• বাংলাদেশ বনাম শ্রীলংকা
  • " />

     

    পঞ্চপাণ্ডবের হ্যাটট্রিক এবং বাংলাদেশের 'এগিয়ে যাওয়া'

    পঞ্চপাণ্ডবের হ্যাটট্রিক এবং বাংলাদেশের 'এগিয়ে যাওয়া'    

    পর পর দুই বলে অনেকটা খেলার ধারার বিপরীতেই পেয়ে গেলেন দুই উইকেট। হ্যাটট্রিকের সুযোগ আগেও পেয়েছিলেন, তবে কাজে লাগাতে পারেননি। নুয়ান প্রদীপকে করা বলটা হলো একদম স্বপ্নের হ্যাটট্রিক ডেলিভারি, প্রদীপের স্টাম্প হয়ে গেল ছত্রখান। দুই হাত উড়িয়ে শুন্য ভেসে গেলেন তাসকিন। সতীর্থের পিঠ চাপড়ে দিতে দিতে কি ১১ বছর আগের ওই দিনের কথা মনে পড়ছিল মাশরাফি বিন মুর্তজার? শাহাদাতের হ্যাটট্রিকে যে দিনটা বাংলাদেশের জন্য হওয়ার কথা ছিল গৌরবের, সেটাই মাশরাফির জন্য হয়ে গেছে ভুলে যাওয়ার মতো।

    ওয়ানডে ইতিহাস এখন পর্যন্ত ৪১টি হ্যাটট্রিক দেখেছে। তবে বাংলাদেশের প্রথমবার কারও সেই স্বাদ পেতে অপেক্ষা করতে হয়েছে ২০০৬ সাল পর্যন্ত। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে সেটি ছিল সিরিজের তৃতীয় ম্যাচ, প্রথমে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছিল ২৩৬ রান। ৩৯তম ওভারে যখন বল করতে এলেন শাহাদাত, জিম্বাবুয়ে ৪ উইকেট হারিয়ে তুলে ফেলেছে ১৫০ রান। প্রথম দুই বলে ফিরিয়ে দিলেন মুফাম্বিসি ও চিগুম্বুরাকে, হ্যাটট্রিক বলের সামনে প্রসপার উতসেয়া। খোঁচা দিয়ে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিলেন উতসেয়া, শাহাদাতের হ্যাটট্রিকে উজ্জ্বল বাংলাদেশের জয়ের স্বপ্ন।

    কিন্তু শেষ পর্যন্ত ব্রেন্ডন টেলর একাই ওই ম্যাচ  বের করে নিয়েছিলেন। মাশরাফির শেষ ওভারে দরকার ১৭, শেষ বলে ছয় মেরেই সেটি নিলেন টেলর। সেই দিনটা বোধ হয় কখনোই ভুলতে পারবেন না মাশরাফি। হ্যাটট্রিক ছাপিয়ে যে তীরে এসে তরী ডোবার বেদনাই বড় হয়ে উঠেছিল বাংলাদেশের কাছে।

    তবে পরের তিন বার আর সেই দুর্ভাগ্য বরণ করতে হয়নি বাংলাদেশকে। ২০১০ সালে আবদুর রাজ্জাক যখন দ্বিতীয়বার সেই উদযাপনের সুযোগ পেয়েছিলেন, জিম্বাবুয়ে এর মধ্যেই চলে গিয়েছিল খাদের কিনারায়। শাহাদাতের তৃতীয় শিকার উতসেয়াকে দিয়ে শুরু করেছিলেন, এর পর প্রাইস ও পোফুকে। তবে উতসেয়ার বলটা ছিল ওভারের শেষ বলে। পরের ওভারের প্রথম দুই বলেই আউট করে পেয়েছিলেন হ্যাটট্রিক। ৭ উইকেটে ১৮৯ থেকে ১৯১ রানেই অলআউট হয়ে গিয়েছিল জিম্বাবুয়ে।

    তবে রুবেল হোসেনের হ্যাটট্রিকটাই বোধ হয় বাংলাদেশের জন্য মধুরতম হয়ে আছে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গে প্রথম ওয়ানডেতে শুরুতে ব্যাট করে বাংলাদেশ করেছিল ১৬৫ রান। ৬০ রানে ৩ উইকেট হারানোর পর প্রতি আক্রমণ শুরু করেছিলেন গ্রান্ট এলিয়ট ও কোরি অ্যান্ডারসন। মাত্র ৭ ওভারে তুলে ফেলেছিলেন ৬১ রান। বৃষ্টির জন্য লক্ষ্যটা কমে গিয়েছিল, দুজন খেলতে শুরু করেছিলেন টি-টোয়েন্টির ধরনেই।

    ২৪তম ওভারের তৃতীয় বলেই রুবেল দিলেন ব্রেকথ্রু, স্লোয়ার বুঝতে না পেরে বোল্ড অ্যান্ডারসন। পরের বলে ব্রেন্ডন ম্যাককালাম ক্যাচ দিলেন ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে, রুবেলের দুই বলে দুই উইকেট। হ্যাটট্রিকটা বলটা লেগেই ছিল, কিন্তু নিশমের ব্যাটে লেগে সেটি ধরলেন মুশফিক। বৃষ্টিভেজা মিরপুরে ম্যাচও নিশ্চিত হয়ে গেল বাংলাদেশের। স্বপ্নের ওই স্পেলে রুবেল ১০ রান দিয়ে পেয়েছিলেন ৫ উইকেট।

    পরের হ্যাটট্রিকের জন্য বাংলাদেশকে অবশ্য বছরখানেকের বেশি অপেক্ষা করতে হয়নি। এবার প্রতিপক্ষ সেই পুরনো জিম্বাবুয়ে, শুধু বদলে গেছেন বোলার। তাইজুল ইসলামের জন্য কীর্তিটা অনন্যই ছিল, অভিষেকেই যে হ্যাটট্রিক পেয়ে গিয়েছিলেন! ওয়ানডে ইতিহাসেই সেই কীর্তি আর কারও নেই। রাজ্জাকের সঙ্গে তাইজুলের মিলে যাচ্ছে আরও এক জায়গায়, দুইজনের ওভারের শেষ বলের পরের ওভারে প্রথম দুই বলে উইকেট পেয়েছিলেন। পানিয়াঙ্গারা, নিয়ুম্বু এবং চাতারা তাইজুলের তিন শিকার।  

    মজার ব্যাপারই বটে, হ্যাটট্রিকের খেলায় বাংলাদেশ যেভাবে এগিয়ে যাচ্ছে, তাতে অনেকেই পড়ে যাচ্ছে পেছনে। ওয়ানডেতে গত ১৫টি হ্যাটট্রিকের পাঁচটিই বাংলাদেশের। তাও আবার বাংলাদেশের আলাদা পাঁচজন বোলার এই কীর্তি গড়েছেন, শুধু অস্ট্রেলিয়া ও পাকিস্তানেরই ছয়জন করে বোলার হ্যাটট্রিক করতে পেরেছেন। পাকিস্তানের অবশ্য ওয়াসিম আকরাম ও সাকলাইন মুশতাক এই কীর্তি গড়েছেন দুই বার করে। শ্রীলঙ্কারও সাত বার আছে হ্যাটট্রিকের গৌরব, তবে লাসিথ মালিঙ্গা একাই করেছেন তিন বার। এর মধ্যে একবার আবার পর পর চার বলে উইকেট। চামিন্ডা ভাসও দুইবার করেছেন এই কীর্তি। ইংল্যান্ডের চার জনের আছে এই কীর্তি, দক্ষিণ আফ্রিকার তিনজনের। ভারত, ওয়েস্ট ইন্ডিজ, নিউজিল্যান্ড ও জিম্বাবুয়ের আছে দুইজন করে।

    তবে সবচেয়ে বেশি ছয়বার করে হ্যাটট্রিকের কীর্তি আছে অস্ট্রেলিয়া ও জিম্বাবুয়ের বিপক্ষে। শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে সেটি হয়েছে পাঁচ বার। বাংলাদেশের বিপক্ষে আছে দুইবার, চামিন্ডা ভাস ও কাগিসো রাবাদার সেই কীর্তি দুইটি অনেকেরই মনে থাকার কথা। তাসকিন অবশ্য আরকেওটা জায়গায় এগিয়ে থাকতে পারতেন, তাঁর চেয়ে কম বয়সে কীর্তিটা আছে শুধু আকিব জাভেদ ও রাবাদারই।

    তবে তাসকিন চাইলে পূর্বসূরিদের চেয়ে মিল খুঁজতে পারেন স্টিভ ফিন, কেমার রোচ, শার্ল ল্যাঙ্গেভেল্ট, জেমস অ্যাণ্ডারসন, স্টিভ হার্মিসন, সাকলাইন মুশতাক, ওয়াকার ইউনিস, ওয়াসিম আকরামদের সাথে। তাঁরা সবাই যে ইনিংসের শেষ ওভারে পর পর তিন বলে উইকেট পেয়েছেন। তবে ওয়ানডেতে হ্যাটট্রিকের সর্বশেষ কীর্তিটা জেমস ফকনারের, কাকতালীয়ভাবে সেটিও শ্রীলঙ্কার সঙ্গে। সেই ম্যাচে অবশ্য শ্রীলঙ্কাই শেষ পর্যন্ত জিতেছিল। তাসকিন নিশ্চয় চাইবেন না, তাঁর বেলায়ও সেই ঘটনার পুনরাবৃত্তি হোক।