• " />

     

    একদিবসি ক্রিকেটের সেরা এগার বাঘ

    একদিবসি ক্রিকেটের সেরা এগার বাঘ    

    প্যাভিলিয়ন-কিউট আয়োজিত স্পোর্টস ফিচার লেখা প্রতিযোগিতা 'খেলার লেখা, লেখার খেলা -১' এর দশজন বিজয়ীর লেখা ধারাবাহিকভাবে প্রকাশিত হচ্ছে! আজ থাকছে ষষ্ঠ স্থান অধিকারী মিশু কাজী-এর লেখা 'একদিবসি ক্রিকেটের সেরা এগার বাঘ'।

     

     

    ১৯৮৬ সালে প্রথম ওয়ানডে ম্যাচ খেলা এবং তার পথ ধরে ১৯৯৭ সালের আইসিসি ট্রফি জিতে বিশ্বকাপ খেলার যোগ্যতা অর্জনের পর গত ১৭ বছরে শতাধিক খেলোয়াড়ের অবদানে বাংলাদেশের ওয়ানডে ক্রিকেট সমৃদ্ধ হয়েছে। যে কয়েকটি বিষয় মাথায় রেখে তাদের মধ্যে থেকে সেরা ১১ বাংলাদেশি ওয়ানডে খেলোয়াড়কে বেছে নিয়েছি সেগুলো হলোঃ


     

    • ধারাবাহিকতা
    • দলের জয়ে অবদান
    • প্রমাণ সংখ্যক ম্যাচে অংশগ্রহণ
    • প্রতিভা ও প্রয়োগের সামঞ্জস্য   
    • ব্যাটিং এ অ্যাটাক-ডিফেন্স ও বোলিং এ ডানহাতি-বাঁহাতি সমন্বয়

     

     

    দলে ৮ নং পজিশন পর্যন্ত ব্যাটিং এর  সামর্থ্য রাখে। অন্যদিকে ২ জন ফাস্ট বোলার, ১ জন বাঁহাতি স্পিনার, ১ জন অফস্পিনার ও ২ জন পার্টটাইমার নিয়ে বোলিং আক্রমণ সাজানো হয়েছে।



    খুব একটা সহজ ছিলনা এতজন প্রিয় ও যোগ্য ব্যাক্তিদের মাঝে থেকে সেরা একাদশ বাছাই করা। হয়তো একই পজিশনে একের অধিক খেলোয়াড় জায়গা পাওয়ার দাবী রাখেন, সেখান থেকে অধিকতর উপযুক্ত জনকে তুলে আনার সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আশা করছি অধিকাংশ পাঠকই এই দলের ব্যাপারে তাদের সহমত পোষণ করবেন।

     

     

    তামিম ইকবালঃ

     


    এ যাবৎ কালে যতজন ওপেনার বাংলাদেশ ওয়ানডে দলে খেলেছেন, নিঃসন্দেহে তাদের মধ্যে তামিম ইকবাল সবচেয়ে বেশি প্রভাববিস্তারী। ২০০৭ সালের বিশ্বকাপে ভারতীয় বোলিং আক্রমণকে হতভম্ব করে দেয়ার মাধ্যমে একজন হার্ড হিটিং ওপেনারের আগমনী বার্তা পায় গোটা ক্রিকেট বিশ্ব। ঝুলিতে আছে উইজডেন বর্ষসেরা হওয়ার গৌরব। গত ৭ বছরে স্কোয়াডে নিজের জায়গা পাকাপোক্ত করেছেন তার সাবলীল স্ট্রোকমেকিং, ধারাবাহিকতা ও বড় ইনিংস গড়ার ক্ষমতার মাধ্যমে। বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা একাদশে তামিম ইকবালের অন্তর্ভুক্তিতে তাই দ্বিতীয়বার চিন্তার অবকাশ নেই। 
     

     

    শাহরিয়ার নাফিসঃ

     


    তার উত্থানের সাথে জড়িয়ে আছে ওয়ানডেতে বাংলাদেশের প্রতিষ্ঠিত দল হিসেবে গড়ে ওঠার প্রাথমিক সময়কাল। যে সময়ে সেঞ্চুরি ছিল দলের ব্যাটসম্যানদের কাছে ডুমুরের ফুল, সে সময়ে খেলেও তার ক্যরিয়ারে আছে ৪টি ওয়ানডে সেঞ্চুরি। গড়েছিলেন ২০০৬ সালে ওয়ানডেতে এক ক্যালেন্ডার বর্ষে সর্বোচ্চ রানের রেকর্ড। তামিমের পাওয়ার হিটিং এর যোগ্য সাহচর্য দিতে বড় জুটি গড়ে তোলার ক্ষমতাসম্পন্ন নাফিসই তাই আমার সেরার তালিকায় থাকবে।
     

     

    মোঃ আশরাফুলঃ

     


    এক কথায় সেরা বাংলাদেশি ব্যাটিং প্রতিভা। তার স্কিলের দাপটে বিজিতের কাতারে নাম লিখিয়েছে অস্ট্রেলিয়া, সাউথ আফ্রিকার মত অপরাজেয় ক্রিকেট শক্তিও। সেরা সময়ের আশরাফুলের ব্যাটিং এর চেয়ে বিধ্বংসী আর বিনোদনদায়ী কিছু হতে পারেনা। ওয়ানডেতে টপ অর্ডার থেকে মিডল অর্ডারের প্রায় সব পজিশনে ব্যাটিং করলেও আশরাফুল ওয়ান ডাউনে দলের সবচেয়ে বড় নির্ভরতা হতে পারেন। 
     

     

    আফতাব আহমেদঃ

     


    প্রয়োগে হয়তো সেরা নন, কিন্তু ক্ষমতার দিক থেকে আফতাব আহমেদের ব্যাটিংশৈলী ছিল বাংলাদেশের জন্য  অভিনব। ভয়ডরহীন ব্যাটিংটা এখানে তার আগে তার থেকে ভালো কেউ করে দেখাতে পারেনি। বাংলাদেশের প্রথম ওয়ানডে সিরিজ জয় নিশ্চিত হয়েছিল জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে তার অপরাজিত ৮১ রানের কল্যাণে। বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে প্রথম ৫ উইকেট শিকারও তিনি করেন তার কার্যকরী মিডিয়াম পেসের মাধ্যমে। টপ ও মিডল অর্ডারের মেলবন্ধন ঘটাতে আফতাব আহমদের স্টাইলিশ ব্যাটিং তাই আমার অটোমেটিক চয়েস।   
     

     

    সাকিব আল হাসানঃ (অধিনায়ক)

     


    আমার দৃষ্টিতে এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের সর্বকালের সেরা ক্রিকেটার। সাকিব আল হাসান বাংলাদেশ ক্রিকেটের সবচেয়ে বড় বিজ্ঞাপন। বিশ্বসেরা অলরাউন্ডার সাকিব যে কোন ধরণের ক্রিকেটীয় সেরা একাদশে জায়গা পাবার ক্ষমতা রাখেন। তার আক্রমণাত্মক ব্যাটিং ও দুরন্ত বাঁহাতি স্পিনের কার্যকারিতা প্রমাণিত হয়েছে দেশ ও দেশের বাইরে। ওয়ানডেতে সর্বোচ্চ ব্যক্তিগত রান, সর্বাধিক সেঞ্চুরি ও তৃতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের মালিক সাকিব ব্যাটিং এ থাকবেন মিডল অর্ডারের শুরুতে, আর বোলিং এ দলের অন্যতম স্ট্রাইক বোলারের দায়িত্ব পালন করবেন।  পাশাপাশি দলের অধিনায়কত্বের গুরুভারও থাকবে বিশ্বকাপ ২০১১ এ নেতৃত্ব দেওয়া এই অলরাউন্ডারের উপর।
     

     

    নাসির হোসেনঃ

     


    বাংলাদেশের ব্যাটিং এ ফিনিশারের একটা অভাব ছিল অনেকদিন। নাসির হোসেন ধীরে ধীরে এই অভাব পূরণ করে চলেছেন। ন্যূনতম ২৫ ইনিংস ব্যাটিং করা বাংলাদেশি ওয়ানডে ব্যাটসম্যানদের মধ্যে তার গড় সর্বোচ্চ। রানরেটের চাকা সচল রেখে ইনিংস গড়ে তোলা এবং সময়ের সাথে সাথে স্লগ করার ক্ষেত্রে নাসিরের ব্যাটিংনৈপুণ্য দারুণভাবে উপযোগী।
     

     

    মাহমুদুল্লাহ রিয়াদঃ

     


    প্রচারের আলোয় খুব একটা না থাকলেও মাহমুদউল্লাহ আধুনিক ওয়ানডে ক্রিকেটের ফরম্যাটে দারুণভাবে কার্যকর এক অন্তর্ভুক্তি হতে পারেন। শেষ ১৫ ওভারের ব্যাটিং এ যে ধরণের শট সিলেকশন ও এক প্রান্তে উইকেট ধরে রাখার যে কৌশল অবলম্বন করা দরকার তাতে মাহমুদউল্লাহ ইতিমধ্যে বেশ পারঙ্গমতার পরিচয় রেখেছেন। সাথে তার ডানহাতি অফস্পিন বোলিং আক্রমণে অধিনায়কের তুরুপের তাস হতে পারে।
     

     

    খালেদ মাসুদ পাইলটঃ (উইকেটরক্ষক)

     


    তাকে একসময় মনে করা হতো দক্ষিণ এশিয়ার সেরা উইকেটকিপার। খালেদ মাসুদ পাইলট- কঠোর পরিশ্রমের মাধ্যমে নিজেকে দলের অপরিহার্য একজন সদস্যে পরিণত করা আদর্শ এক নাম। টেল এন্ডের ব্যাটসম্যানদের সঙ্গী করে বহুবার তিনি দলকে ভরাডুবির হাত থেকে রক্ষা করেছেন। ওয়ানডেতে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বাধিক ডিসমিসালের অধিকারী খালেদ মাসুদ পাইলট থাকবেন সেরা একাদশের কিপার কাম লোয়ার অর্ডার ব্যাটসম্যানের ভূমিকায়।

     

     

    মাশরাফি বিন মর্তুজাঃ

     


    বাংলাদেশের সেরা ফাস্ট বোলার। গতি, সুইং, উইকেট শিকার, নিয়ন্ত্রিত বোলিং- সব মিলিয়ে দেশের পেস বোলিং এর এক অপ্রতিদ্বন্দ্বী প্যাকেজ মাশরাফি বিন মর্তুজা। বারবার ইনজুরির শিকার হওয়া সত্ত্বেও বাংলাদেশের পক্ষে ওয়ানডেতে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ উইকেটের অধিকারী এই বোলার প্রতিনিয়ত নির্বাচক ও দেশবাসীর আস্থার প্রতিদান দিয়েছেন সামর্থ্যের শতভাগ ঢেলে। আমার সেরা ওয়ানডে একাদশের বোলিং সূচনা করবেন এই ‘নড়াইল এক্সপ্রেস’।
     

     

    আব্দুর রাজ্জাকঃ

     


    সারা ক্রিকেট দুনিয়ায় খুব কম স্পিনারই আছেন- যারা পিচ, কন্ডিশন নির্বিশেষে একপ্রান্ত থেকে বোলিং এর সূচনা করতে পারেন, ব্যাটিং পাওয়ারপ্লে তে অধিনায়কের ভরসা হতে পারেন। আব্দুর রাজ্জাক তেমনই এক নাম। গত এক দশক ধরে নীরবে পারফর্ম করে বর্তমান ওয়ানডে দলের এক অপরিহার্য সদস্য হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। ওয়ানডে ক্রিকেটে বাংলাদেশের পক্ষে সর্বোচ্চ উইকেটধারী এই বাঁহাতি স্পিনার আমার সেরা একাদশে থাকবেন দলের স্পিন আক্রমণের নেতার ভূমিকায়।
     

     

    সৈয়দ রাসেলঃ

     


    ঐতিহাসিকভাবেই বাংলাদেশে বাঁহাতি ফাস্ট বোলারের সংখ্যা অপ্রতুল। সৈয়দ রাসেল তাদের মধ্যে উজ্জ্বলতম একজন। দুর্দান্ত লাইন-লেংথ ও সুইংকে উপজীব্য করে তিনি প্রতিপক্ষের রান আটকে রাখার কাজ করতেন সুচারুরূপে। দলের পেস আক্রমণে তার আদর্শ ইকোনমি রেট ও লম্বা স্পেলে বোলিং করার ক্ষমতা এনে দেবে এক অন্য মাত্রা।

     

     

    কোচঃ জেমি সিডন্স

     


    ওয়ানডের সূচনালগ্ন হতে এখন পর্যন্ত অনেক বিদেশি কোচ আমাদের দলকে একটু একটু করে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে সাহায্য করেছেন। তবে জেমি সিডন্সকে আমি তাদের থেকে আলাদা করে রাখবো একটাই কারণে, জয়কে অভ্যাসে পরিণত করার মনোভাব তিনি শিষ্যদের মধ্যে সঞ্চারিত করতে পেরেছিলেন। পাশাপাশি টেকনিক্যাল দিক থেকে তরুণ খেলোয়াড়দের নিখুঁত করার ক্ষেত্রে তার অসামান্য অবদান ছিল। আমার নির্বাচিত সেরা একাদশের দেখভাল করার দায়িত্ব থাকবে এই অস্ট্রেলীয় জিনিয়াসের হাতে।