মরুর বুকে নতুন দিগন্ত শ্রীলঙ্কার
দুবাই টেস্ট
শ্রীলঙ্কা ১ম ইনিংস ৪৮২ অল-আউট, ১৫৯.২ ওভার (করুনারত্নে ১৯৬, চান্ডিমাল ৬২, পেরেরা ৫৮, ডিকভেলা ৫২, ইয়াসির ৬/১৮৪, আব্বাস ২/১০০) ও ৯৬ অল-আউট, ২৬ ওভার(মেন্ডিস ২৯, ডিকভেলা ২১, রিয়াজ ৪/৪১, হারিস ৩/১)
পাকিস্তান ১ম ইনিংস ২৬২ অল-আউট, ৯০.৩ ওভার (আজহার ৫৯, হারিস ৫৬, পেরেরা ৩/৭২, হেরাথ ৩/৮৪) ও ২য় ইনিংস ২৪৮ অল-আউট, ৯০.২ ওভার (শফিক ১১২, সরফরাজ ৬৮, পেরেরা ৫/৯৮, হেরাথ ২/৬৭)
ফল : শ্রীলঙ্কা ৬৯ রানে জয়ী, সিরিজে জয়ী ২-০তে
গোল হয়ে দাঁড়িয়ে শ্রীলঙ্কানরা। পিচের পাশে, মনোযোগ দিয়ে কথা শুনছেন সবাই। অধিনায়ক দীনেশ চান্ডিমালও সেখানে শ্রোতা। বক্তার নাম রঙ্গনা হেরাথ। হেরাথের বলেই ক্যাচ দিয়েছেন ওয়াহাব রিয়াজ, পাকিস্তানের শেষ উইকেট। কাভারে ধরেছেন চান্ডিমাল। দুবাই টেস্টে শেষদিনের প্রথম সেশনেই পাকিস্তানকে হারিয়েছে শ্রীলঙ্কা। এ জয়টা ঐতিহাসিক, এ জয়টা শ্রীলঙ্কার কাছে পাকিস্তানকে তাদের ‘ধার করা ঘর’-এ প্রথম দল হিসেবে হারানোর তৃপ্তির। এর চেয়েও বড় কথা, এ জয়টা স্বস্তির! জিম্বাবুয়ের কাছে হোঁচট খেয়ে, ভারতের কাছে ধাক্কা খেয়ে প্রায় চূর্ণ-বিচূর্ণ একটা দলের কাছে দুবাই টেস্ট দিয়ে সিরিজ জয় যেন এলো তপ্ত মরুর বুকে একপশলা বৃষ্টির মতো হয়ে!
আগেরদিন শ্রীলঙ্কার জয়ের মাঝে ব্যবধান হয়ে ছিলেন আসাদ শফিক ও সরফরাজ আহমেদ। দুজনের শুরুটাও হলো আত্মবিশ্বাসী। তবে শ্রীলঙ্কানরা ধৈর্য্য ধরে ছিলেন। জানতেন, একটা উইকেট পেলেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ চলে আসবে তাদের হাতে। তারা সে ধৈর্য্যের পুরস্কারটা পেলেন, সরফরাজই প্রথমে ফিরলেন। রান-আউটের সুযোগ দিয়েছিলেন এর আগে দুজন মিলে, সরফরাজ নিজে বেঁচে গেছেন স্টাম্পিংয়ের কবল থেকে। দিলরুয়ান পেরেরাকে সুইপ করতে গিয়ে এরপর ক্যাচ দিয়েছেন পাকিস্তান অধিনায়ক, নুয়ান প্রদীপ স্নায়ুর চাপ অগ্রাহ্য করে সেটা ধরেছেন ঠিকঠাক। ১৭৩ রানের জুটিটা ভেঙ্গেছে তাতে, চতুর্থ ইনিংসে যা ৬ষ্ঠ উইকেটে পঞ্চম সর্বোচ্চ জুটি। আউট হওয়ার পর সরফরাজের মুখভঙ্গিই বলে দিচ্ছিল, পাকিস্তানের আশার অনেকখানিই ফুরিয়ে এলো!
শ্রীলঙ্কার বাধা হয়ে ছিলেন আসাদ শফিক। ক্যারিয়ারের ১১তম সেঞ্চুরিটা করলেন, উদযাপনে বোঝা গেল, সেঞ্চুরিটা তার কাছে স্বস্তির! দিনের শুরুতেও দারুণ কিছু স্ট্রোক খেলেছিলেন, ছিলেন ছন্দেই। লাহিরু গামাগের বলে এলবিডাব্লিউও দিলেন আম্পায়ার, কিন্তু রিভিউ নিয়ে বেঁচে গেলেন। ভাগ্যও হয়তো সঙ্গেই ছিল। শফিকের অসাধারণ ইনিংসটা শেষ হলো কুশাল মেন্ডিসের অসাধারণ এক ক্যাচে। নুয়ান প্রদীপের বলে স্লিপে ক্যাচটা নিয়ে যেন শেষ কাঁটাটা সরিয়ে ফেললো শ্রীলঙ্কা। সেঞ্চুরির স্বস্তিই শুধু স্মৃতি হলো শফিকের, তীরে ভেড়াতে পারলেন না দলকে।
শফিকের আগেই এলবিডাব্লিউ হয়েছেন মোহাম্মদ আমির, পেরেরার বলে। ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলতে গিয়ে হেরাথের বলে স্টাম্পড হয়েছেন ইয়াসির শাহও। প্রথম টেস্টের হেরাথ রোমাঞ্চ যেন কাটেনি, দ্বিতীয় টেস্টের পঞ্চম দিনেও হেরাথ জাদু দেখার অপেক্ষাতেই হয়তো ছিলেন অনেকে। কিন্তু দ্বিতীয় ইনিংসে বোলিংয়ে শ্রীলঙ্কার নায়ক ওই পেরেরাই। বয়স ৩৫ পেরিয়ে গেছে, কিন্তু শ্রীলঙ্কার স্পিন ব্যাটনটা হেরাথের কাছ থেকে নেওয়ার দাবি জোরালোই করছেন তিনি। ক্যারিয়ারে চতুর্থবার পাঁচ-উইকেট নিলেন এ নিয়ে।
এ ম্যাচের মতো সিরিজেও ব্যাটিংয়ে শ্রীলঙ্কার নায়ক দিমুথ করুনারত্নে। ১৯৬ রানের ইনিংসের জন্য ম্যাচসেরা হয়েছেন, সিরিজসেরা হয়েছেন দুই ম্যাচে ৩০৬ রান করে।
ম্যাচশেষে হেরাথের কথার সময় বাড়তি মনোযোগই হয়তো ছিল করুনারত্নে-পেরেরাদের!