একজন 'অভাগা' ওকিফের গল্প
অস্ট্রেলিয়া দলে পালাবদল চলছে। ‘ওয়ার্ন যুগের’ সমাপ্তির পর অজিরা তখন হন্যে হয়ে এমন একজন স্পিনার খুঁজে বেড়াচ্ছে, যিনি কিনা একটু আধটু ব্যাটিংও করতে পারবেন। নির্বাচকদের সামনে যে দুজনের নাম এল, দুজনই নিউ সাউথ ওয়েলসের হয়ে খেলেন। দুজনই স্পিনার, মোটামুটি ব্যাটিংটাও চালিয়ে যেতে পারবেন লোয়ার মিডল অর্ডারে। নির্বাচকরা বেছে নিলেন স্টিভেন স্মিথকে, মন ভাঙলো স্টিভ ওকিফের। নিয়তির কী খেলা দেখুন, ঘটনার ৭ বছর পর সেই স্মিথের দলকেই ভারতের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য এক জয় এনে দিলেন সেই ওকিফই! আর সেই স্মিথই এখন সময়ের সেরা ব্যাটসম্যানদের একজন!
বাবার চাকরির সুবাদে জন্মেছিলেন মালয়শিয়ায়। দেশে ফিরে ক্রিকেটের প্রতি ঝোঁক চেপে বসে। স্কুল ক্রিকেটে সবার নজর কেড়ে সুযোগ পেয়ে যান অনূর্ধ্ব -১৯ দলে। এরপর থেকেই হতাশার গল্পের সূচনা। অস্ট্রেলিয়া দলে তখন ‘সোনালি যুগ’ চলছে। একাদশে সুযোগ পাওয়া তো দূরে থাক, প্রাথমিক দলে জায়গা করে নেওয়াই স্বপ্নের ব্যাপার হয়ে দাঁড়িয়েছিল। একটা সময় একসাথে অবসর নিলেন রথি মহারথিদের অনেকেই, দলে ঢোকার সুযোগও এলো।
কিন্তু বিধিবাম। ঘরোয়া ক্রিকেটে দারুণ পারফর্ম করা ওকিফের স্বপ্নভঙ্গ হলো ক্লাব সতীর্থ স্মিথের জন্য। স্মিথকেই বেশি ‘যোগ্য’ ভেবেছিলেন সবাই। ওকিফের চেয়ে অপেক্ষাকৃত ‘তরুণ’ স্মিথকে নেওয়ার ক্ষেত্রে ভবিষ্যতের কথাটাও মাথায় ছিল নির্বাচকদের। স্মিথ ধীরে ধীরে জাতীয় দলে থিতু হলেন, ওকিফও হারিয়ে গেলেন হাজারো ক্রিকেটারদের মাঝে।
কিন্তু যার ভাগ্যে ‘ব্যাগি গ্রিন’ লেখা আছে, তাঁকে কি কেউ আটকাতে পারে? দলে জায়গা না পেয়েও হাল ছাড়েননি। অবশেষে ২০১৪ সালে ভাগ্যদেবী মুখ ফিরে তাকায় ওকিফের দিকে। পাকিস্তানের বিপক্ষে টেস্ট দলে সুযোগ পান। অভিষেক খুব একটা স্মরণীয় করে রাখতে পারেননি, নিয়েছেন ৪ উইকেট। এই সিরিজের পর দলে আসা-যাওয়া লেগেই ছিল দলে। শ্রীলংকার বিপক্ষে সিরিজে পড়লেন ইনজুরিতে। অনেকবার ভেবেছিলেন, আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায়ই বলে দেবেন। ওয়ানডে দলে খেলার আশা ছেড়ে দিয়েছিলেন আরও আগেই।
ভারতের বিপক্ষে কঠিন সিরিজ আসন্ন। দল ঘোষণা করলো ক্রিকেট অস্ট্রেলিয়া, জায়গা পেলেন ওকিফও। দল ঘোষণার পর থেকেই তাঁকে নিয়ে উঠেছিল নানা প্রশ্ন। শেন ওয়ার্ন তো সরাসরি বলেই বলেই দিয়েছিলেন, ওকিফের দলে থাকায় অবাক তিনি। এরপর যা হলো সেটা ইতিহাস। ওয়ার্নকে ভুল প্রমাণিত করে দুই ইনিংসে ১২ উইকেট নিয়ে ধসিয়ে দিলেন ভারতের ব্যাটিং লাইনআপকে। ভথচ ভারতে এক ম্যাচে সাতটির বেশি উইকেট নিতে পারেননি ওয়ার্ন। কোহলি, পূজারা, বিজয়দের মতো ব্যাটসম্যানরাও ওকিফের স্পিনে নাকানি চুবানি খেলেন।
যেই স্মিথের জন্য একসময় দলে জায়গা পাননি, সেই স্মিথের মুখেই হাসি ফুটিয়েছেন। দাঁতে দাঁত চেপে জবাব দিয়েছেন সব সমালোচনার। স্টিফেন নরমান জন ওকিফের গল্পটা তো শুধু একজন ক্রিকেটারের নয়, হার না মানা একজন যোদ্ধারও।