হারানোর ক্ষমতা আছে দলটির।
আর দলটির ক্যাপ্টেন হিসাবে থাকবেন সাকিব আল হাসান। ক্রিকেটীয় চিন্তা ভাবনা, নিজের পারফরম্যান্স, বিচক্ষনতা, চাপ নেয়ার ক্ষমতা কিংবা মাঠের বাইরের সম্মেলন সামাল দেয়ার জন্য তাকেই উপযুক্ত মনে হয়েছে।
হাইলাইটসঃ
১। মেহরাব হোসেন অপি
২। তামিম ইকবাল
৩। মোহাম্মদ আশরাফুল
৪। সাকিব আল হাসান (c)
৫। মিনহাজুল আবেদীন নান্নু
৬। নাসির হোসেন
৭। খালেদ মাসুদ পাইলট (wk)
৮। মোহাম্মদ রফিক
৯। আব্দুর রাজ্জাক
১০। মাশরাফি বিন মর্তুজা
১১। রুবেল হোসেন