• দক্ষিণ আফ্রিকা-অস্ট্রেলিয়া
  • " />

     

    অস্ট্রেলিয়া ড্রেসিংরুম এবং একজন ব্যারি ‘নাগেট’ রেসের গল্প

    অস্ট্রেলিয়া ড্রেসিংরুম এবং একজন ব্যারি ‘নাগেট’ রেসের গল্প    

    ছেলেকে নিয়ে বাবা রে’র চিন্তার শেষ নেই। পড়াশুনায় কোন মনোযোগ নেই, চাকরিরও কোন গতি হচ্ছে না। শেষমেস অ্যাডিলেডে এক খেলার সামগ্রীর দোকানে পরিচ্ছন্নতাকর্মী হিসেবে ঢুকিয়ে দেন। এই কাজে খুব একটা ইচ্ছে ছিল না, কিন্তু পরিবারের অর্থনৈতিক অবস্থার কথা ভেবে ১৯৬২ সালে ডেভিড রো এবং ব্যারি জার্মানের দোকানে কাজ শুরু করে ১৮ বছরের ছেলেটি।

     

    কাজ শুরুর কিছুদিনের মাঝেই মালিক ব্যারি জার্মান লক্ষ্য করেন, ছেলেটার ক্রিকেটের প্রতি দারুণ আগ্রহ। জার্মান নিজে দক্ষিণ অস্ট্রেলিয়ার হয়ে খেলতেন, একদিন  সাথে করে মাঠে নিয়ে গেলেন। তাঁকে ভালো লেগে যাওয়ায় প্রতি ম্যাচেই ডাক পড়ত ড্রেসিংরুমে। সেই শুরু, আজ অবধি অস্ট্রেলিয়া ক্রিকেট দলের সাথে ওতপ্রোত ভাবে জড়িয়ে আছে তাঁর নাম। তিনি সবার প্রিয় ব্যারি ‘নাগেট’ রেস, অজি ড্রেসিংরুমে গত ৫০ বছর ধরে যিনি ড্রেসিংরুমের পরিচ্ছন্নতার কাজ এবং ক্রিকেটারদের সেবাযত্ন করে আসছেন। কাল থেকে শুরু হওয়া অ্যাডিলেড টেস্টের আগে এসেছে দারুণ এক ঘোষণা। স্টেডিয়ামের ড্রেসিংরুমের নামকরণ করা হবে তাঁর নামেই!

     

    একটু অবাক হচ্ছেন? সামান্য একজন পরিচ্ছন্নতা কর্মীর নামে ড্রেসিংরুমের নামকরণ! কিন্তু ব্যারি তো অস্ট্রেলিয়া দলের কাছে পরিচ্ছন্নতা কর্মীর চেয়ে অনেক বেশি কিছু। ইয়ান চ্যাপেল থেকে শুরু করে স্টিভ স্মিথ, গত ৫ দশকের সব অজি অধিনায়কের কাছেই তিনি পরম আপনজন। বিশ্বকাপ জয়ের আনন্দ থেকে ফিলিপ হিউজের মৃত্যুশোক, সব পরিস্থিতিতেই দলের পাশে থেকেছেন। সাবেক অস্ট্রেলীয় কিপার অ্যাডাম গিলক্রিস্ট ব্যারির কথা স্মরণ করে স্মৃতিকাতর হয়ে যান মাঝে মাঝেই, “আমরা সবাই জানতাম যতকিছুই হোক ব্যারি আমাদের পাশে থাকবে। কারো হাত-পা কেটে গেলে সাথে সাথেই সে ব্যান্ডেজ নিয়ে বসে পড়ত। যত জুনিয়র ক্রিকেটারই হোক না কেন।”

     

    অনেক চড়াই উতরাই দেখেছেন ৭২ বছরের জীবনে। ‘বুড়ো’ হয়ে গিয়েছেন, শরীরে সেই আগের শক্তি নেই। তবুও মাঝে সাঝেই চলে আসেন খেলা দেখতে। ক্রিকেটারদের ‘টিপস’ও দেন! এমনকি দলের কোচদের কাছেও তিনি ‘গুরু’। গৎবাঁধা ক্রিকেটীয় প্রশিক্ষণ হয়তো না থাকতে পারে, কিন্তু আছে ক্রিকেটের প্রতি গভীর ভালোবাসা। জীবনের পড়ন্ত বিকেলে এসে ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া তাঁকে যে সম্মান দেখিয়েছে, এতে ব্যারির চেয়ে অজি কোচ ড্যারেন লেম্যানই বেশি উচ্ছ্বসিত, “অস্ট্রেলীয় ক্রিকেটে ব্যারি একজন কিংবদন্তির নাম। তাঁর সাথে ড্রেসিংরুম ভাগাভাগি করতে পেরে আমরা সবাই গর্বিত। এটা আমাদের জন্য একটা রূপকথাই বটে!”

     

    নামের সাথে ‘নাগেট’ আসার গল্পটাও মজার। যখন জার্মানের সাথে মাঠে যেতেন, সাবেক অজি ক্রিকেটার কিথ মিলারের খেলার ভালো লেগে যায়। মিলারকে দলের সবাই ডাকতো ‘নাগেট’ নামেই। সেই সুবাদে ব্যারির নামের পাশে লেগে গিয়েছিল একই উপাধি!

     
    অস্ট্রেলিয়া দলের সাথে এই দীর্ঘ সফরে এসেছে বহু স্মরণীয় মুহূর্ত। ইয়ান চ্যাপেলের সাথে এক রুমে ঘুমিয়েছেন। স্টিভ ওয়াহের বিদায়ী ম্যাচে তাঁর জন্য পানি নিয়ে মাঠে প্রবেশ করেছিলেন। হিউজের মৃত্যুর পর পুরো দল যখন শোকে স্তব্ধ হয়ে ছিল, সেই সময় নিজের সন্তানের মতো সবাইকে আগলে রেখেছেন।
     
     

    ২০১১ সালে অজি ড্রেসিংরুম থেকে ‘অবসর’ নিয়েছিলেন। কিন্তু খেলার প্রতি ভালোবাসার টানে নিয়মিতই চলে আসেন মাঠে। আগামীকাল টেস্ট শুরুর আগে আনুষ্ঠানিকভাবে তাঁকে সম্মান জানানোর কথা রয়েছে। অজিদের এই দুঃসময়ে তাঁর উপস্থিতি দলকে বাড়তি সাহস জোগাবে তা বলাই বাহুল্য। যেই ড্রেসিংরুমে কাটিয়েছেন দিনের পর দিন, আজীবনের জন্য তাঁর নামটা জড়িয়ে থাকবে সেই ড্রেসিংরুমের সাথেই!