সিলেটের 'সিক্সারস'দের কবলে এবার রাজশাহীর 'কিংস'রা
বিপিএল, ম্যাচ ৬, সিলেট
সিক্সারস ২০৫/৬, ২০ ওভার (থারাঙ্গা ৫০, ফ্লেচার ৪৮, গুনাথিলাকা ৪২, হোয়াইটলি ২৫, উইলিয়ামস ২/৩৯)
কিংস ১৭২/৮, ২০ ওভার (রাইট ৫৬, ফ্র্যাঙ্কলিন ৩৫, রেজা ১৫, আবুল ৩/২২, প্লাঙ্কেট ৩/২৯)
ফল : সিক্সারস ৩৩ রানে জয়ী
লিয়াম প্লাঙ্কেট ফুটবল খেললেন। অসাধারণ শট, অভেদ্য লক্ষ্য। রান নিতে গিয়ে ছোটখাট একটা সংঘর্ষ হয়ে গেল জেমস ফ্র্যাঙ্কলিন ও ড্যারেন স্যামির, প্লাঙ্কেট ওদিকে পা দিয়ে বলে শট করে ভেঙ্গে দিলেন স্টাম্প। জন্মদিনে রান-আউট ফ্রাঙ্কলিন, রাজশাহীর অসম্ভব যাত্রার পথে অনেক বড় ভরসার নাম ফ্র্যাঙ্কলিন। শিশির, যে শিশিরের কারণে তোয়ালে হয়ে গিয়েছিল অনুষঙ্গ, বল ইনিংসের মাঝেই বদলাতে হয়েছে একাধিকবার, কিংবা লুক রাইট বা ফ্র্যাঙ্কলিন, সিলেটের টানা তৃতীয় জয় ও দারুণ এক উড়ালযাত্রার পথে বাধা হতে পারেনি কেউই!
সিলেট আসলে উড়ছেই। এবার টসে হেরে ব্যাটিং করতে হলো প্রথমে, বদলালো না ওপেনিং জুটির ব্যাটিং। সিলেটের ব্যাটিং মানেই যেন এখন ওপেনিং জুটির বড় স্কোর, তিন ম্যাচের মধ্যে দ্বিতীয় শতরানের জুটি গড়লেন থারাঙ্গা-ফ্লেচার। টানা তৃতীয় ফিফটি থারাঙ্গার, আর ফিফটি থেকে দুই রান দূরে রান-আউট হয়েছেন ফ্লেচার। ১০.২ ওভারে ১০০ রান ছুঁয়েছে সিলেট, তবে এরপরই দুই ওভারে দুই উইকেট হারিয়ে যেন চাপেই পড়ে গিয়েছিল তারা কিছুটা। দিনের প্রথম ম্যাচের মতো উড়ন্ত সূচনার পর মুখ থুবড়ে পড়ার আশঙ্কাও জাগছিল হালকা।
সে আশঙ্কা থুড়ি মেরে উড়িয়েছেন এ ম্যাচে দলে আসা দানুশকা গুনাথিলাকা। ফ্র্যাঙ্কলিনকে স্কুপ করে ছয়, রিভার্স ফ্ল্যাপে চার, উইলিয়ামসকে রিভার্স স্লগ সুইপে চার, যেন আন-অর্থোডক্স ব্যাটিংয়ের পসরা সাজিয়ে বসেছিলেন তিনি। ৪২ রান করে রেজার বলে দিয়েছেন ক্যাচ, ততক্ষণে ১৬৯ রান হয়ে গেছে সিক্সারস-এর।
তবে গুনাথিলাকা বা ফ্লেচার আউট হতে পারতেন আগেই, ফ্লেচারকে সহজ রান-আউট করতে পারেননি প্যাটেল, এর মাশুল কিংসরা গুণেছে ৬ রান দিয়ে। সেই প্যাটেলই গুনাথিলাকার ক্যাচ ছেড়েছিলেন, এর মাশুল অবশ্য গুণতে হয়েছে ৩০ রান।
এরপর সিলেটের স্কোর আরও বড় করার পালা, তাদেরকে ২০০ পর্যন্ত টেনে নিয়েছেন রস হোয়াইটলি। রেজাকে ২টি ছয় মেরেছেন, একটি গেছে ১০৯ মিটার পর্যন্ত। শেষ ৫ ওভারে ৭০ রান তুলেছে সিলেট।
জিততে হলে রাজশাহীকে গড়তে হতো বিপিএলের রান তাড়ার রেকর্ড। শিশিরকে বুড়ো আঙ্গুল দেখিয়ে শুরুতেই বোলিংয়ে এলেন নাসির, শুরুটা ভালই ছিল মুমিনুল-রাইটেরও। টাইমিং হচ্ছিল, বল পার হচ্ছিল বাউন্ডারি, যথেষ্ট ছিল সেটাই। এবার হলো না, প্ল্যাঙ্কেটের বলটা ইন-ফিল্ড পার করতে পারলেন না মুমিনুল হক। মিড-অনে নাসিরের হাতে দিলেন ক্যাচ। সেই ওভারেই সিলেটকে আরেকবার উল্লাসে মাতালেন প্ল্যাঙ্কেট, এবার তুলে মারতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন রনি তালুকদার। পার্থক্য শুধু, এবার ক্যাচ নিলেন সাব্বির।
পাওয়ারপ্লেতে ৫১ রান তুললো কিংসরা, হারালো ২টি উইকেটও। একপ্রান্ত আগলে ছিলেন রাইট। তাকে ওপাশে রেখেই আবুল হাসানের আলগা ফুলটসে ক্যাচ তুলে দিলেন মুশফিকুর রহিম। এক বল পরেই বলকে ব্যাট দিয়ে স্টাম্পে ডেকে আনলেন সামিট প্যাটেল। সিলেট দেখলো আরেকটা জোড়া উইকেটের ওভার। ৩ ওভারে ২৫ রান, একটা ক্যাচ মিস, একটা রান-আউট মিস, সঙ্গে ব্যাটিংয়ে ডাক, প্যাটেল দিনটা ভুলেই যেতে চাইবেন।
১২তম ওভারে ১৮ রান এলো কামরুলের বলে, রাজশাহীর ইনিংসের গতিপথ বদলালো না তাতেও। ৫৪ রানে দাঁড়িয়ে জীবন পাওয়া রাইটও ফিরলেন আর ২ রান যোগ করেই। একটা ছয় মেরে আউট হলেন স্যামি, শেষের আগের ওভারে মিরাজ বনে গেলেন প্লাঙ্কেটের তৃতীয় উইকেট, সাব্বিরের চতুর্থ ক্যাচ। বিপিএলে এক ইনিংসে সর্বোচ্চ ক্যাচের রেকর্ড এটিই।
শুধু রেকর্ড গড়া হলো না রাজশাহীরই। সিলেট যে এদিন জয়ের হ্যাটট্রিক করবে বলেই নেমেছিল!