• লা লিগা
  • " />

     

    ভাবিয়াই করিয়াছেন নেইমার?

    ভাবিয়াই করিয়াছেন নেইমার?    

    মার্চ ২০১৭, ক্যাম্প ন্যু। খেলার ৮৮ মিনিটেও চ্যাম্পিয়নস লিগের পরবর্তী রাউন্ডে যেতে পিএসজির বিপক্ষে বার্সেলোনার প্রয়োজন ৩ গোল! ফ্রিকিক থেকে এক গোল শোধ দিলেন নেইমার। আফসোসটাই বোধ হয় বাড়ালেন আরও! এর ৩ মিনিট পর এবার পেনাল্টি পেয়ে গেল বার্সা। নেইমারের সেই কিকে গোলও এলো। তবুও জিততে হলে চাই আরও একটি। তার আগে একের পর এক এক ব্যর্থ আক্রমণে জয়ের আশা ছেড়েই দিয়েছিল বার্সা। শরীরী ভাষা অন্তত তেমনটাই বলছিল। ব্যতিক্রম কেবল নেইমার। ম্যাচের শেষ দিকে এসে, অমন স্নায়ুক্ষয়ী মুহুর্তে তিনি যেন সবার চেয়ে চাঙ্গা। ৯৫ মিনিটে মাঝমাঠ থেকে নেইমারের বাঁ পায়ে বাড়ানো লং পাসে সার্জি রবার্তোর পায়ের ছোঁয়ায় বল জড়াতেই সবাই দৌড় দিলেন দিগ্বিদিক! ইতিহাস হয়ে গেছে ততক্ষণে।

    ম্যাচের পরদিন স্প্যানিশ পত্রিকা এএস লিখেছিল ‘নেইমার প্রমাণ করেছে সে শুধুমাত্র মেসির উত্তরাধিকারীর চাইতেই বেশি কিছু। যখন কেউ বিশ্বাস করতে পারেনি, সে করেছিল। যে মুহুর্তে সবাই হাল ছেড়ে দিয়েছিল। সেই জন্ম দিয়েছিল নতুন ইতিহাসের।’ সত্যিই তো, এক নেইমারের কাছেই তো হার মেনেছিল প্যারিসের ক্লাবটি। 'ম্যাচ জেতার এক ভাগ সুযোগ থাকলেও সেটিও নিতে হবে'- নেইমারই তো ভীষণ অসম্ভবে আস্থা রাখতে বলেছিলেন সবাইকে। 

    এর পাঁচ মাসের মাথায়ই প্যারিসের সেই ক্লাবটিতেই যোগ দেবেন নেইমার। এমনটা বোধহয় খুব বেশিদিন আগে নেইমার নিজেও ভাবতে পারেননি। গেল জানুয়ারিতেই তো নতুন চুক্তি সই করেছিলেন বার্সেলোনার সাথে। এক মাস আগেও জানিয়েছিলেন আগামী মৌসুমই তাঁর ক্যারিয়ারের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হতে যাচ্ছে। এরপরই সব কেমন পাল্টে গেল! পিএসজির বিশাল অঙ্কের প্রস্তাবে ধন্দেই পড়ে গেলেন বোধ হয়। তারপর দলবদল নিয়ে যতো নাটক হল, তা বোধ হয় গেম অফ থ্রন্সের লেখক জর্জ আর আর মার্টিনের পান্ডুলিপিকেও হার মানাবে।



    নাটকের শেষটা হল পিএসজিতে যোগ দিয়েই। নতুন বিশ্বরেকর্ড গড়ে। বিশ্বের সবচেয়ে দামী খেলোয়াড় হয়ে। আর সর্বোচ্চ বেতন পাওয়া খেলোয়াড়দের ছোট তালিকার প্রথম তিনে এসে। ফুটবলীয় দৃষ্টিকোণ বাদ দিলেও, বিশ্বের সবচেয়ে দামী ফুটবলার হওয়ার গৌরব কে হারাতে চাইবেন? মোটা অঙ্কের বেতনই বা ক’জন প্রত্যাখ্যান করতে চাইবেন? হয়ত অনেকেই পারবেন। কিন্তু দিনশেষে বার্সা থেকে নেইমারের পিএসজিতে যোগ দেয়ার পেছনে কারণ হিসেবে শুধুমাত্র টাকার অঙ্কটা দেখলে তা হবে মারাত্মক ভুল! প্রশ্ন আসতে পারে কেন? উত্তর খুঁজতে একটু পেছনের দিকেই যাওয়া যাক।

    পেশাদার ফুটবল মাত্র শুরু করেছেন নেইমার। ততোদিনে পৃথিবীর অষ্টম আশ্চর্য ইন্টারনেট ঘরে ঘরে হানা দিতে শুরু করেছে! ব্রাজিলিয়ান লিগে খেললেও ইউটিউবের কল্যাণে নেইমারের নাম জেনে নিতে খুব বেশি অসুবিধা হয়নি ফুটবল ফ্যানদের। মেধার পরিচয় দিয়ে ততদিনে তিনি ব্রাজিলের উঠতি তারকা; সেই খ্যাতি নিয়েই গিয়েছিলেন অনুর্ধ্ব-১৭ বিশ্বকাপ খেলতে। ততদিনে নেইমারকে দলে নেয়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছে ইউরোপের রিয়াল মাদ্রিদ, চেলসির মতো ক্লাব।

    সেবার গ্রুপ পর্ব থেকেই বাদ পড়েছিল ব্রাজিল। নেইমার চাইলে অবশ্য তখনও সান্তোস ছেড়ে ইউরোপের জাঁকজমক লিগে পাড়ি জমাতে পারতেন। কিন্তু নেইমার তা করলেন না। প্রতিভাধর কিশোর বিশ্বকে পরিচয় করিয়ে দিলেন নিজের বিচক্ষণ গুণটির সাথেও।

    বিশ্বকাপ খেলার সময়ই নেইমার বুঝতে পেরেছিলেন আন্তর্জাতিক ফুটবলের সাথে ব্রাজিলিয়ান লিগের আকাশ-পাতালের ফারাকটা। ইউরোপে শীর্ষ পর্যায়ে খেলতে আরও সময় প্রয়োজন তাঁর। নিজেকে প্রস্তুত করতে সময় নিলেন তিনি। তাড়াহুড়ো না করে নিজের ক্যারিয়ার গড়তে বেছে নিলেন ‘স্টেপ বাই স্টেপ’ পন্থা। 

    ২১ বছর বয়সে বার্সেলোনায় যোগ দিলেন। সেখানে তখন লিওনেল মেসির রাজত্ব। রোনালদিনহো বটবৃক্ষের ছায়ার মতো হয়ে ছিলেন মেসির শুরুর দিকটায়। এবার সেই ‘লেগাসি’ হাত বদলের সময়। রোনালদিনহোর জায়গায় মেসি। শিক্ষানবিশ এখন নেইমার। বার্সেলোনায় নেইমারের যোগ দেয়ার পেছনে দলে মেসি থাকাটা বেশ বড় ভূমিকাই পালন করেছিল।

    ছোটবেলায় রবিনহোর মতো হতে চাইতেন নেইমার। রবিনহোও ব্রাজিল ছেড়েছিলেন এই বয়সেই। কিন্তু নিজের সম্ভাবনাময় ক্যারিয়ারটা অনেক বেশি অনুজ্জ্বল থেকে গেছে তাঁর নিজের নেয়া কয়েকটি সিদ্ধান্তের দায়েই। ‘গুরুর’ ক্যারিয়ার থেকেও শিক্ষা নিয়েছিলেন নেইমার। সিদ্ধান্ত নেয়ার বেলা তাই সবসময়ই সতর্ক তিনি।

    মেসি, নেইমার একসাথে? ২০১৩ এর দলবদলের মৌসুমে অনেকেই ভ্রু কুঁচকেছিলেন। ইয়োহান ক্রুইফও বিরোধীতা করেছিলেন। কিন্তু মৌসুম শুরু কয়েকদিনের মাঝেই সব প্রশ্নের জবাব নেইমার নিজেই দিলেন। স্পেনে মানিয়ে নিতে ওই বছরটা সময় নিয়েছিলেন ঠিকই। কিন্তু মেসির সাথে নেইমার মিললে যে ইতিহাস রচনা হতে পারে সেই ইঙ্গিত দিয়ে রেখেছিলেন।

    “মেসি আর নেইমার? এক বনে দুই বাঘ কীভাবে থাকে?”- সন্দেহ প্রকাশ করেছিলেন খোদ ইয়োফান ক্রুইফ নিজেই। কিন্তু ডাচ কিংবদন্তীর সন্দেহকে প্রথম মৌসুমেই ভুল প্রমাণ করেছিলেন নেইমার। পরের মৌসুমে মেসি, সুয়ারেজদের সাথে মিলে জুটি গড়েছিলেন। বিখ্যাত ‘এমএসএন’। নেইমার পিএসজিতে যাওয়ায় ফুটবলের কোনো ক্ষতি হয়ে থাকলে সেটা হল এমএসএন ত্রয়ীর ভাঙনে। দৃষ্টিনন্দন, অনিন্দ্য সুন্দর। নাকি ভয়ঙ্কর সুন্দর? মাত্র তিন বছর একসাথে খেলেছেন তারা। অথচ ফুটবল ইতিহাসে ঢুকে গেছেন এরই মাঝে।

    লুইস এনরিকের বার্সার হয়ে দ্বিতীয় মৌসুমে এসে জিতলেন লিগ ও চ্যাম্পিয়নস লিগ। ট্রেবলটাও পূর্ণ হয়েছিল সেবার। ইউরোপিয়ান ফুটবলে প্রথম কোনো স্প্যানিশ ক্লাব যখন ট্রেবল জেতে, নেইমার তখন ১৮ বছর বয়সী এক তরুণ। টিভি সেটের সামনে বসে যে ক্লাবকে সেদিন উদযাপন করতে দেখেছিলেন, আজ সেই জার্সি পরে, সেই মাঠেই হাজির হয়েছেন তিনি।

    ধাপে ধাপে নেয়া সিদ্ধান্তগুলোর প্রতিফলন পেতে নেইমারকে অপেক্ষা করতে হয়নি বেশি। ব্যালন ডি’অর এর তিন জনের ছোট তালিকায়ও ঠাঁই হল সেবারই প্রথম। তৃতীয় হয়ে শেষ করেছিলেন। তবে প্রথম হওয়ার স্বপ্নটা বোধ হয় সেদিন থেকেই লালন করতে শুরু করলেন। রোমারিও জিতেছিলেন ১৯৯৪-তে। ১৯৯৬, ১৯৯৭ এর পরে ২০০৩ সালেও ফিফার বর্ষসেরা ফুটবলার হয়েছিলেন রোনালদো। ২০০৪ এর পর ২০০৫-ও রোনালদিনহোর দখলে। সবশেষ ২০০৭-এ কাকা জিতেছিলেন মিলানের হয়ে। ১৩ বছরের মাঝে সাতবারই বর্ষসেরা ব্রাজিলিয়ান কেউ। এরপর কেটে গেছে দশ বছর। ফিফার বর্ষসেরায় নেই কোনো ব্রাজিলিয়ানের নাম। ব্রাজিলের ফুটবল ইতিহাসে নিজেকে অন্যতম সেরা দাবি করতেও তো রোনালদো, রোনালদিনহোদের উচ্চতায় উঠতে হবে নেইমারকে। একটা ফিফা বর্ষসেরার খেতাব নিয়ে।


     


    ট্রেবল জয়ের পরের মৌসুমে লিগ জিতলেও গত মৌসুমে সাফল্য ধরা দেয়নি বার্সার হয়ে। কিন্তু ২৫ বছর বয়সে এসে নেইমার কাটিয়েছেন ইউরোপিয়ান ফুটবলে নিজের সেরা সময়টা। মেসির অবর্তমানে দলের হাল ধরেছিলেন শক্ত হাতেই। এই বয়সে মেসি, রোনালদোরা ফিফা বর্ষসেরার খেতাব পেয়ে নিজেকে বিশ্বসেরা দাবি করতে পারতেন।

    ব্রাজিলের হয়ে নেইমারের খেলার ধরনটাই আতশ কাঁচের নিচে ফেলা যাক। মেসি যেমন বার্সার হয়ে নিজের ইচ্ছেমতো খেলার স্বাধীনতা পান। ব্রাজিলের নেইমারও তেমন। বার্সার নেইমারের চেয়ে আরও সপ্রতিভ। বেশি আকর্ষণীয়। এই বয়সেই জাতীয় দলের হয়ে করে ফেলেছেন ৫২ গোল। কোচদের কাছ থেকে 'ফ্রি রোলে' খেলার ছাড়পত্র পাওয়ার মতো খুব বেশি সৌভাগ্যবান খেলোয়াড় নেই ফুটবলে। মেসি, রোনালদো, নেইমারদের মতো হাতে গোণা আর কয়েকজন আছেন কেবল। জাতীয় দলে যে স্বাধীনতাটা ভোগ করেন নেইমার, ক্লাবে সেই সুযোগ নেই। এক দলে তো আর দুজনকে 'স্বাধীন' করে দেয়া যায় না! তাই সম্ভাব্যতার হিসেব বলছে ব্রাজিলের চেয়ে বার্সার জার্সি গায়েই বরং নিষ্প্রভ ম্যাচ বেশি খেলবেন নেইমার। বাস্তবতাও তো সম্ভাব্যতার পক্ষে রায় দিচ্ছে। ধরুন, কোনো এক ম্যাচে তার নির্দিষ্ট জায়গায় প্রতিপক্ষের বিপক্ষে খুব একটা সুবিধা করতে পারছেন না নেইমার। সেদিন হয়ত পুরো ম্যাচে নিজের খোলস ছেড়ে বের হওয়ারই সুযোগ পেলেন না। রইলেন নিজের ছায়া হয়ে। কিন্তু ব্রাজিল দলে এরকম পরিস্থিতিতে জায়গা বদলে ফেলার সুযোগ রয়েছে তার। দলের কৌশলেও আসতে পারে পরিবর্তন। সেটাও হয় নেইমারকে ঘিরেই। বার্সায় থেকে গেলে হয়ত এমন সুবিধাটা তিনিও এক সময় ভোগ করতে পারতেন! কিন্তু ২৫ বছর বয়সে ক্যারিয়ার গড়ার মোক্ষম সময়ে অপেক্ষা করতে চাইবেন কেন তিনি? 

    মেসি, নেইমারদের মতো বিশ্বসেরা ফুটবলার হওয়ার যোগ্যতাটা যে নেইমারের আছে- তা নিয়ে বিতর্ক জুড়ে দেয়ার মতো ফুটবলবোদ্ধা কমই আছেন। খেলার মাঠে পূর্ণ স্বাধীনতা পেলে নেইমার কী করে দেখাতে পারেন তার প্রমাণও আছে। তাঁকে ঘিরেই গড়ে উঠুক দলের খেলার ছকটা, এমনটা তো তিনি চাইতেই পারেন! অন্যকে সাহায্য করার জন্য ক্যারিয়ারের সোনালী সময় ব্যয় করবেন কেন তিনি? যতোই মেসি তার বন্ধু হোন; পেশাদার ফুটবলে, পেশাদারিত্বের কাছে এসব সম্পর্ক তো আসলে নস্যিই।

    পিএসজিই কেন? প্রশ্ন তুলতে পারেন। জবাব হতে পারে, পিএসজি ছাড়া আর কে? ২২২ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে খেলোয়াড় কেনার ‘সক্ষমতা’ বা ‘পাগলামি’- এই দুইয়ের সমন্বয় কেবল পিএসজিই তো করে দেখাল। এতো দাম দিয়ে যে খেলোয়াড় কেনা যায়, তা তো অজানাই ছিল সাতদিন আগেও।

    ফ্রেঞ্চ লিগে প্রতিদ্বন্দ্বিতা ইউরোপের অন্যান্য নামকরা লিগের চেয়ে কম বটে। নেইমারকে ছাড়াও এতোদিন লিগ ওয়ান জিততে খুব একটা দুর্ভোগ পোহাতে হয়নি পিএসজিকে। লিগ নয়, কাতারি প্রতিষ্ঠান পাখির চোখ করেছে ইউরোপ সেরার মুকুট, চ্যাম্পিয়নস লিগ। নেইমারের সাথে তাদের চুক্তিটা পাঁচ বছরের। এই সময়ে নেইমার পিএসজিকে একটি চ্যাম্পিয়নস লিগ শিরোপা এনে দিতে পারলেও ঢুকে যাবেন ইতিহাসে। শিরোপার সংখ্যাটা কখনোই মুখ্য নয়। তাহলে আর ম্যারাডোনার সাথে পেলের তুলনাটা অন্তত আসত না।  

    পেলে-ম্যারডোনার নামের সাথে জড়িয়ে থাকে বিশ্বকাপ। পরের বছর বিশ্বকাপটাও তাই মাথায় রাখতে হয়, নেইমারের সিদ্ধান্ত বিচার করতে। নতুন দলে তিনি ছাড়াও আছেন আরও চার ব্রাজিলিয়ান। ২০০২ এর পর থেকে বিশ্বকাপ জয়ী দলের খেলোয়াড়ের নামগুলো একবার দেখুন। প্রতিবারই কোনো একটা নির্দিষ্ট ক্লাবের খেলোয়াড়রাই বড় ভূমিকাটা পালন করেছে জাতীয় দলের হয়ে বিশ্বকাপ জিততে। আর ফ্রেঞ্চ লিগের প্রতিদ্বন্দ্বীতা কম মানে, নেইমারেরও মূল লক্ষ্য থাকবে চ্যাম্পিয়নস লিগ জয়।    

    লিওনেল মেসি বার্সায় নিজেকে যে উচ্চতায় নিয়ে গেছেন সেটা টপকে যাওয়া যে কোনো ফুটবলারের জন্যই প্রায় অসাধ্য। আর্জেন্টাইনের ছায়াতলেই তাই হয়ত কাটত আরও কয়েক বছর। সেটাই বা নেইমার চাইবেন কেন? সান্তোস থেকে এসেছিলেন ইউরোপের অন্যতম সেরা ক্লাবে। সেখানে মেসি, জাভি, সুয়ারেজ, ইনিয়েস্তাদের সান্নিধ্যে শিখেছেন অনেককিছুই। নিজের মেধার সাথে অর্জন করা অভিজ্ঞতার প্রতিফলন ঘটাতে তারপর বেছে নিয়েছেন নতুন চ্যালেঞ্জ। সাহসী সিদ্ধান্ত নিতে পারার জন্য প্রশংসাটা নেইমারের প্রাপ্যই।

    মেসির সাথে খেলতে পারাটা সৌভাগ্যেরই ব্যাপার। নিজের কাজটাও হয়ত সহজ হয়ে যায় অনেকটা। তার মতো আর কারো সাথে নিজের ক্যারিয়ারে হয়ত এক দলে খেলা হবে না নেইমারের। পিএসজিতে যোগ দেয়ার পর জানিয়েছেন নেইমার নিজেই। রোনালদো নামে যেমন মানুষ রিয়াল মাদ্রিদ বোঝে, মেসির নামে বার্সেলোন, নেইমারের নামেও তেমন তার দল পরিচয় পাক। নেইমার হয়ত চেয়েছিলেন এটুকুই।

    বয়স বাড়াটা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া। তবুও শিশুকাল থেকে স্বাধীনতা ভোগের কি এক চরম নেশায় এক লাফে বড় হয়ে যেতে চাই আমরা। তারপর তারুণ্য পেরিয়ে যৌবনে পা দিয়ে একদিন হুট করেই বুঝে ফেলি, বড় হয়ে গেছি আমরা। ধাপে ধাপে, ক্রমান্বয়ে নিজের ক্যারিয়ারের সিদ্ধান্তগুলো নেইমার নিয়েছিলেন একটা স্বপ্নের পেছনে ছুটতে গিয়ে। সাও পাওলোর বিখ্যাত ফাভেলার কোনো এক ঘরে, টিভি সেটের সামনে বসে আর রাস্তায় ফুটবলে খেলে। তারপর তারুণ্য নিয়ে এসেছিলেন বার্সেলোনায়। একদিন হুট করেই হয়ত বুঝতে পেরেছিলেন বড় হয়ে গেছেন এবার। আর কারও সাহায্যের দরকার নেই। এরপরের সিদ্ধান্তগুলো তারই প্রতিফলন। সেটা কবে? খুব সম্ভবত পিএসজিকে হারানো সেই ম্যাচেই।