• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    জন্মভূমিকে কাঁদালেন এলিয়ট!

    জন্মভূমিকে কাঁদালেন এলিয়ট!    

    পঁয়তাল্লিশ হাজার দর্শকের কলরোলে ম্যান অফ দা ম্যাচ গ্র্যান্ট এলিয়টের কথা শোনাটাই দুষ্কর হয়ে যাচ্ছিল। অকল্যান্ডের ইডেন পার্ক স্টেডিয়ামে যে দৃশ্যের অবতারণা হয়েছে একটু আগে তা রূপালি পর্দার কাহিনীকেও হার মানায়। মাঠে কাঁদছেন মরকেল, ডু প্লেসিরা। ওদিকে আতশবাজি পুড়ছে, একটি স্টেডিয়াম আর একটি জাতি আনন্দে মাতোয়ারা - প্রথমবারের মতো বিশ্বকাপ ক্রিকেটের ফাইনাল খেলবে তারা। অন্যদিকে বিশ্বের সেরা ওয়ান ডে ব্যাটসম্যান দাঁড়িয়ে আছেন বিষন্নতার প্রতিমূর্তি হয়ে, এত কাছে এসেও বিশ্বকাপ স্বপ্ন ভেঙ্গে চুরমার হয়ে গেল আবারো দক্ষিণ আফ্রিকার জন্য। নিয়তির কি পরিহাস, এই পরাজয়ের সবচেয়ে বড় ভূমিকা যে রেখেছেন, সেই গ্র্যান্ট এলিয়ট যে দক্ষিণ আফ্রিকারই সন্তান!

     

    নতুন ভাগ্যের সন্ধানে গ্র্যান্ট এলিয়ট ২০০১ সালে জোহানেসবার্গ থেকে পাড়ি জমান নিউজিল্যান্ডের ওয়েলিংটনে। ভাগ্যদেবী তাঁকে পুরষ্কৃত করেন ২০০৮ সালে, ইংল্যান্ডের বিপক্ষে হ্যামিল্টনের প্রথম টেস্টের ১৩ জনের দলে জায়গা করে নেন তিনি। ড্যানিয়েল ভেট্টোরি যখন বাই রানের মাধ্যমে এলিয়টকে স্ট্রাইক এনে দেন তখন কি তাঁর একবারও মাথায় উঁকি দিয়েছে এসব কথা? মনে হয় না, কারণ এর পরের বলেই ডেল স্টেইনকে লং অন দিয়ে ছক্কা মেরে ম্যাচ জেতানোর পর এলিয়টের গর্জন শুনেই বিশ্ব বুঝে নিলো, ইনি নিউজিল্যান্ডের এলিয়ট।

     

     

    এটা এমন একটা ম্যাচ যেখানে কেউ জিততে চায়নি। এমন একটা ম্যাচ যেখানে ক্রিকেটের সব সৌন্দর্য নেমে এসেছে ইডেন পার্কের সবুজ ঘাসে। স্কোরকার্ড বলবে এই ম্যাচে নিউজিল্যান্ড ৪ উইকেটে জিতেছে, কিন্তু আসলেই কি তাই ? এমন একটা ম্যাচের পর তো আসলে জিতেছে ক্রিকেটেই। ম্যাচশেষে এলিয়ট-স্টেইনের এই ছবিটা তো এবার বিশ্বকাপের স্মারক হয়েই থাকবে তাই।

     

     

    বৃষ্টি, নকআউট পর্ব- দক্ষিণ আফ্রিকার সব দুঃস্বপ্নের স্মৃতি যেন ফিরে ফিরে এসেছে অকল্যান্ডে। কিন্তু এই ম্যাচটা হারের জন্য এবি ডি ভিলিয়ার্স কি ভাগ্যকে দোষ দিতে পারেন ? গ্র্যান্ট এলিয়টের ঐ ক্যাচটা যদি বেহারডিয়েন নিতে পারতেন বা কোরি অ্যান্ডারসনকে যদি এবি ডি ভিলিয়ার্স রান আউট করতে পারতেন তাহলে হয়তো দক্ষিণ আফ্রিকাকে আবারও স্বপ্নভঙ্গের বেদনায় বিদীর্ণ হতে হয় না।

     

     

    তারপরও তো আশা ছিল। শেষ ওভার পর্যন্তও ম্যাচটা তো আফ্রিকার হাতেই ছিল। স্টেইনের প্রথম বলে ভেট্টোরি ব্যাটে লাগাতে পারলেন না, ১ রান হলো। এরপর এলিয়ট স্ট্রাইকে; আবারও এক রান। পরের বলটা ৪, এবার নিউজিল্যান্ডের দরকার ৩ বলে ৬ রান। আবারও ব্যাটে লাগাতে পারলেন না ভেট্টরি, সুযোগ পেয়েও স্টাম্পে লাগাতে পারলেন না স্টেইন। সমীকরণ এবার ২ বলে ৫ । পরের বলটা এলিয়ট পাঠিয়ে দিলেন গ্যালারিতে। মাঠের ৪৫ হাজার দর্শক তখন আবেগে দিশেহারা।

     

    ক্যারিয়ারে অনেক ইনিংস খেলেছেন এলিয়ট, মেরেছেন অনেক ছয়। কিন্তু স্টেইনকে মারা ছয়টা তাঁর তো বটেই, নিউজিল্যান্ডের ইতিহাসেরই সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। ৪০ বছর অপেক্ষার পর সাতবার সেমিফাইন্যাল খেলে এই প্রথম ফাইন্যালে উঠতে পারল, সেটা এলিয়টের হার না মানা ৮৪ রানের ইনিংসে ভর করে। দলকে জিতিয়ে মাঠ ছাড়ার জন্য ম্যান অব ম্যাচটা তো তারই প্রাপ্য।

     

     

    অথচ ব্যাট করতে নেমে দক্ষিণ আফ্রিকা মনে করিয়ে দিচ্ছিল, আজকে দিনটা তাদেরই হতে পারে। ফাফ ডু প্লেসি, ডি ভিলিয়ার্স মিলে বড় রানের দিকে নিয়ে যাচ্ছিলেন। ৩৮ ওভারে বৃষ্টি বন্ধ করে দেয় ম্যাচ, আবার শুরু হলে মাত্র পাঁচ ওভার ব্যাটিংয়ের সুযোগ পায় প্রোটিয়াসরা। ডেভিড মিলার এরপর ১৮ বলে ৪৯ করে দলকে নিয়ে যান ৪৩ ওভারে ২৮১ রানে। ডু প্লেসি করেন ৮২ আর ভিলিয়ার্স অপরাজিত ৬৫ রান। কোরি অ্যান্ডারসন তিনটি মহামূল্যবান উইকেট দখল করেন। ডার্কওয়াথ লুইস পদ্ধতিতে নিউজিল্যান্ডের লক্ষ্য দাঁড়ায় ৪৩ ওভারে ২৯৮।

     

     

    সেটাও একসময় ব্রেন্ডন ম্যাককালাম সহজেই টপকে যাবেন বলে মনে হচ্ছিল। ২৬ বলে ৫৯ রানের ইনিংস খেলে নিউজিল্যান্ডকে এনে দিয়েছিলেন উড়ন্ত সূচনা। কিন্তু ম্যাককালামের পর গাপটিল, উইলিয়ামসন, টেলর আউট হয়ে গেলে বিপাকে পড়ে যায় নিউজিল্যান্ড। সেখান থেকে অ্যান্ডারসনকে নিয়ে মহামূল্যবান এক জয় এনে দিয়েছেন এলিয়ট।