হেরাথ রোমাঞ্চে শ্রীলঙ্কার নাটকীয় জয়
চতুর্থ দিনশেষে
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৪১৯ অল-আউট, ১৫৪.৫ ওভার (চান্ডিমাল ১৫৫*, করুনারত্নে ৯৩, ডিকভেলা ৮৩, আব্বাস ৩/৭৫, ইয়াসির ৩/১২০) ও ২য় ইনিংস ১৩৮ অল-আউট, ৬৬.৫ ওভার (ডিকভেলা ৪০*, সিলভা ২৫, ইয়াসির ৫/৫১, আব্বাস ২/২১)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস ৪২২ অল-আউট, ১৬২.৩ ওভার (আজহার ৮৫, হারিস ৭৮, মাসুদ ৫৯, আসলাম ৫১, হেরাথ ৫/৯৩, লাকমাল ২/৪২, প্রদীপ ২/৭৭) ও ২য় ইনিংস ১১৪ অল-আউট, ৪৭.৪ ওভার (হারিস ৩৪, শফিক ২০, হেরাথ ৬/৪৩, পেরেরা ৩/৪৬)
ফল : শ্রীলঙ্কা ২১ রানে জয়ী
ইয়াসির শাহ ক্যাচ দিলেন দিলরুয়ান পেরেরার বলে, স্টাম্পও তুলে ফেললেন নিরোশান ডিকভেলা। দিগ্বিবিদিক ছুটছিলেন সবাই, কী মাঠে, কী স্ট্যান্ডে! কিন্তু বেরসিক রিপ্লে দেখিয়ে বসলো, পেরেরার পা ছিল লাইনের ওপরে!
খানিক বাদে রঙ্গনা হেরাথের বলে মোহাম্মদ আব্বাসকে এলবিডাব্লিউ দিলেন নাইজেল লং, আব্বাস নিলেন রিভিউ। লং থার্ড আম্পায়ারকে যে সঙ্কেত দিলেন সেটা কোনও টিভির আকার নয়, নিশ্চিতভাবেই কোনও জায়ান্ট স্ক্রিনের। বল ট্র্যাকিং আবার ডানহাতি ব্যাটসম্যানের বদলে শুরুতে দেখালো বাঁহাতি ব্যাটসম্যানের জন্য, অফস্টাম্পের বদলে তাই সেখানে বল পড়লো লেগস্টাম্পের বাইরে! সে ভুল শুধরে যেতে সময় লাগলো না বেশি, শ্রীলঙ্কা উল্লাসে মাতলো আরেকবার!
রঙ্গনা হেরাথ ম্যাচে দশ উইকেট নিলেন ১১ বার, প্রথম বোলার হিসেবে পাকিস্তানের সঙ্গে নিলেন ১০০ উইকেট, প্রথম বাঁহাতি স্পিনার হিসেবে নিলেন ৪০০ উইকেট!
প্রথম টেস্ট জিতলো শ্রীলঙ্কা, ১৩৫ রানের পুঁজি নিয়ে তারা পাকিস্তানকে আটকে দিয়েছে ১১৪ রানেই।
আবুধাবিতে আগেরদিনই ডাক দিচ্ছিল রোমাঞ্চ। সেই চিরায়ত সুন্দর টেস্ট ক্রিকেটের পঞ্চম দিনের অনিন্দ্য রোমাঞ্চ। সে রোমাঞ্চ পূর্ণ হলো ষোলকলায়। সে রোমাঞ্চ ভরিয়ে তুললেন স্পিনাররা।
আগেরদিনের স্কোরের সঙ্গে আর ৬৯ রান যোগ করেছিল শ্রীলঙ্কা, ৬ উইকেটে। প্রথম আঘাত ছিল মোহাম্মদ আব্বাসের, আগের দিনের দুই অপরাজিত ব্যাটসম্যান কুশাল মেন্ডিস ও সুরাঙ্গা লাকমালকে ফিরিয়ে। এরপরের সবটাই ইয়াসিরময়, এই লেগস্পিনার পেলেন আরেকবার ইনিংসে ৫ উইকেট। তবে অপরাজিত থাকলেন ডিলভেলা, ৪০ রান করে। শুধু গুরুত্বপূর্ণ নয়, মহাগুরুত্বপূর্ণ ৪০টি রান! আর ইয়াসিরের বোলিং দেখে নিশ্চয়ই হাত নিশপিশ করছিল হেরাথ বা দিলরুয়ান পেরেরার। আবুধাবির উইকেট যে স্পিনারদের হাতছানি দিচ্ছিল শুধু!
পাকিস্তানের শুরুটা হলো গোলমেলে, ১৬ রানের মাঝেই নেই সামি আসলাম, শান মাসুদ, আজহার আলি, প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা তিন ব্যাটসম্যান। হেরাথ, লাকমাল, পেরেরা মিলে নিলেন তিনটি উইকেট। এরপর শুধুই স্পিন। বড় বড় টার্ন, আর্মার, অনিয়মিত বাউন্স, আবুধাবির পিচ যেন মাইনফিল্ড, লঙ্কান স্পিনাররা ছুঁড়ছেন শুধু একের পর এক গোলা!
সে গোলাতেই বিদ্ধ হলেন আসাদ শফিক, বাবর আজমরা। স্রোতের বিরুদ্ধে দাঁড়াতে চাইলেন সরফরাজ আহমেদ ও হারিস সোহেল। দুজনের ৪২ রানের জুটি আশাও জোগালো পাকিস্তানকে। সরফরাজ স্টাম্পড হলেন হেরাথের বলে, হারিস এলবিডাব্লিউ পেরেরার বলে। হাসান আলিও বোল্ড হেরাথের স্পিনে। ইনিংসের সেরা বলটা করলেন হেরাথ এরপর। বিশাল টার্নে বোল্ড আমির, পাকিস্তানের আশা তখন নিভেই গেছে প্রায়, শ্রীলঙ্কা জিতেই গেছে প্রায়।
সেই শ্রীলঙ্কা একবার জিতলো, কিন্তু জিতলো না। জিতলো আবার। এবার তাদের উদযাপনে বাধা রইলো না আর!