• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    'পক্ষপাতদুষ্ট' আম্পায়ারিংঃ সভাপতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান আইসিসির

    'পক্ষপাতদুষ্ট' আম্পায়ারিংঃ সভাপতির অভিযোগ প্রত্যাখ্যান আইসিসির    

    গতকালের কোয়ার্টার ফাইনালে ভারতের কাছে হেরে যাওয়ার ক্ষতটা বাংলাদেশের ক্রিকেটপ্রেমীদের অনেকদিনই পোড়াবে। হারটা স্বাভাবিকভাবে এলে পোড়ানোর প্রশ্নটাও হয়তো ভিন্নভাবে আসতো। কিন্তু ‘প্রায়’ সমগ্র বাংলাদেশের বিশ্বাস গতকালের ম্যাচে টাইগাররা হারে নি, তাঁদেরকে হারানো হয়েছে। পুরো ম্যাচটা যদি কেউ নিরপেক্ষ চোখেও দেখে থাকেন তবে তাঁর কাছেও এমনটা মনে হওয়ার একাধিক যৌক্তিক কারণ থাকবে। নিজেদের ক্রিকেট ইতিহাসের সবচেয়ে সম্ভাবনাময় বিশ্বকাপ যাত্রার এহেন পরিসমাপ্তি মেনে নিতে পারে নি বাংলাদেশ। সামাজিক গণমাধ্যমে থেকে শুরু করে অলিগলির চায়ের দোকান, সাধারণ দর্শক থেকে শুরু করে সাবেক ক্রিকেট তারকা...পক্ষপাতদুষ্ট আম্পায়ারিং নিয়ে ক্ষোভ ঝারছেন সবাই। সে তালিকায় বাদ পড়েন নি বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ড সভাপতি, এমনকি আইসিসির সভাপতিও!

     

    বিসিবি সভাপতি পর্যন্ত হয়তো বিষয়টা সীমার মধ্যেই থাকে। কিন্তু খোদ ক্রিকেটের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থাটির প্রধান যখন ম্যাচ অফিশিয়ালদের নৈতিকতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে বসেছেন তখন একটু নড়েচড়েই বসতে হয়েছে আইসিসিকে। গতকালের ম্যাচটি ‘পূর্ব-পরিকল্পিত’ ছিল এবং আম্পায়ারদ্বয় সে পরিকল্পনা বাস্তবায়নেই মাঠে নেমেছিলেন - আইসিসি সভাপতি ও বিসিবির সাবেক প্রধান আ হ ম মোস্তফা কামালের এমন মন্তব্যকে ‘দুর্ভাগ্যজনক’ বলে অভিহিত করেছেন সংস্থাটির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন।

     

    আইসিসির প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন

     

    গতকালের ম্যাচ শেষে মেলবোর্নে বাংলাদেশী সাংবাদিকদের সাথে আলাপকালে মোস্তফা কামাল ক্ষোভ চেপে রাখতে পারেন নি, “আম্পায়ারিংয়ে কোন মান ছিল না। দেখে মনে হচ্ছিল তাঁরা পূর্ব নির্ধারিত কোন ফলাফল বের করতে মাঠে নেমেছিল।”

     

    আম্পায়াররা ভুল করতেই পারে এমনটা স্বীকার করে আইসিসি সভাপতি প্রশ্ন রাখেন সেসব ভুল ইচ্ছাকৃত কিনা, “আমি পুরোপুরি নিশ্চিত হয়ে বলতে পারছি না যে এসব ভুল পরিকল্পিত ছিল। কিন্তু মনে হচ্ছিল সিদ্ধান্তগুলো ঠিক স্বচ্ছভাবে দেয়া হচ্ছে না। আসলে সেগুলো স্বাভাবিক ভুলের মাত্রা ছাড়িয়ে গিয়েছিল। একটা, দুইটা, তিনটা বা চারটা নয়...ডজনখানেক ভুল এবং সবক’টিই বাংলাদেশের বিপক্ষে! কিভাবে সম্ভব?”

     

    আইসিসি সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামাল

     

    কাগজেকলমে সংস্থাটির গুরুত্বপূর্ণ একটি পদে আসীন থাকায় তিনি এ ব্যাপারে কি ধরণের পদক্ষেপ নিতে পারেন তাও এ সময় উল্লেখ করেন, “আইসিসি খতিয়ে দেখবে সেসব ভুল ইচ্ছাকৃত কিনা।...আমার যা বলার আছে আমি তা পরবর্তী সভায় বলব। এমনকি আমি পদত্যাগও করতে পারি।”

     

    এ সময় তিনি আইসিসিকে ‘ইন্ডিয়ান ক্রিকেট কাউন্সিল’ অভিহিত করে বলেন, “আমি এমন সংগঠনের প্রতিনিধিত্ব করতে পারি না।”

     

    আইসিসি সভাপতির এমন বক্তব্যের পর সংস্থাটির তরফে দেয়া এক বিবৃতিতে প্রধান নির্বাহী ডেভ রিচার্ডসন বলেন, “মোস্তফা কামালের মন্তব্যগুলো আইসিসির নজরে এসেছে যেগুলো খুবই দুর্ভাগ্যজনক। তবে তিনি যা বলেছেন সবই তাঁর নিজস্ব বক্তব্য, আইসিসির নয়। আইসিসি সভাপতি হিসেবে ম্যাচ অফিশিয়ালদের সমালোচনায় তাঁর আরও সতর্ক হওয়া উচিৎ ছিল। এখানে সততা নিয়ে প্রশ্ন তোলার কোন সুযোগ নেই।”

     

    আম্পায়ারদের দেয়া যে সিদ্ধান্তটি সবচেয়ে বেশী আলোচনার জন্ম দিয়েছে সেটি ছিল রুবেলের একটি বলে রোহিত শর্মা ইমরুল কায়েসের তালুবন্দী হওয়ার পর আম্পায়াররা বলটিকে ‘নো’ কল করেন। অথচ টিভি রিপ্লেতে পরিষ্কার বোঝা যাচ্ছিল বলটা কোমরের নীচেই ছিল। এই প্রসঙ্গে আইসিসির তরফে রিচার্ডসনের ভাষ্য, “নো বলের সিদ্ধান্তটি ছিল ৫০-৫০। এখানে আম্পায়ারের সিদ্ধান্তই চূড়ান্ত এবং সেটার প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকা আবশ্যক।”

     

    আম্পায়ারদের ‘ষড়যন্ত্র’ বিষয়ে মোস্তফা কামালের বক্তব্য সরাসরি প্রত্যাখ্যান করে প্রধান নির্বাহী বলেন, “এমন অভিযোগ সম্পূর্ণ ভিত্তিহীন এবং দৃঢ়ভাবে প্রত্যাখ্যান করা হচ্ছে।”

     

    এদিকে ম্যাচ চলাকালে স্টেডিয়ামের বড় পর্দায় ভারতকে সমর্থনের আহ্বান জানিয়ে প্রদর্শিত বিজ্ঞাপনেরও সমালোচনা করেন মোস্তফা কামাল, “আমি আশ্চর্য হয়ে লক্ষ্য করলাম খেলা চলাকালীন বড় পর্দায় ভারতকে সমর্থনের বার্তা দেয়া হচ্ছে! দেখে মনে হচ্ছিল ভারত যে জিতবে এটা আগে থেকেই ঠিক করা। আমি এ ব্যাপারে আইসিসির প্রধান নির্বাহীর সাথে কথা বললাম। তিনি বললেন এটা ঠিক নয় এবং বন্ধ করা উচিৎ। অথচ তারপরও সেটা বন্ধ হল না। এসব তো খেলার জন্য ক্ষতিকর।"