শেষের ঝড়ের পর ক্যাচ জেতাল খুলনাকে
খুলনা টাইটানস ২০ ওভারে ১৬৯/৭ (মাহমুদউল্লাহ ৪০, আরিফুল ৪০, ব্র্যাথওয়েট ৩০; তাসকিন ৩/৪৩)
চিটাগাং ভাইকিংস ২০ ওভারে ১৫২/৭ (সিকান্দার রাজা ৩৭, মিসবাহ ৩০; জায়েদ ৪/৩৫)
ফলঃ খুলনা ১৮ রানে জয়ী
১৫ ওভার শেষে খুলনার রান ছিল ৪ উইকেটে ১০১। ঠিক ওই ১৫ ওভারেই চট্টগ্রামের রান ১০৫, উইকেট একটি বেশি হারিয়েছে। কিন্তু খুলনা শেষ ৫ ওভারে তুলেছে ৬৯ রান, আর চট্টগ্রাম যোগ করেছে ৪৭ রান। ম্যাচের ব্যবধানও হয়ে গেল এখানেই, প্রথম ম্যাচে হারের পর খুলনার জয়ের ধারা তাই চলছেই। আর গত ম্যাচে জয়ের পর আবারও পরাজয়ের স্বাদ পেতে হলো চট্টগ্রামকে।
অবশ্য শেষ ৫ ওভারের ঝড় ছাড়াও খুলনার জয়ে আরেকটা বড় অনুঘটক আছে। ক্যাচ ম্যাচ জেতায়-পুরনো কথাটাই তো আজ নতুন করে ফিরে এলো মিরপুরে। খুলনার প্রথম পাঁচ ব্যাটসম্যান ক্যাচ দিয়ে ফিরে গেছেন, তবে এর মধ্যে দুইটির জন্য ফিল্ডারের কৃতিত্ব বোলারের চেয়ে কম নয়।
দিলশান মুনাবীরার ক্যাচের কথাই ধরুন। আবু জায়েদের বলটা সীমানার ওপারে আছড়ে ফেলবেন বলেই মনে হচ্ছিল। কিন্তু ডিপ উইকেট থেকে অনেকটা দৌড়ে বাঁ দিকে লাফিয়ে অবিশ্বাস্য এক ক্যাচ নিলেন রাইলি রুশো। ২১ রানেই ৩ উইকেট হারাল চট্টগ্রাম। তার আগেই অবশ্য প্রথম ওভারে অর্ধেক কাজ সেরে রেখেছেন জায়েদ, প্রথম ওভারেই পর পর দুই বলে ফিরিয়ে দিয়েছেন ফর্মে থাকা ওপেনার লুক রঙ্কি ও সৌম্য সরকারকে।
নাজমুল হোসেন শান্তর ক্যাচটা এতটা দুর্দান্ত না হলেও সেটি নিতে কম কাঠখড় পোড়াতে হয়নি। এবারও নিজের বাঁ প্রান্তে লাফিয়ে মিসবাহ উল হকের ক্যাচটা প্রায় নিয়েই ফেলেছিলেন শান্ত। কিন্তু তিন বারের চেষ্টায় শেষ পর্যন্ত কোনোরকমে ক্যাচটা হাতে জমাতে পারেন। ১০৭ রানে ৬ উইকেট হারিয়ে চট্টগ্রামের হার তখন দেখা যাচ্ছে দৃষ্টিসীমায়।
একটা সময় অবশ্য তাদের একটু হলেও আশা দেখাচ্ছিলেন সিকান্দার রাজা ও মিসবাহ উল হক। ৩৮ রানে ৪ উইকেট পড়ার পর চট্টগ্রামের হারটা যখন সময়ের ব্যাপার, তখনই রাজা ও মিসবাহ ঘুরে দাঁড়ালেন। দুজন মিলে যোগ করলেন ৫৯ রান, ২৭ বলে ৩৭ রান করে রাজা তখন আভাস দিচ্ছেন বড় কিছুর।
কিন্তু শেষ পর্যন্ত তা আর হলো না। রাজা ফিরে গেলেন শফিউলের বলে বোল্ড হয়ে। মিসবাহর টেস্ট মেজাজের ব্যাটিংও তখন আর পরিস্থিতির দাবি মেটাতে পারছে না। শেষ ৫ ওভারে যে ঝড় দরকার ছিল, লুইস রিসের ব্যাটে সেটার ইঙ্গিত ছিল। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পরাজয়ের ব্যবধান কমানো ছাড়া আর কিছু করতে পারেনি।
তার আগে শেষ ৫ ওভারেই ম্যাচের নিয়ন্ত্রণ মুঠোয় নিয়ে নিয়েছে খুলনা। ১৫ ওভার শেষে খুলনার রান ১০১, হাতে আছে ৬ উইকেট। ১৬তম ওভারের তৃতীয় বলেই আউট হয়ে গেলেন মাহমুদউল্লাহ, আরও একটা ধাক্কা খেল খুলনার ১৫০ ছোঁয়ার স্বপ্ন। কিন্তু এর পরেই কোনো আভাস না দিয়েই শুরু হলো ঝড়। আর তাতে এলোমেলো হয়ে গেল চট্টগ্রাম। আরিফুল হক ও কার্লোস ব্রাথওয়েট শেষ ৫ ওভারে নিলেন ৬৯, খুলনা তাতে ছুঁল ১৭০।
অথচ প্রথম ১০ ওভার শেষেও মনে হচ্ছিল, খুলনাকে ১৪০ পেরুতেই যথেষ্ট কাঠখড় পোড়াতে হবে। শুরুটা আজও ভালো হয়নি খুলনার, প্রথম ওভারেই হারিয়ে বসে চ্যাডউইক ওয়ালটনকে। সিলেটের দুই ম্যাচের পর আজও আরও একবার ব্যর্থ নাজমুল হাসান। দিলশান মুনাবীরার দুর্দান্ত এক ডেলিভারিতে আউট হয়ে গেলেন ৯ রানে। তার আগেই অবশ্য ফিরে গেছেন মাইকেল ক্লিঙ্গার, শান্তর বিদায়ে ২৯ রানেই খুলনা হারিয়ে ফেলেছে ৩ উইকেট।
ঢাকার স্লথ উইকেটে রাইলি রুশোকেও রান করতে সংগ্রাম করতে হচ্ছিল। তারপরও ২৬ বলে ২৫ রান করে বড় কিছুর আশাই দেখাচ্ছিলেন। কিন্তু তাসকিনের শর্ট বলে সৌম্যকে ক্যাচ দিয়েও বেঁচে যাওয়ার দুই বল পরেই সেই তাসকিনের বলে সৌম্যকে একই জায়গায় ক্যাচ দিয়েছেন। ৬৮ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খুলনা তখন ধুঁকছে।
সেখান থেকে শুরুতে পথ দেখালেন অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ। ৩৩ বলে ৪০ রানের ইনিংসটা যখন আরও বড় করার আভাস দিচ্ছেন, বিজয়ের দুর্দান্ত এক ক্যাচে আউট হয়ে গেলেন। এরপর শুরু হলো আরিফুল-ব্র্যাথওয়েট ঝড়। তানভীর হায়দারের এক ওভারেই তিন ছয় মারলেন আরিফুল, ওই অভার থেকে একাই নিলেন ২৪ রান। ওদিকে ব্র্যাথওয়েটও তখন খড়গহস্ত, ১৪ বলে করে ফেলেছেন ৩০ রান।
শেষ ওভারের শেষ বলে আরিফুল যখন আউট হলেন, চট্টগ্রাম তখন সামান্য উদযাপনও করল না। হুট করে ধেয়ে আসা ঝড়ে যে তারা তখন দিশেহারা! যে ঝড় তাদের বেসামাল করে রাখল ম্যাচ শেষেও।