• লা লিগা
  • " />

     

    দলবদল-হাটের দশ কাহিনি

    দলবদল-হাটের দশ কাহিনি    

    ইদের দিনগুলো আশা করি ভালোই কাটছে আপনার। গরুর হাটের মতো কয়েকদিন আগেই ফুরিয়েছে ইউরোপের দলবদলের হাটও! তিন মাসেরও বেশি সময় ধরে চলা এবারের গ্রীষ্মের দলবদলের মৌসুমটা ছিল বাকি সবগুলোর চেয়ে একটু আলাদা। এবারের বেশ কিছু চুক্তি আসলে ফুটবলের চেহারাটাই পাল্টে দিয়েছে চিরদিনের জন্য।

    গরু আর দলবদলের হাটের বেলা শেষ হলেও, আশা করছি ইদ এখনও চলছে আপনার! তার সাথে বাড়তি একটু রঙ যোগ করতেই চলুন চোখ বুলিয়ে আসি এবারের দলবদলের মৌসুমে সেরা দশ ঘটনার দিকে...

    ১০. বার্সেলোনার যতো দ্বিধা...

    এবারের দলবদলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি উচ্চারিত নাম বার্সেলোনা। সবচেয়ে বেশি প্রিন্ট করা নাম বার্সেলোনা। সবচেয়ে বেশি টাইপ করা নামও তাই।

    কিন্তু বার্সেলোনাময় দলবদলের মৌসুমটা কেবল তাদের নিজেদের জন্যই বোধ হয় ভালো গেল না! শুরুটা কিন্তু ছিল অন্যরকম। জুনের শুরু থেকেই মার্কো ভেরাত্তির ব্যাপারে শোনা গেল তাদের আগ্রহের কথা। কিন্তু সেই জল গড়াল বহুদূর। ভেরাত্তিকে এজেন্ট পর্যন্ত বদলাতে হল। কিন্তু থেকে গেলেন প্যারিসেই।

    পিএসজির ঘর ফাঁকা কী করবে বার্সা! উল্টো পিএসজিই হানা দিয়ে বসল বার্সার ‘সুখের সংসারে’। পরের মাসেই ফুটবল দলবদলের চিত্র পাল্টে দেয়া চুক্তিতে নেইমার যোগ দিলেন পিএসজিতে। এরপর থেকেই মূলত শুরু হল বার্সার সব দ্বিধা-বিপত্তি।




    নেইমারের জায়গায় কাকে নেবে তারা? উসমান ডেম্বেলের নাম শোনা গিয়েছিল আগেই। বরুশিয়া ডর্টমুন্ড তখন দাবি করেছিল ৬০ মিলিয়ন ইউরোর মতো। নেইমারকে বিক্রি করে পাওয়া ২২২ মিলিয়ন ইউরোর খবরে যেন বেঁকে বসল তারা। ওদিকে কুতিনহোর জন্যে একের পর এক চেষ্টা চালিয়েও ব্যর্থ হচ্ছে তারা। নিস মিডফিল্ডার সেরির সাথে তো চুক্তির টেবিল পর্যন্ত গিয়েও ফেরত আসল তারা! ডেডলাইন ডেতে শোনা গেল ডি মারিয়ার নামও।

    শেষে সেই উসমান ডেম্বেলেকে নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হল বার্সাকে। কিনতে হল ট্রান্সফারের দ্বিতীয় সর্বোচ্চ রেকর্ড গড়ে। ২০ বছর বয়সী অপরিণত আর অপ্রমাণিত এক উইঙ্গারের জন্য ক্লাব রেকর্ড গড়াটা শেষ পর্যন্ত সুখকর হবে কি না, তা তো সময়ই বলে দেবে। তবে দলবদলের মৌসুমে এতো খারাপ সময় বোধ কখনও পার করতে হয়নি বার্সাকে।  



    ৯. চেলসিতে যেতে মানা

    ডেডলাইন ডে তে চেলসিতে যোগ দেয়ার জন্য নাকি মেডিকেল পরীক্ষা পর্যন্ত দিতে গিয়েছিলেন রস বার্কলি। ইংলিশ মিডফিল্ডার সেখানেই মত বদলেছেন। চেলসিকে না করে দিয়ে থেকে গেছেন এভারটনেই।

    অথচ ক্লাব ছাড়ার জন্য উঠে পড়ে লেগেছিলেন মৌসুম শুরুর আগে থেকেই। টটেনহামই তার ব্যাপারে সবচেয়ে বেশি আগ্রহ দেখিয়েছিল। কিন্তু লন্ডনের আরেক ক্লাব বেশি অঙ্কের টাকা প্রস্তাব করায় সেখানেই তাকে দিতে চেয়েছিল এভারটন।

    বার্কলি শেষ দিনে 'না' করেছেন চেলসিকে। তার আগে আরও অন্তত তিনজন ফুটবলার আশা দেখিয়েও আন্তোনিও কন্তেকে টপকে অন্য দলে যোগ দিয়েছে। অ্যালেক্স অক্সলেড চেম্বারলাইন তো ‘পল্টি’ মেরে যোগ দিয়েছেন লিভারপুলে। এই তালিকায় আছেন রোমেলু লুকাকুও। সাবেক চেলসি খেলোয়াড় নিজেই আর ফিরে যেতে চাননি লন্ডনের ক্লাবটিতে। গুঞ্জন আছে শেষদিনে ফার্নান্দো লরেন্তেও ফাঁকি দিয়েছেন চেলসিকে! পছন্দ করেছেন লন্ডনের আরেক ক্লাব, টটেনহামকে।



    ৮. ‘সে কুয়েদা’- আর্সেন ওয়েঙ্গার সংস্করণ

    পিকের সেই ইন্টারনেট ব্রেক করা ‘সে কুয়েদা’ ক্যাপশন শেষ পর্যন্ত কাজে আসেনি বার্সেলোনার জন্য। আর্সেন ওয়েঙ্গার অবশ্য পিকের মতো কিছু পোস্ট করেননি। তবে শেষদিকে এসে দল খালি হওয়ার শঙ্কা জেগেছিল আর্সেনালে। এই যাত্রায় রক্ষা করেছেন ওয়েঙ্গার নিজেই।

    স্কাই স্পোর্টস, বিবিসি, গার্ডিয়ানের একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে দলবদলের শেষদিনে আর্সেনাল ছাড়ার কথা ছিল অ্যালেক্সিস সানচেজের। কিন্তু তার বদলি না পেয়ে আর্সেন ওয়েঙ্গার  ছাড়তে চাননি সানচেজকে। চিলিয়ান উইঙ্গারের সাথে আর্সেনালের চুক্তির মেয়াদ আছে এক বছরের কম সময়। চাইলেই চড়া দামে বিক্রি করতে পারতেন। বিশেষ করে পরের মৌসুমে সানচেজ ফ্রি এজেন্ট হয়ে যাওয়ার শঙ্কা থাকায় বেছে নিতে পারতেন অন্য কোন উপায়! কিন্তু এই ক্ষেত্রে নিজের জেদটা ভালোভাবেই কাজে লাগিয়েছেন ওয়েঙ্গার! নিজ গুণে ধরে রেখেছেন ক্লাবের সেরা খেলোয়াড়কে।   
     


    ৭. চায়না থেকে পলিনহো!



    দলবদলের বেশ কিছু চুক্তির ব্যবচ্ছেদ করা আসলে দায় হয়ে যায়! বেন্টনারের জুভেন্টাস যাত্রা অথবা কার্লোস তেভেজের ওয়েস্টহামে যোগ দেয়া- এসব ঘটনার পেছনের কারণ বোধ হয় ব্যখ্যাতীত। তবে এমন ঘটনা অহরহ ঘটে না। কিন্তু এই গ্রীষ্মের দলবদলটা যে বার্সেলোনাময়। চমকটাও তাই বার্সারই দেয়া।

    চায়নিজ লিগের ক্লাব গুয়াংঝু এভারগ্রান্দে থেকে পলিনহোকে দলে ভেড়াতে লেগেছে ৪০ মিলিয়ন ইউরো। কেন পলিনহো? এই প্রশ্নের জবাব কেবল দিতে পারবেন পলিনহো নিজেই। মাঠের খেলায়। আর যদি ব্যর্থ হন তাহলে এই চুক্তিটি যে গুগল সার্চের ‘উইয়ার্ড মোস্ট ফুটবল ট্রান্সফার’ এর তালিকায় বেশ উপরের দিকেই থাকবে তা নিশ্চিত করেই বলা যায়।



    ৬. মোরাতা না লুকাকু?

    রোমেলু লুকাকু- ধারনা করা হচ্ছিল চেলসির এই মৌসুমের প্রথম ও প্রধান লক্ষ্য বেলজিয়ান স্ট্রাইকারই। চেলসির আঁতুড়ঘরেই প্রিমিয়ার লিগ ফুটবলে হাতেখড়ি লুকাকুর। আর ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের লক্ষ্য ছিল আলভারো মোরাতা। হোসে মরিনহোর অধীনেই রিয়ালের অভিষেকটা হয়েছিল স্প্যানিশ স্ট্রাইকারের। ইউনাইটেড ম্যানেজারও প্রস্তুত ছিলেন রিয়াল মাদ্রিদের চাহিদা মেটাতে।

    কিন্তু শেষ পর্যন্ত সবাইকে অবাক করে দিয়ে ঘটল উল্টোটা। ম্যান ইউনাইটেডের টাকা যথেষ্ট হল না মোরাতার জন্য। মোরাতার বদলে এভারটন থেকে রোমেলু লুকাকুকে দলে ভেড়ালেন মরিনহো। আর পরে মোরাতা গেলেন চেলসিতে।



    ৫. গার্দিওলার ডিফেন্ডার বিলাস

    গতবার জন স্টোনসকে দলে ভিড়িয়েছিলেন ডিফেন্ডার কেনার রেকর্ড গড়ে। এবার নিজেই সেই রেকর্ড ভাংলেন। কাইল ওয়াকারকে ম্যান সিটিতে নিয়ে এসে। তার কয়েকদিন আবার সেই রেকর্ডও ভেঙেছেন গার্দিওলা! বেঞ্জামিন মেন্দির জন্য ৫৪ মিলিয়ন ইউরো খরচ করে! বিশ্বের সবচেয়ে দামী রক্ষণভাগ এখন পেপ গার্দিওলার ম্যানচেস্টার সিটিরই।

    তবে নিজের ডিফেন্ডারদের নিয়ে এখনও বোধ হয় খুশি নন স্প্যানিশ ম্যানেজার। ডেডলাইন ডে তে বহু চেষ্টা করেও সাবেক ম্যানচেস্টার ইউনাইটেড সেন্টারব্যাক জনি ইভান্সকে দলে ভেড়াতে পারেননি তিনি।

    শুধুমাত্র ডিফেন্ডারদের দামের কল্যাণেই তাই ম্যানচেস্টার সিটি এবারের দলবদলের মৌসুমে সবচেয়ে বেশি খরুচে ক্লাব! তাদের সাথে অবশ্য আরও এক ক্লাব আছে শীর্ষস্থানে। ‘ইউ নো হু’। প্যারিস সেন্ট জার্মেই।
     


    ৪. ওয়েইন রুনি টু এভারটন



    ম্যানচেস্টার ইউনাইটেডের নামের সাথে ওয়েইন রুনি জড়িয়ে গিয়েছিলেন অঙ্গাঙ্গিভাবে। কিন্তু বয়সটাও হয়ে গিয়েছে ৩১, আর দলে জায়গাটাও পাকা নয়। ক্লাব ছাড়াটাই বোধ হয় ছিল একমাত্র সমাধান। দলবদলের মৌসুমে প্রায় প্রতিবারই এমন কোনো কিংবদন্তীকে পাড়ি জমাতে হয় নতুন ঠিকানায়।

    তবে রুনি আসলে বেছে নিয়েছেন নিজের পুরনো ক্লাবকেই। এভারটন থেকে এসেছিলেন। আবার ফিরে গেছেন সেখানেই। ১৩ বছর পর!   



    ৩. ওয়েল ডান, জিজু!

    দলবদলের চমকগুলোর বেশির ভাগ রিয়াল মাদ্রিদের কাছ থেকে আসাটা নিয়মই ছিল। সেই রীতিটাই ভেঙে দিলেন রিয়াল কোচ জিনেদিন জিদান। হামেশ রদ্রিগেজ, আলভারো মোরাতাদের ছেড়ে দিলেও- নতুন কোনো তারকা ভেড়ানোর চেয়ে বরং নজর দিয়েছেন তরুণ খেলোয়াড়দের দিকেই। চড়া দামের এই যুগেও মাত্র ১৫ মিলিয়ন ইউরো দিয়ে দলে ভিড়িয়েছেন দানি সেবায়োসকে। ১৯ বছর বয়সী থিও হার্নান্দেজ এসেছেন নগর প্রতিদ্বন্দ্বী অ্যাটলেটিকোর ঘর থেকে। কেবল মাত্র তারকা খেলোয়াড় কিনেই যে ফুটবল বিশ্বে ছড়ি ঘোরানো যায় না- সেটিই যেন আরও একবার প্রমাণ করতে চাইছেন জিদান।



    ২. মিলানের নতুন দিনের মিছিল

    নতুন মালিক পক্ষ এসেছিল মিলানের নতুন দিনের ঘোষণা দিয়ে। দলবদলের মৌসুম শুরু হতেই আদা-জল খেয়ে মাঠেও নেমে গিয়েছিল এসি মিলান। এবার সবমিলিয়ে মোট ১৩ জন নতুন খেলোয়াড় দলে ভিড়িয়েছে তারা। অর্থাৎ চাইলেই নতুনদের দিয়ে আরেকটা দলও বানিয়ে ফেলতে পারেন মিলান ম্যানেজার।  



    তবে সবচেয়ে চমকপ্রদ চুক্তি ছিল জুভেন্টাস থেকে লিওনার্দি বনুচ্চির এসি মিলানে যোগ দেয়া। আপাতত চ্যাম্পিয়নস লিগে জায়গা না হলেও খেলোয়াড় ভেড়াতে তেমন বেগ পেতে হয়নি মিলানকে। সবচেয়ে বেশি খরচ করা ক্লাবের তালিকায় ম্যানসিটি, পিএসজি, বার্সেলোনার পরই আছে তারা।



    ১. ‘ফ্রম প্যারিস, উইথ মানি’



    জুলাইয়ে যখন প্রথমবারের মতো নেইমারের সাথে পিএসজির নাম জড়িয়ে খবর শোনা গেল- তখন হেসেই উড়িয়ে দিয়েছিলেন অনেকে। কিন্তু সময়ের সাথেই গুঞ্জন ডাল পালা মেলে। ওদিকে বার্সা প্রেসিডেন্টও জানিয়ে দেন নেইমারের জন্য ২২২ মিলিয়ন দেয়ার ক্ষমতা নেই কোনো ক্লাবের। এই মন্তব্য করে পিএসজির আর্থিক শক্তিমত্তাকে খাটোই করেছিলেন তিনি।

    হোসে মারিয়া বার্তামেউইয়ের সেই ভুল ভাঙতে বেশিদিন সময় লাগেনি। সম্ভবত দলবদলের ইতিহাসে এতো বেশি রঙ বদলের নাটক আগে দেখেনি কেউই। নাটকের শেষ ছত্রে ২২২ মিলিয়ন ইউরো বার্সার দাবি অনুযায়ী একবারেই পরিশোধ করে নেইমারকে নিজেদের করে নিয়েছে পিএসজি।

    এই চুক্তির কয়েকদিন পরই ডেম্বেলে কিনতেও প্রায় দেড়শ মিলিয়ন ইউরো পর্যন্ত দাম দিতে হয়েছে বার্সাকে। ফুটবল দলবদলের চিত্রটা রাতারাতিই বদলে দিয়েছে পিএসজি।

    চমকের শেষ অবশ্য এখানেই নয়। নেইমারের পর কিলিয়ান এমবাপ্পেকে দলে নিয়েছে তারা। রিয়াল মাদ্রিদের প্রস্তাবিত ১৬০ মিলিয়ন ইউরোও ধোপে টেকেনি পিএসজির কাছে। আপাতত ধারে হলেও, এক বছর পরই ১৮০ মিলিয়ন ইউরোতে পাকাপাকিভাবে পিএসজি খেলোয়াড় হয়ে যাবেন এমবাপ্পে।