এবার চারদিনে জিতল দক্ষিণ আফ্রিকা
সংক্ষিপ্ত স্কোর, ট্রেন্টব্রিজ টেস্ট
দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৩৫ ও ৩৪৩/৯(ডিক্লে.)
ইংল্যান্ড ২০৫ ও ১৩৩
ফলঃ দক্ষিণ আফ্রিকা ৩৪০ রানে জয়ী
একটু পরপরই বিষণ্ণ মুখটা ভেসে উঠছে টেলিভিশন ক্যামেরায়। অধিনায়কত্বের চরম বাস্তবতাটা দ্বিতীয় টেস্টে এসেই বুঝে গেলেন জো রুট। প্রথম টেস্টে চারদিনেই আফ্রিকাকে দুমড়ে-মুচড়ে দিয়ে জিতেছিল তার দল। আর এ টেস্টেই ফিরে আসা আফ্রিকান অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি পেলেন আরও অসাধারণ এক জয়। এবার ইংল্যান্ডকে চারদিনে শুধু দুমড়ে-মুচড়ে নয়, রীতিমতো গুঁড়িয়ে দিয়েছে তার দল!
জিততে হলে ইংল্যান্ডকে গড়তে হতো ইতিহাস। কাল শেষ বিকেলে অবশ্য ইতিহাস গড়া নয়, শুধু লড়াইয়ে টিকে ছিল ইংল্যান্ড। আজ ইংল্যান্ডকে কোনও সুযোগই দেয়নি দক্ষিণ আফ্রিকা, লর্ডসে বড় ব্যবধানে হারা দলটা ফিরে এসেছে অসাধারণভাবে।
গতকালকের চার ওভার যেন মাটি কামড়ে পড়ে ছিলেন দুই ইংলিশ ওপেনার, যাব যাব করেও যাননি। আজ অবশ্য দিনের দ্বিতীয় ওভারেই গেলেন জেনিংস, বলের লাইনে না গিয়ে পড়ে ছিলেন ক্রিজ আঁকড়ে। ফিল্যান্ডারের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে উড়ে গেল অফস্টাম্প। ছয় ওভার পরে বেসামাল হয়ে পড়লেন ব্যালান্সও। আম্পায়ার সাইমন ফ্রাই প্রথমে আউট দেননি, দক্ষিণ আফ্রিকান অধিনায়ক ফ্যাফ ডু প্লেসি রিভিউটা নিলেন একেবারে শেষ মুহুর্তে গিয়ে। সফলতা তাতেই। ফিল্যান্ডার পেলেন দ্বিতীয়, প্রথম টেস্টে ৫৪ রান করা ব্যালান্স এবার সাকুল্যে করলেন ৩১।
সাবেক অধিনায়ক কুক ওপাশে থাকলেন, আসলেন নতুন অধিনায়ক রুট। অসম্ভবের পথের যাত্রায় দুজন একসঙ্গে থাকলেন ৩২ বল, করলেন ২৭। অলিভিয়ারকে পরপর দুই চার মেরে ট্রেন্টব্রিজে যেন একটু স্বস্তির বাতাস বইয়ে দিলেন কুক, তবে সেটা বেশীক্ষণ স্থায়ী আর হলো কই! ক্রিস মরিসের ইয়র্কারে স্তব্ধ হয়ে গেলেন রুট, স্তব্ধ হয়ে গেল ট্রেন্টব্রিজও! ২০ বলে ৮ রান, রুট করলেন এতটুকুই।
একদিকে অসহায় দাঁড়িয়ে থাকা কুকও গেলেন ওই মরিসের বলেই। শর্ট বলে শট খেলে ফেললেন আগেই, তার গ্লাভসে লেগে বল গেল পেছনে, ডান-গ্লাভস দিয়ে অসাধারণ ক্যাচ নিলেন ডি কক। ৭৬ বলে ৪২, ইংল্যান্ডের দ্বিতীয় ইনিংসে সর্বোচ্চ ইনিংসের খেতাবটাই শুধু প্রাপ্তি কুকের।
বেয়ারস্টোও ফিরলেন তাড়াতাড়িই। তাড়াহুড়ো করে মহারাজকে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন মিড-অনে। পরিস্থিতি বিবেচনায় এরকম শট খেলা রীতিমতো পাপের পর্যায়েই পড়ে! ১০০ রানের অনেক আগেই অর্ধেক উইকেট শেষ হয়ে গেল ইংল্যান্ডের।
মহারাজের একই ওভারে স্টোকসের দুইটা বা মইনের তিনটা চারেও ইংল্যান্ডের শেষটা বিলম্বিত হলো না খুব একটা। মইন অবশ্য তিন বলের এক নাটিকার মাধ্যমেই গেলেন। প্রথমে সাইমন ফ্রাই কট-বিহাইন্ড দিলেন, মইন রিভিউ নিলেন সঙ্গে সঙ্গেই। বেঁচেও গেলেন। পরের বলে রান-আউটের আবেদন থেকেও বাঁচলেন। তবে তারপরের বলেই মহারাজকে যেন ‘আলগা’ সুইপ করতে গেলেন, স্কয়ার লেগে শুধু ক্যাচই দিলেন।
জয়ের অপেক্ষায় থাকা দক্ষিণ আফ্রিকাকে আর বেশিক্ষণ অপেক্ষা করিয়ে রাখলেন না ইংলিশ ব্যাটসম্যানরা। শট ‘চেক’ করতে গিয়ে ফিল্যান্ডারকে ফিরতি ক্যাচ দিলেন স্টোকস। অনেক বড় শট খেলতে গিয়ে ডিপ-মিডউইকেটে অনেক সহজ ক্যাচ দিলেন ব্রড, মহারাজের বলে। মরকেল নিলেন ক্যাচ।
পরপর দুই বলে এরপর এ টেস্টে নিজের প্রথম ও দ্বিতীয় উইকেটে পেলেন কাগিসো রাবাদার বদলি খেলতে নামা ডুয়ান অলিভিয়ার। উড শর্ট বলে স্লিপে ক্যাচ দিলেন, অফস্টাম্পের বাইরের বলে অ্যান্ডারসন ক্যাচ দিলেন ডি কককে।
পাঁচজন বোলারের সবাই পেলেন একাধিক উইকেট, এক মরকেল ছাড়া! অথচ মরকেলের একদিকের অসাধারণ বোলিংয়ের সুবিধা পেলেন অন্যান্যরা। তবে নিজেদের এমন জয়ে মরকেলও বোধহয় ভুলে গেছেন সেই হতাশা!