• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    টস জিতলে ব্যাটিং ?

    টস জিতলে ব্যাটিং ?    

    ভারতের সাথে টস জিতলে কি নেবেন মাশরাফি, প্রশ্নটা এখন কোটি টাকার। বাংলাদেশ অধিনায়কের কী নেওয়া উচিত, সেটিই ব্যবচ্ছেদ করার চেষ্টা করেছেন কায়েশ এস রহমান  

     

     

     

    টস নিয়ে কিংবদন্তি ব্যাটসম্যান ডব্লু জি গ্রেস একটা কথা বলেছিলেন, "টসে জিতে ব্যাটিং নাও। যদি মনে কোনো দ্বিধা থাকে তাহলে একটু ভাবতে পার। তারপর ব্যাটিং নাও। এরপরও যদি দ্বিধা থাকে, তাহলে কোনো সতীর্থের সঙ্গে আলোচনা করতে পার। তারপরও ব্যাটিং-ই নাও।"

     

    ১৯ তারিখ টসে যদি মহেন্দ্র সিং ধোনি জেতেন, তাহলে তো কথাই নেই। সেটা নিয়ে দুর্ভাবনারও কোনো কারণ নেই। যদি মাশরাফি জেতেন , তাহলে ব্যাটিং নেবেন না ফিল্ডিং করবেন ? যাই হোক, কোয়ার্টার ফাইনালে বাংলাদেশ টসে জিতলে কি নেবে, সেটা চিন্তা করতে গিয়ে আমি জেরবার হয়ে যাচ্ছি। ভাবনাটা একটু ভাগাভাগি করি সবার সাথে...

     

     

    ওয়ানডেতে টসে জিতে কি নেওয়া হয় সেটা নির্ভর করে মূলতঃ
    ক। ম্যাচের দিনের পিচের কন্ডিশন ও আবহাওয়া রিপোর্ট 
    খ। আনুষঙ্গিক কিছু ব্যাপার – যেমন পিচের স্বাভাবিক প্রকৃতি, প্রতিপক্ষ দলের শক্তিমত্তা, তারা চেজ করতে কতটা পারদর্শী, আলোচ্য ভেন্যুতে অনুষ্ঠিত সাম্প্রতিক ম্যাচের ফলাফল পর্যালোচনা, ডে-নাইট ম্যাচ ইত্যাদি।

     

     

    যেহেতু ম্যাচের দিন পিচের কন্ডিশন কেমন হবে সেটা এখনই বলা যাচ্ছে না, তাই এই বিষয়ে কোন কথা না বলি। বরং আনুষঙ্গিক ব্যাপারগুলো নিয়ে অনেক কথা বলার আছে –

     

     

    ১। এবারের বিশ্বকাপে মেলবোর্নে এখন পর্যন্ত ৩টি ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়েছে। ৩টি ম্যাচেই প্রথমে ব্যাটিং করা দল জিতেছে, এবং অনায়াসেই জিতেছে! এই ৩টির প্রথমটিতে ইংল্যান্ডের মরগ্যান টসে জিতে ফিল্ডিং নেয় এবং পরাজয় বরণ করে নেয়; কিন্তু পরবর্তী দুই ম্যাচের টসজয়ী ক্যাপ্টেনদ্বয় (যথাক্রমে ধোনী ও ম্যাথ্যুস) এই ভুল করেনি। টস জিতেছে, ব্যাটিং নিয়েছে, ম্যাচ জিতেছে!

     

     

    ২। প্রতিপক্ষ ভারতের ব্যাটিং লাইন-আপ অনেক শক্তিশালী এটা সন্দেহাতীতভাবেই প্রমাণিত। এরা প্রথমে ব্যাটিং করলে যেমন ৩৫০+ রান করতে সক্ষম, তেমনি ৩৫০+ রান তাড়া করতেও তারা সমান পারঙ্গম। সমশক্তির দঃ আফ্রিকা যেখানে প্রথমে ব্যাটিং করলে অবলীলায় ৪০০+ রান, অথচ রান তাড়া করতে গিয়ে তাদের ১৮০ ডিগ্রী আমূল পরিবর্তন! এই ধরণের দুর্বলতা ভারতের ব্যাটিংয়ে নেই বললেই চলে।

     

     

    তবে এবারের বিশ্বকাপে ভারতের রান তাড়া করার দূর্বলতা কিছুটা চোখে পড়েছে। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মামুলী স্কোরকে তাড়া করতে গিয়ে দেড়শ রানের মধ্যে তাদের পড়ে যায় ছয়টি উইকেট! আবার জিম্বাবুয়ের পলকা বোলিংয়ের বিরুদ্ধেও রান তাড়া করতে যেয়ে ভারতীয়দের টপ অর্ডার ধ্বসে পড়ে; রায়নার সহজ ক্যাচটা ধরতে পারলে ভারতের পরাজয় ছিল শুধুমাত্র সময়ের ব্যাপার। এই দুটো প্রেশার-লেস ম্যাচে রান তাড়া করতে গিয়ে ভারতের যে হতবিহ্বল অবস্থাটা চোখে পড়লো, কোয়ার্টার ফাইনালের মতো হেভিওয়েট ম্যাচে যে এর চাইতেও শোচনীয় অবস্থা হবে না, সে সম্ভাবনাকে কিন্তু উড়িয়ে দেওয়া যায় না।

     

     

    তারপরও স্বীকার করতেই হবে, ভারতীয়রা রান তাড়া করায় অন্য অনেক বড় দলের চাইতে অনেক বেশী পারদর্শী। গত বিশ্বকাপের ফাইনাল তার অনন্য একটি দৃষ্টান্ত; যদিও উপমহাদেশীয় উইকেটে ছিল, কিন্তু প্রেশারও ছিল পাহাড়সম। তাই যতই বড় বড় কথা বলি, সত্যি কথা হলো ভারতীয়দের রান তাড়া করার সামর্থ্যকে ফুঁ দিয়ে উড়িয়ে দেওয়াটা কোনভাবেই আসে না।

     

     

    ৩। তাহলে??? ......খুবই সহজ! মাশরাফিকে বুঝতে হবে নিজেদের শক্তিমত্তাটা কোথায়! আফগানিস্তান ও ইংল্যান্ডের বিরুদ্ধে চরম প্রেশারের দুই ম্যাচে আমরা ২৭০(+/-) রান নিয়ে জিততে সমর্থ হয়েছি। নিউজিল্যান্ডের বিরুদ্ধেও ২৯০ রান তো ডিফেন্ড করেই ফেলেছিলাম প্রায়! অপরদিকে শ্রীলঙ্কার বিরুদ্ধে মহাগুরুত্বপূর্ণ ম্যাচটিতে (এই মেলবোর্নেই) রান তাড়া করতে গিয়ে আমরা কিন্তু ধরাশায়ী।  সুতরাং আমাদের শক্তিমত্তা হচ্ছে রান তাড়ায় নয়, বরং রান ডিফেন্ড করায়!

     

     

    ৪। ব্যক্তিগতভাবে আমি মনে করি, আমাদের এই ব্যাটিং লাইন-আপ যেকোন টেস্ট-প্লেয়িং দলের বিরুদ্ধেই ৩২০(+/-) রান তাড়া করতে সক্ষম; কিন্তু টার্গেট যদি ৩৫০+ হয়, তাহলে সেটা তাড়া করা আমাদের পক্ষে খানিকটা অসম্ভবই বটে। গত বিশ্বকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ভারতের ৩৫০+ স্কোরের সৌজন্যে ম্যাচের ফার্স্ট-হাফেই আমরা টা-টা-বাই-বাই! আসন্ন কোয়ার্টার ফাইনালে এধরনের দুঃখজনক কিছু হোক, সেটা আমি কখনোই চাই না। বরং একটা ফাইটিং স্কোর (২৭০-২৮০ রান) করতে পারলে ম্যাচটাতে আমরা ভাল মতো টিকে থাকবো একেবারে শেষ মুহুর্ত পর্যন্ত।

     

    তাই দর্শকীয় দৃষ্টিকোন থেকে শেষ একটি কথা - লাঞ্চের পরে ‘ক্ষুধার্ত(Feed Me More)’ টাইগাররা দল বেঁধে রণহুঙ্কার দিয়ে প্রবেশ করছে মাঠে, তার চাইতে অপূর্ব দৃশ্য আর কী হতে পারে! এই অবিস্মরণীয় মুহুর্তটার স্বাক্ষী হওয়া চাই-ই চাই!