• রিও ২০১৬
  • " />

     

    হুইলচেয়ারে বসে ইরানের মেয়ের বিশ্বজয়!

    হুইলচেয়ারে বসে ইরানের মেয়ের বিশ্বজয়!    

    রিও অলিম্পিকের আর্চারির মাঠ। প্রতিযোগীরা ধ্যানমগ্ন হয়ে নিশানা স্থির করতে ব্যস্ত। তবে শুধুমাত্র একজন হুইলচেয়ারে বসে আছেন। প্রথম দর্শনে একটু অন্যরকম লাগতে পারে ব্যাপারটা। কিন্তু এই অবাক হওয়ার মতো কাজটি করে দেখিয়েছেন ইরানের জাহরা নেমাতি। মানুষের অদম্য ইচ্ছা তাঁকে কতদূর নিয়ে যেতে পারে, জাহরা আরেকবার তা প্রমাণ করে দিলেন। ৩১ বছর বয়সী এই তীরন্দাজ হুইলচেয়ারে বসে অংশ নিয়েছেন এবারের রিও অলিম্পিকের আর্চারি বিভাগে।

    অথচ গল্পটা অন্যরকম হতে পারত। মাত্র আঠারো বছর বয়সেই ব্ল্যাক বেল্টের অধিকারী জাহরা ক্যারিয়ারের শুরুতে ইরানের জাতীয় দলের তায়কোয়ান্দো বিভাগে ডাক পেয়েছিলেন। কিন্তু ২০০৩ সালে এক দুর্ঘটনায় আরেকটু হলেই জীবন সংশয় হতে বসেছিল তাঁর। গাড়ি দুর্ঘটনায় নিজের দুই পা হারান, স্পাইনাল কর্ড হয়ে যায় চূর্ণবিচূর্ণ।

    কিন্তু পঙ্গুত্বের কাছে নিজের স্বপ্নকে হারতে দিলেন না জাহরা। দুর্ঘটনার ৩ বছর পর হুইলচেয়ারে বসেই শুরু করলেন তীর ছোঁড়ার অভ্যাস। দেখতে দেখতে এই খেলায়ও পারদর্শী হয়ে গেলেন। সুযোগও হয়ে গেলো ২০১২ সালের লন্ডনের প্যারা-অলিম্পিকে। সুযোগ পেয়েই বাজিমাত করেন। প্রথম ইরানি মহিলা হিসাবে একক ইভেন্টে স্বর্ণ জেতেন, দলকেও এনে দেন ব্রোঞ্জ। স্বর্ণ জেতার পর যে কথাটি বলেছিলেন, সেটি প্রেরণা হতে পারে আরও অনেকের জন্য, “আমি ইরানি তরুণ, বিশেষ করে মেয়েদের দেখাতে চাই যে; মেয়েরা কোনো অংশে কম না। আমরাও বাধা পেরিয়ে স্বর্ণ জিততে পারি।”

     

     

    লন্ডন অলিম্পিকটা আরেক কারণেও স্মরণীয় হয়ে থাকবে তাঁর কাছে। স্বর্ণবিজয়ের রাতেই দীর্ঘদিনের বন্ধু রোহাম সাহাবিপুরের সাথে আংটি বদল করে নতুন জীবনের সূচনা করেন। এই আনন্দে যোগ দেয় পুরো ইরানি অলিম্পিক পরিবার। দু'জনের মাঝে একটা মিল আছে, রোহামও জন্ম থেকে পঙ্গু নন।   

    সেবার অলিম্পিকের মূল আসরে খেলার স্বপ্নটা অধরা থেকে গেলেও এবার রিওতে হয়েছে স্বপ্নপূরণ। ইরানের হয়ে মূল অলিম্পিকে অংশগ্রহণ করছেন জাহরা। উদ্বোধনী অনুষ্ঠানেও হুইলচেয়ারে বসে দেশের পতাকা বহন করা এই নারী নিজ ইভেন্টে হয়েছেন ৪৯তম। কিন্তু এতে একটুও অখুশি নন তিনি, “নিজের উপরে বিশ্বাস রাখাটাই আসল ব্যাপার। তাহলে সবকিছুই সম্ভব।”