মইনের ইতিহাসে লর্ডসে ইংল্যান্ডের জয়
ইংল্যান্ড ৪৫৮ ও ২৩৩
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৬১ ও ১১৯ (৩৬.৪ ওভার)
ফলঃ ইংল্যান্ড ২১১ রানে জয়ী
বামহাতে স্টাম্প। ডানহাতে ক্যাপটা খুলে নিয়ে দর্শক অভিবাদনের জবাব দিচ্ছেন মইন আলি। পেছনে স্টাম্প হাতে জো রুট, টেলিভিশন ক্যামেরা তাক করছে তার দিকে। আরও পেছনে অ্যালেস্টার কুক। এক ফ্রেমেই যেন লর্ডস টেস্টকে বর্ণনা করে ফেলা যায়! রুটের অধিনায়কত্বে প্রথম টেস্টেই জিতলো ইংল্যান্ড, তাতে তার নিজের ব্যাটিংয়ের সঙ্গে অনেক বড় ভূমিকা মইনের। আর সদ্য সাবেক হওয়া কুকও আছেন, তার ফিফটির ভূমিকাও তো আছে খানিকটা!
ইংল্যান্ড দলে মইন আলির ভূমিকা নিয়ে অবশ্য কম পরীক্ষা নিরীক্ষা হয়নি। কখনও তিনি অলরাউন্ডার, কখনও স্পিনার, কখনও শুধুই ব্যাটসম্যান। নিজের অলরাউন্ডার তকমাটাই বোধহয় বেশি ভালবাসেন ইংল্যান্ডের 'ভয়ঙ্কর দাড়িওয়ালা'। নাইলে কি আর গড়েন ইতিহাস! ইতিহাসের প্রথম ক্রিকেটার হিসেবে একই টেস্টে ১০ উইকেট, ৭০-এর অধিক রান, সঙ্গে ২টি ক্যাচ নিয়েছেন মইন। তার স্পিন তোপে চতুর্থ দিনেই লর্ডস টেস্ট জিতে গেছে ইংল্যান্ড।
ডিন এলগার, টেনডা বাভুমা, কুইন্টন ডি কক। প্রথম ইনিংসের তিন ফিফটি করা ব্যাটসম্যানই মারতে গিয়ে উইকেট দিয়েছেন মইনকে। এলগার জোরের ওপর খেলতে গিয়ে দিয়েছেন ফিরতি ক্যাচ, ডি ককের ব্যাটে বল লেগে প্যাডে আঘাত করার পর ফিরে এসে ভেঙ্গে দিয়েছে স্টাম্প, ফ্ল্যাট ডেলিভারিতে পুল করতে গিয়ে অফস্টাম্প ছত্রখান বাভুমার। ডি ব্রুইন আউট হয়েছেন লর্ডসের এই উইকেটের সেই রহস্যের ফাঁদে পড়েই। টার্ন করবে কি করবে না, এটা ভাবতে ভাবতে পেছনে গেছেন, ব্যাটে চুমু লেগে স্লিপে গেছে ক্যাচ। মহারাজ অবশ্য টার্ন বুঝেও খেলতে পারেননি, ধোঁকা দিয়েছে স্বল্প বাউন্স। এ উইকেটেই পাঁচটা হয়ে গেছে মইনের, লর্ডসের অনার্স বোর্ডে উঠে গেছে নামটাও। রাবাদার উইকেট দিয়ে ‘টেন-ফার’ হয়ে গেছে মইনের।
আফ্রিকার যাওয়া আসার খেলা শুরু হয়েছিল অবশ্য অ্যান্ডারসনের একটা বাজে বলে। লেগস্টাম্প দিয়ে বেরিয়ে যাওয়া বল ছুঁয়ে গেছে কুনের ব্যাট, অসাধারণ এক ক্যাচ নিয়েছেন বেয়ারস্টো। মইন এরপর নিয়েছেন ডুমিনির ক্যাচ, উডের বলে সোজা মিড-উইকেটে তার হাতেই মেরেছিলেন তিনি! পেছনে গিয়ে খেলতে চেয়েছিলেন আমলা, ডওসনের বলে পড়েছেন এলবিডাব্লিউর ফাঁদে। রিভিউ নিয়েও বাঁচতে পারেননি। দুইটা ছয় মারার পর আরেকটা মারতে গিয়েছিলেন মরকেল, ডিপ মিডউইকেটে জেনিংসের হাতে ক্যাচ দিয়ে শেষ করেছেন নিজের ইনিংস, সঙ্গে আফ্রিকারও।
অথচ সকালটা কী আশাতেই না শুরু হয়েছিল প্রোটিয়াদের! প্রথম সেশনে ৬৩ রান, ইংল্যান্ডের উইকেট গেছে ৭টি! আগের দিনের অপরাজিত কুক ও ব্যালান্সকে ফিরিয়েছেন মরকেল। আগেরদিন স্টোকসের ডানদিকে ঝাঁপিয়ে পড়ে নেয়া ক্যাচে আউট হয়েছিলেন ডি কক, এবার বাভুমার সেরকম এক ক্যাচে যেতে হয়েছে কুককে। ব্যালান্সের আউটের ডেলিভারিটা ছিল মরকেলের ভাল বোলিংয়ের উপযুক্ত পুরষ্কার। অফস্টাম্প রক্ষা করতে গিয়ে সিম মুভমেন্টে বেসামাল হয়ে গেছেন ব্যালান্স, ডি ককের কাছে ক্যাচটাই দিয়েছেন শুধু। ইংলিশ অধিনায়ক রুটকে টার্নে কাবু করেছিলেন মহারাজ, তখনও যদি আফ্রিকা জানতো, এই টার্নই কাল হয়ে দাঁড়াবে তাদের!
আগের ইনিংসের মতো এবারও স্টোকসও শিকার রাবাদার, তার উদযাপনটাও হলো দেখার মতো। দেখার মতো হয়েছিল বেয়ারস্টোর ইনিংসটাও। প্রোটিয়াদের বোলিং তোপে বুক চিতিয়ে দাঁড়িয়েছিলেন তিনিই। ৭৬ বলে ৬ চারে ৫১ করার পর স্লগ করতে গিয়ে স্টাম্পড হয়েছেন মহারাজের বলে। তাঁকে সঙ্গ দিয়েছিলেন উড, ২৮ রান করে রাবাদার বলে তিনি বোল্ড হয়েছেন বেয়ারস্টোর আগেই। প্রথম ইনিংসে ইংল্যান্ডের যে ‘লেজ’ ঝাপটা মেরেছিল প্রোটিয়াদের, দ্বিতীয় ইনিংসে সেটাই ছিল যেন নির্বিষ। ডওসন, ব্রড শুন্যতেই ফিরেছেন, অ্যান্ডারসনকেও অপরাজিত থাকতে হয়েছে ওই শূন্যতেই।
তবে তার আগেই আফ্রিকাকে চাপে ফেলার মতো লিডটা পেয়ে গেছে ইংল্যান্ড। সে চাপে যে চতুর্থ দিনেই গুটিয়ে পড়বে এলগারের দল, সেটা কে জানতো!
মইন কি জানতেন?