• আইসিসি বিশ্বকাপ ২০১৫
  • " />

     

    কিউইর প্রথম না ক্যাঙ্গারুর পঞ্চক?

    কিউইর প্রথম না ক্যাঙ্গারুর পঞ্চক?    

    নিউজিল্যান্ড ক্রিকেটের সর্বকালের সেরাদের একজনই বলা হয় তাঁকে। দুরারোগ্য জটিল ব্যাধিতে আক্রান্ত হয়ে প্রহর গুনছেন মৃত্যুর। ৫২ বছর খুব বেশী বয়স নয়। কিন্তু এই বয়সেই তাঁকে লিখতে হল মর্মস্পর্শী এক খোলা চিঠি। ব্ল্যাকক্যাপদের কাছে লেখা সেই চিঠিতে তিনি জানিয়েছেন, সম্ভবত এটাই হতে যাচ্ছে মাঠে বসে তাঁর শেষ ক্রিকেট উপভোগ। হরিষে বিষাদ মাখানো এমন উপলক্ষ্যে কায়মনোবাক্যে তাঁর চাওয়া উত্তরসূরিদের হাতে বিশ্বকাপ।

     

     

    আবেগের জবাব সবসময় চাইলেও আবেগ দিয়ে দেয়া যায় না। ম্যাককালামদের যে মনভাঙ্গা গান গাওয়ার কোন সুযোগ নেই! ভিতর তাই যত ভাংচুরই চলুক, কিউই কাপ্তান কণ্ঠে প্রত্যয় ঢেলে জানালেন...মার্টিন ক্রোর জন্যই ম্যাচটা তাঁরা জিততে চান, বিশ্বকাপ জিততে চান!

     

     

    ওদিকে কাল মেলবোর্নের মাঠ থেকেই একদিনের ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন অজিদের অধিনায়ক মাইকেল ক্লার্ক। এক যুগের ক্যারিয়ারে ইতি টানবেন ঘরের মাঠের বিশ্বকাপ ফাইনাল খেলে। টিম অস্ট্রেলিয়াও তাই উন্মুখ হয়ে আছে প্রিয় দলপতিকে বিশ্বসেরার জয়মাল্যে বিদায় দিতে।

     

     

    তাসমান সাগর ব্যবধানের দুই প্রতিবেশী দেশের আগামীকালের দ্বৈরথটা তাই কেবলই একটা বিশ্বকাপ ফাইনাল নয়। অনেক আবেগের সাতকাহন লিখবার বিশাল এক উপলক্ষ। অস্ট্রেলিয়ার পঞ্চম কিংবা নিউজিল্যান্ডের প্রথম...মেলবোর্নের রবিবার রাতটা যে রঙেই বর্ণিল হোক, ২২ গজের উইকেটে অবধারিতভাবেই উন্মোচন হবে ক্রিকেট পুরাণের নতুন এক অধ্যায়।

     

    দেখে মনে হতে পারে দু' জনে মিলেই সাজাচ্ছেন রণপরিকল্পনা !

     

    এ পর্যন্ত খেলা টুর্নামেন্টের সবক’টি ম্যাচ জিতে অপরাজিত দল হিসেবেই ফাইনালে উঠে এসেছে নিউজিল্যান্ড। বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ার হোঁচট রয়েছে একটি ম্যাচে, এই নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষেই...তাঁদের অকল্যান্ডে। রুদ্ধশ্বাস সে ম্যাচে অজিদের বিপক্ষে ১ উইকেটের জয় তুলে নেয় কিউইরা।

     

     

    এই একটি জায়গায় কাল ম্যাককালামরা ক্লার্কদের চেয়ে এগিয়ে থেকেই মাঠে নামছে বটে। তবে পিছিয়ে থাকার মতো জায়গাও নেহায়েত কম নয়! পুরো আসর নিজেদের মাঠে খেলে কালই প্রথমবারের মতো বাইরের মাঠে নামবে নিউজিল্যান্ড। নিজেদের ছোট মাঠ, গ্যালারিভর্তি নিজেদের দর্শক, সহায়ক উইকেট...সব পিছনে রেখে কাল নামতে হবে মেলবোর্নের বিশাল মাঠে, ৯০ হাজার দর্শকের সামনে যাদের সিংহভাগই হবে অস্ট্রেলিয়ান, উইকেটেও মিলবে না বাড়তি সুবিধে! হুট করে এমন বৈপরীত্য! কিউইরা সামলে নিতে পারবে তো?

     

    উইলিয়ামসনরা নিজেদের সেরাটা দিয়েই চেষ্টা করবেন...

     

    এমন প্রশ্ন যখন ক্রিকেট দুনিয়ায় ঘুরে ফিরছে তখন বোদ্ধামহলই আর বাদ থাকবে কেন? সাবেক অজি তারকা ম্যাথু হেইডেন, ভারতীয় অধিনায়ক মহেন্দ্র সিং ধোনি, অস্ট্রেলিয়ার ওপেনার অ্যারণ ফিঞ্চ, সাবেক ইংলিশ কাপ্তান মাইকেল ভন...এমসিজির ‘সীমাহীন’ সীমানা দড়ি ফাইনালের বড় নিয়ামক হবে বলে বিশ্বাস তাঁদের প্রত্যেকেরই!

     

     

    কিন্তু সবার ভাবখানা এমন যে নিউজিল্যান্ড বুঝি কোনকালে দেশের বাইরে, বড় কোন মাঠে খেলে নি! দলের অন্যতম সেরা পেসার টিম সাউদি যেমন বলছেন তাঁদের সবারই বড় বড় মাঠে, অগুনিত প্রতিপক্ষ দর্শকের সামনে, বন্ধুর উইকেটে অনেক অনেক ম্যাচ খেলার অভিজ্ঞতা আছে। মেলবোর্নের এতো সব ‘প্রতিকূলতা’য় তাই থোড়াই ‘কেয়ার’ তাঁর! ‘বিশাল মেলবোর্ন’ তত্ত্ব টিপ্পনি কাটতে ছাড়ছে না নিউজিল্যান্ডের সমর্থকরাও! বুদ্ধিদীপ্ত, হাস্যরসাত্মক মন্তব্যে ফাইনালের আগে কথার লড়াইটা বেশ ভালোই জমে উঠেছে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে।

     

     

    শব্দযুদ্ধের গল্প থেকে মাঠের লড়াইয়ে আসা যাক। বরাবরের মতোই মেলবোর্নে টস একটা গুরুত্বপূর্ণ ফ্যাক্টর হতে পারে। বিদায়ী বিশ্বকাপে এমসিজিতে অনুষ্ঠিত প্রতিটা ম্যাচেই আগে ব্যাট করা দল বড় ব্যবধানে জিতেছে। উল্লেখ করা প্রয়োজন প্রথমে ব্যাট করা প্রতিটা দলই তিনশ’ রানের কোঠা অতিক্রম করেছে এবং এখানে তিন শতাধিক রান তাড়া করে জেতার রেকর্ড বিশ্বকাপ কেন, মাঠের ইতিহাসেই নেই।

     

     

    বল সীমানাছাড়া করাটা এখানে সবসময়ই কঠিন। তবে ব্যাটিং সহায়ক উইকেটে বোলারদের জন্য বাউন্স সুবিধে ছাড়া সেভাবে আর কিছুই থাকে না। সুইং, সিম...কিউই পেস আক্রমণের অন্যতম দুই অনুষঙ্গ মেলবোর্নে কোন সুবিধে না পাওয়ার সম্ভাবনাই প্রবল।

     

    অনুশীলনে গিলক্রিস্টের মনোযোগী ছাত্র স্মিথ। শিরোপা হাত করার কৌশলই বুঝি শেখাচ্ছেন তিনবারের বিশ্বকাপজয়ী!

     

    টস জেতা দল আগে ব্যাট করে বড় সংগ্রহ গড়তে চাইবে এটা যেমন সত্য, উইকেটের শুরুর দিকের গতি কাজে লাগিয়ে প্রথমে বোলিং করা দলও বসে যেতে পারে চালকের আসনে।

     

     

    তবে মেলবোর্নের সামগ্রিক অতীত কিন্তু বলে পরে ব্যাট করে জেতা দলের সংখ্যাটাই ভারী। আবার এই দু’ দল মেলবোর্নে সর্বশেষ মুখোমুখি হয়েছিল ২০০৯ সালে, নিউজিল্যান্ড যেটা জিতে নেয় ৬ উইকেটে।

     

     

    টপ অর্ডার ব্যাটিং আর পেস বোলিংয়ে দু’ দলের মোকাবেলাটা সমানে সমানই হবে। বোল্ট-সাউদিদের বিপরীতে ওয়ার্নার, ফিঞ্চ, স্মিথ কিংবা স্টার্ক, জনসন, হ্যাজেলউডদের বিপরীতে গাপ্টিল, ম্যাককালাম, উইলিয়ামসন...এসব দ্বৈরথে যে পক্ষই এগিয়ে থাকবে, ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে যাবে তাঁদের হাতেই। আর এ দুই বিভাগে সমান তালে লড়াই ম্যাচের ভাগ্য তুলে দেবে মিডল অর্ডার অলরাউন্ডার ম্যাক্সওয়েল-ফকনারদের সাথে অ্যান্ডারসন-ভেট্টরিদের লড়াইয়ে।

     

     

    অধিনায়করা যা বলছেন…

     

     

    “আবেগ নয়, বড় ম্যাচ আর বড় টুর্নামেন্ট জিততে প্রয়োজন দক্ষতা। আগামীকালের ম্যাচও এর ব্যতিক্রম নয়। নিজেদের সেরাটা খেললে জয় আসবেই।” মাইকেল ক্লার্ক, অস্ট্রেলিয়া।

     

     

    “টুর্নামেন্টজুড়ে আমরা দারুণ ক্রিকেট খেলে এসেছি। ঘরে-বাইরে অভূতপূর্ব জনসমর্থন আর দুনিয়াজোড়া ক্রিকেট দর্শকের ভালোবাসা আকৃষ্ট করতে পেরেছি। কাল যে বাইরের দুনিয়ার অধিকাংশ ক্রিকেটপ্রেমী অস্ট্রেলিয়ার উপর নিউজিল্যান্ডকেই বিজয়ী দেখতে চাইবে এটা বোধহয় গোপন করার কিছু নেই!” -ব্র্যান্ডন ম্যাককালাম, নিউজিল্যান্ড।