• " />

     

    ‘১২’র গপ্পো

    ‘১২’র গপ্পো    

    প্যাভিলিয়ন আয়োজিত স্পোর্টস ফিচার লেখা প্রতিযোগিতা 'খেলার লেখা, লেখার খেলা -২' এর দশজন বিজয়ীর লেখা ধারাবাহিক প্রকাশিত হচ্ছে! আজ থাকছে পঞ্চম স্থান অধিকারী ইমতিয়াজ আজাদ-এর লেখা '১২’র গপ্পো

     

     

    এই গল্পের শুরু হয়েছিল ১৯৭০ সালে।

     

     

    সেবার বিশ্বকাপের আসর বসেছিল মেক্সিকোতে। ফাইনালে মুখোমুখি হয়েছিল ব্রাজিল ও ইটালি। যে ফাইনালে ৪-১ গোলে জিতে জুলেরিমে ট্রফিটি চিরদিনের জন্য নিজেদের করে নেয় ব্রাজিল।

     

     

    কিন্তু ইটালি? দীর্ঘ ৩২ বছর পরে বিশ্বকাপের ফাইনালে উঠেও যে বিশ্বকাপ হয়ে থাকে “এতো কাছে তবুও এতো দূরে।” ভাগ্যদেবী হয়তো মুচকি হাসলেন। ‘১২’ সংখ্যাটাকে একই সঙ্গে ইটালির জন্য সৌভাগ্য ও দুর্ভাগ্যের সংখ্যা বানিয়ে দিলেন।

     

     

    এই ঘটনার ১২ বছর পরে বিশ্বকাপের আসর বসলো স্পেনে। ইটালির ফুটবল তখন পাতানো খেলার বিতর্কে টালমাটাল। এরই মধ্যে ইটালির কোচ পাওলো রসি নামের এক জেলখাটা আসামীকে দলে রেখে বিতর্ক আরও উসকে দিলেন। কোচকে আরও বিপদে ফেলতেই কিনা কে জানে, রসি গোল পেলেন না গ্রুপ পর্বের তিন ম্যাচের একটিতেও। কোচ তারপরও তাঁকে একটা সুযোগ দিলেন। হয়তো শেষ সুযোগও ছিল ওটা। পাওলো রসি সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে কোয়ার্টার ফাইনালে করলেন হ্যাট্রিক, সেমি ফাইনাল আর ফাইনাল মিলে করলেন আরও ৩ গোল। গোল্ডেন বুট তো জিতলেনই, দলকে জিতিয়ে দিলেন বিশ্বকাপও।

     

     

     

    কি বুঝলেন? “পোয়াবারো।”

     

     

    আবার ১২ বছরের অপেক্ষা। এর মাঝে পার হয়ে গেলো আরও দুটি বিশ্বকাপ। তার মধ্যে ১৯৯০ সালের বিশ্বকাপটা ছিল ইটালিতে। সেটাতে ইটালি সেমিফাইনালের বেশি যেতে পারলো না। ১৯৯৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র সাজলো বিশ্বকাপের রঙে। ২৪ বছর পর আবার ফাইনালে মুখোমুখি ব্রাজিল আর ইটালি। ১৯৭০ এর প্রতিশোধ যে এবার নিতেই হবে। নির্ধারিত ৯০ মিনিট তো বটেই, অতিরিক্ত ৩০ মিনিটের পরেও খেলার ফল গোলশূন্য ড্র। টাইব্রেকার।

     

     

    লেখার পরের অংশটুকু আমি আমার স্মৃতি থেকে লিখছি। ১৯৯৪ সালে আমি পড়ি ক্লাস ওয়ানে। আমার মনে আছে গভীর রাতে আমি ঘুম থেকে উঠে ঘুম ঘুম চোখে ফাইনাল খেলা দেখছি। ৪ টা করে শট নেওয়া হয়ে গেছে। ব্রাজিল ৩ -২ ইটালি।

     

     

    শেষ শটটিতে ইটালিকে গোল করতেই হবে। ইটালির হয়ে শেষ শটটি নিতে এগিয়ে আসলেন ‘ডিভাইন পনিটেল’ খ্যাত রবার্তো বাজ্জিও। তিনি এগিয়ে আসলেন, শট নিলেন এবং বারের উপর দিয়ে উড়িয়ে মারলেন।

     

     

    হলোনা, ইটালি। ১২ সংখ্যাটা এবার আর তোমাদের জন্য পয়া হলো না।

     

     

    ১২ বছর পরে। ২০০৬ সাল। বিশ্বকাপ এবার জার্মানিতে। ইটালির ফুটবল আবারো ম্যাচ ফিক্সিং বিতর্কে জেরবার। ম্যাচ পাতানোর অভিযোগে প্রধান অভিযুক্ত জুভেন্টাসের কাছ থেকে লীগ চ্যাম্পিয়নশিপ কেড়ে নিয়ে দেওয়া হয়েছে ইন্টার মিলানকে। এই অবস্থায় বিশ্বকাপে এসে চতুর্থবারের মতো চ্যাম্পিয়ন হয়ে গেলো ইটালি।

     

     

    ২০০৬ সালের ফাইনালের কথা আমার এখনো স্পষ্ট মনে আছে। ফাইনাল ম্যাচ ফ্রান্স বনাম ইটালি। ম্যাচের ৭ মিনিটেই ফ্রান্সকে এগিয়ে দেন ফ্রেঞ্চ উইজার্ড “জিনেদিন জিদান।” এর ঠিক '১২’ মিনিট পরে ইটালিকে সমতায় ফেরান মার্কো মাতেরাজ্জি। সেই মাতেরাজ্জি যার কারণে জিদান অতিরিক্ত সময়ে লাল কার্ড দেখেন। ম্যাচ শেষ হয় ১-১ গোলে। খেলা গড়ায় টাইব্রেকারে। টাইব্রেকারে ৫-৩ গোলে চ্যাম্পিয়ন হয় ইটালি।

     

     

     

    এখনো অনেকেই বলেন, ওই ম্যাচে জিদান লাল কার্ড না পেলে ফ্রান্সই বিশ্বকাপ জিততো। বিষয়টা তর্কসাপেক্ষ। কিন্তু আমাকে যদি কেউ জিজ্ঞেস করে, আমি বলবো, “সবই ‘১২’র কীর্তি।”

     

     

    এই হিসাবে ইটালির আবার চ্যাম্পিয়ন হওয়ার কথা ২০৩০ সালে। ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে রানার্স-আপ। সেক্ষেত্রে ব্রাজিলের সাপোর্টারদের জন্য সুখবর। ইটালি যে দু’বার রানার্স-আপ হয়েছে, সে দু’বারই চ্যাম্পিয়ন হয়েছিল ব্রাজিল। ২০১৪ সালের বিশ্বকাপে যদি ব্রাজিল চ্যাম্পিয়ন নাও হতে পারে, ২০১৮ সালের বিশ্বকাপে তাঁরা যে চ্যাম্পিয়ন হচ্ছেই, এটা প্রায় নিশ্চিত।

     



    আর ইটালির সাপোর্টাররা, আপনারা নিশ্চয়ই ২০৩০ সালের আগে আর চ্যাম্পিয়ন হওয়ার আশা করছেন না?

     

     

     

    সেরা দশের আরও কিছু লেখা

     

    ষষ্ঠঃ ব্রাজিলের স্বপ্নভঙ্গঃ ফ্রান্স ১৯৯৮

     

    সপ্তমঃ একসাথে কাঁদা কিংবা উল্লাসের স্বপ্ন

     

    অষ্টমঃ একটি গোল ও একজন যাদুকরের আগমনধ্বনি

     

    নবমঃ সুন্দর ফুটবলের জয়

     

    দশমঃ পোয়েটিক জাস্টিস কিংবা এক মহারণের গল্প