যে টি-টোয়েন্টিতে 'সাধ আছে, সাধ্য নাই'
এই তো, মাত্র মাসখানেক আগের কথা। হুট করে তারিখটা দেখলে চমকে উঠতে পারেন, অ্যাডিলেডে শ্রীলঙ্কার সঙ্গে টি-টোয়েন্টি খেলছে অস্ট্রেলিয়া, আবার পরের দিন পুনে টেস্টেও ভারতের প্রতিপক্ষ অস্ট্রেলিয়া! নিশ্চয় কোথাও কোনো ভুল হচ্ছে? কিন্তু সেরকম কিছু নয়, প্রায় একই সময়েই অ্যাডিলেড ও পুনেতে মাঠে নেমেছিল অস্ট্রেলিয়া। বলাই বাহুল্য, টেস্ট আর টি-টোয়েন্টির অস্ট্রেলিয়া দল অধিনায়ক থেকে শুরু করে সবকিছুতেই অন্যরকম। প্রায় একই সময়ে দুই জায়গাতেই খেলার ‘বিলাসিতা’ তাদের জন্য কঠিন কিছু নয়। এই মুহূর্তে দক্ষিণ আফ্রিকাসহ আরও কয়েকটি দল সেই সামর্থ্য দেখাতেই পারে। কিন্তু বাংলাদেশই বোধ হয় একমাত্র ব্যতিক্রম, টেস্ট আর টি-টোয়েন্টি দলের সঙ্গে যেখানে পার্থক্য বলতে গেলে প্রায় নেই!
দক্ষিণ আফ্রিকার টি-টোয়েন্টি দলের দিকেই একটু তাকান। সর্বশেষ শ্রীলঙ্কার সঙ্গে যে দলটা খেলেছিল সেখানে অনেক নামই আপনার কাছে অচেনা মনে হবে। থিওনিস ডে ব্রুইন, এম মোশেলে, এল এনগিদি, আন্দিলে ফেলুকোয়াও, জেজে স্মুটস- প্রথম টি-টোয়েন্টিতে একই সঙ্গে অভিষেক হয়েছিল পাঁচজনের। ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম সংস্করণে সব দলই কমবেশি নতুনদের বাজিয়ে দেখে, তবে বাস্তবতা বাংলাদেশকে টি-টোয়েন্টিতে সেই কাজে শেকলই যেন পরিয়ে রেখেছে।
টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মূল ব্যাটসম্যান এখন সাব্বির রহমান, সব দেশ মিলিয়ে গত বছর তাঁর চেয়ে বেশি রানই করেছেন মাত্র চারজন। সাব্বিরও এখন টেস্ট দলে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এমন নয়, বাংলাদেশ একদমই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেনি। সেই মুক্তার আলী থেকে গত বছর আবু হায়দার রনি, সাকলাইন সজীব, নুরুল হাসানসহ অনেককেই বাজিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক জায়গা পাকা করে নেওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি কেউই। বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টেও নতুনদের কেউ খুব বড় কিছু করতে পারেননি।
সত্যিটা হচ্ছে, টি-টোয়েন্টির ভাষা এখনও বাংলাদেশ পুরোপুরি বুঝে উঠতে পারেনি। প্রথম পাঁচ বছর তো ১৬টি ম্যাচের মধ্যে জিততে পেরেছিল মাত্র পাঁচটিতে। তবে দিনবদলের ইঙ্গিত মিলেছে গত বছরের এশিয়া কাপে এসে, দেশের মাটিতে টি-টোয়েন্টি সংস্করণের এশিয়া কাপে ফাইনালেও উঠে গিয়েছিল বাংলাদেশ। কিন্তু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপে যাবার পর যে কে সেই, মূল পর্ব থেকে সব ম্যাচ হেরেই বিদায় নিয়ে আসতে হয়েছে। নিউজিল্যান্ডের সঙ্গেও টি-টোয়েন্টি সিরিজে তিনটি ম্যাচে বাংলাদেশ আভাস দিয়েছে, এই সংস্করণে এখনও অনেক অনেক পথ পাড়ি দেওয়ার আছে। ওয়ানডেতে যেখানে বাংলাদেশ র্যাঙ্কিংয়ে সাতে আছে, ছয়ে থাকা শ্রীলঙ্কার ঘাড়ের ওপর নিঃশ্বাস ফেলছে; সেখানে টি-টোয়েন্টিতে পড়ে আছে দশে। এমনকি আফগানিস্তানও এখানে বাংলাদেশের ওপরে, ব্যবধান তাদের সঙ্গে নেহায়েত কমও নয়।
চাইলে বলতেই পারেন, অস্ট্রেলিয়া-দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য এসব পরীক্ষা নিরীক্ষার পথটা অনেক আগে থেকেই গড়ে দেওয়া। তাদের ক্রিকেট কাঠামো অনেক বেশি সুশৃঙ্খল, আলাদা আলাদা সংস্করণের জন্য খেলোয়াড়দের পাইপলাইনও অনেক লম্বা। কিন্তু বাংলাদেশে বাস্তবতা সেরকম নয়। টি-টোয়েন্টিতে বাংলাদেশের মূল ব্যাটসম্যান এখন সাব্বির রহমান, সব দেশ মিলিয়ে গত বছর তাঁর চেয়ে বেশি রানই করেছেন মাত্র চারজন। সাব্বিরও এখন টেস্ট দলে নাম লিখিয়ে ফেলেছেন। এমন নয়, বাংলাদেশ একদমই পরীক্ষা নিরীক্ষা করেনি। সেই মুক্তার আলী থেকে গত বছর আবু হায়দার রনি, সাকলাইন সজীব, নুরুল হাসানসহ অনেককেই বাজিয়ে দেখা হয়েছিল। কিন্তু ঠিক জায়গা পাকা করে নেওয়ার মতো কিছু করতে পারেননি কেউই। বিপিএলের মতো টুর্নামেন্টেও নতুনদের কেউ খুব বড় কিছু করতে পারেননি। মেহেদী মারুফ অবশ্য এই সংস্করণের জন্য নিজের দাবিটা জানিয়ে রেখেছেন, তবে বিপিএলের পরে অধারাবাহিকতায় এখনও তাঁর নামের পাশ থেকে প্রশ্নচিহ্নটা যায়নি। এবারের দলে তরুণ সাইফ উদ্দিনকে যা একটু বাজিয়ে দেখার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে। একজন পেস বোলিং অলরাউন্ডারের জন্য হন্যে হয়ে খোঁজ করছিল বাংলাদেশ, সাইফের সেই অপেক্ষার অবসান হবে কি না সময়ই বলে দেবে।
এখনও তাই টেস্ট-ওয়ানডের পরীক্ষিতদের ওপরেই ভরসা রাখতে হবে বাংলাদেশকে। এই বছর এর মধ্যেই পাঁচটি টেস্ট খেলে ফেলেছে বাংলাদেশ, সূচিতে কড়া নাড়ছে আরও বেশ কয়েকটি টেস্ট। সামনেই আবার ত্রিদেশীয় সিরিজ আর চ্যাম্পিয়নস ট্রফি। টি-টোয়েন্টির দিকে খুব বেশি মনযোগ তাই চাইলেও দেওয়ার উপায় নেই। শ্রীলঙ্কার সঙ্গে দুইটি টি-টোয়েন্টি হতে পারত নতুন কাউকে বাজিয়ে দেখার আরেকটি উপলক্ষ। টানা টেস্ট-ওয়ানডে খেলার ধকল থেকে অভিজ্ঞদের বিশ্রাম দেওয়ারও একটা সুযোগ হয়ে আসতে পারত। কিন্তু বাস্তবতা বলছে, এখনও সেই পথে হাঁটতে আরও সময় লাগবে বাংলাদেশের। টি-টোয়েন্টির ভাষাটাই তো এখনও বুঝে ওঠার অনেকদূর বাকি!