রশিদ-নবীর পর বাটলার-ইমরুলে অসহায় রাজশাহী
বিপিএল, ম্যাচ ১২, মিরপুর
টস : কুমিল্লা
রাজশাহী ১১৫/৭, ২০ ওভার (সিমন্স ৪০ (আহত অবসর), রেজা ২৫*, মুশফিক ১৬, নবী ৩/১৫, রশীদ ২/৭)
কুমিল্লা ১২০/১, ১৫.১ ওভার (বাটলার ৫০, ইমরুল ৪৪, রেজা ১/৩১)
সরাসরি ও পুরো স্কোর দেখুন এখানে
রশীদ খানের মতো জাদুময় স্পেল করতে পারলেন না মেহেদী হাসান। নবীর মতো নিয়ন্ত্রিত হতে পারলেন না সামি। চেষ্টাটাই করে গেলেন শুধু। ১১৬ রানের লক্ষ্যে যেমন ব্যাটিং দরকার, বাটলার ও ইমরুল করলেন তেমনই। দারুণ বোলিংয়ের পর কার্যকরী ব্যাটিং, রাজশাহীকে পাত্তা দিল না কুমিল্লা। ভিক্টোরিয়ানসদের দ্বিতীয় জয়টা এলো কিংসদের সঙ্গেই, ২৯ বল ও ৯ উইকেট বাকি রেখে।
শুরুটা অবশ্য দুই ধাপে করেছিলেন লিটন। প্রথম ওভারের শেষ বলে শুধু একটা সিঙ্গেল, আর একটা ‘জীবন’। নাইম ইসলাম জুনিয়র ফেললেন ক্যাচ। লিটন যেন পরের ওভারে ভেবে বসলেন, ‘যথেষ্ট’! মারতে লাগলেন, এবার ক্যাচ ফেললেন নিহাদ, মিসহিটে পেছন দিয়ে একটা ছয়ও হলো। স্লগ সুইপের ছয়টা অবশ্য ‘ক্লিনহিট’, তবে রেজাকে স্টাম্প ছেড়ে মারতে গিয়ে হলেন বোল্ড! সেই ওভারে আবার এলো ২২ রান।
সামি ও মিরাজ লাগাম ধরার চেষ্টা করলেন রানের, বাটলার-ইমরুল অবশ্য সেটা হতে দিলেন না খুব একটা। দেখলেন, শুনলেন, অপেক্ষা করলেন। স্ট্রাইক বদলের ফাঁকে ফাঁকে বাউন্ডারি, বাটলার খেললেন স্ট্রোক ও নিয়ন্ত্রণের সমন্বয়ে দারুণ এক ইনিংস। ফিফটিটাও পেলেন শেষে এসে। সঙ্গ দিলেন ইমরুল। দারুণ এক পুলে ছয় মেরে ম্যাচ শেষ করলেন তিনিই। ৯৭ রানের অবিচ্ছিন্ন ২য় উইকেট জুটি, দাপুটে জয় নিশ্চিত হলো তাতেই। দ্বিতীয় ইনিংস শেষে বলাই যায়, আদতে প্রথম ইনিংসের পরই ম্যাচ থেকে ছিটকে গেছে রাজশাহী!
রাজশাহীর সে ইনিংসে দুইটা ভাগ। সিমন্সের চোটের আগে ও পরে। তার চোটের পরে আবার আছে রশিদের স্পিন রহস্য। স্পিনে ধুঁকতে থাকা সিমন্স যখন স্পিন বুঝে উঠলেন, চোটে পড়লেন তারপরই। আরাফাত সানিকে টানা তিন চার মেরে সিঙ্গেল নিতে গিয়ে চোট পেলেন হ্যামস্ট্রিংয়ে। বেরিয়ে যেতে হলো স্ট্রেচারে করে, সঙ্গে করে যেন নিয়ে গেলেন রাজশাহীর ব্যাটিংটাকেও। ৬ ওভারে ৫২ রান তোলা দলের ২০ ওভার শেষে ১১৫ রানের স্কোর তো এমন কথাই বলে!
সেই স্কোরে আছে আরেকজনের অবদান। তিনি এমনিতেই ‘রহস্যঘেরা’ স্পিনার যেন এদিন হয়ে উঠলেন আরও রহস্যময়। ২৪টি বল করলেন, দিলেন ৭টি সিঙ্গেল। বাকি ১৭টি ডট! সঙ্গে ২টি উইকেট, মুশফিক ও ওয়েলারের। রশিদ খানকে সামলাতে শুধু হিমশিম নয়, রাজশাহী আরেকটু হলে রহস্য উদঘাটন করতে ফেলুদাকেই ডেকে বসতো!
শুরুটা হয়েছিল অবশ্য ৩ উইকেট নেওয়া নবীর স্পিনে। কালকেই মুমিনুল বলেছিলেন, মিরপুরের উইকেট বিপিএলে ম্যাচের জন্য সবচেয়ে কঠিন। আজ তার ব্যাটিং দেখে অবশ্য মনে হলো সেটাই। বল পিচে ধরছিল ভালই শুরুর দিকে। পিচে ধরতে থাকা বলে ধুঁকতে থাকা মুমিনুল নবীকে আড়াআড়ি উড়িয়ে মারতে গিয়ে শুধু ৩০ গজের বৃত্তের একটু পর ক্যাচই দিতে পারলেন বাটলারকে। রনি সামনের পা সরিয়ে তেঁড়েফুঁড়ে মারতে গিয়ে শুধু ব্যাটে বলটা ছোঁয়াতেই পারলেন, উইকেটের পেছনে লিটন নিলেন তার ক্যারিয়ারের সহজতম ক্যাচগুলোর একটি। সোজা ব্যাটে চার মেরে যেন মুশফিক রনিকে দেখালেন, টি-টোয়েন্টির ব্যাটিং মানেই সব ভুলে শট খেলা নয়। তবে সেই মুশফিকই রশিদের স্পিনে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে শর্ট কাভারে দিলেন ক্যাচ, যে শট দেখে ফিল্ডার নবীও যেন বিস্মিত হয়েছিলেন! ক্যাচ ধরেও থ্রো করতে গেলেন নন-স্ট্রাইক প্রান্তে! ফ্র্যাঙ্কলিন নিজেই স্টাম্পে ডেকে আনলেন বল। ব্রাভো আম্পায়ারের সতর্কতা শুনে রাউন্ড দ্য উইকেটে গেলেন, যে অ্যাঙ্গেল পেলেন, সেটাই হলো শাপেবর।
বিপর্যয় থেকে উদ্ধারের বদলে মিরাজই পড়লেন বিপর্যয়ে। নবীর ওভারে তিন ডট বলের চাপে পড়ে করলেন রিভার্স সুইপ, ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঝাঁপিয়ে পড়ে তাকে আরও চাপে ফেললেন স্যামুয়েলস। আর চাপমুক্ত করলেন লিটনকে, মিরাজের ক্যাচ যে ভিক্টোরিয়ানসের উইকেটকিপার ফেলেছিলেন রশিদের বলে। নিহাদ বোল্ড হলেন নবীর বলে। এরপর আর উইকেট গেল না, তবে রেজা ও সামি মিলে শুধু সংগ্রামটাই করতে পারলেন!
সে সংগ্রামটাও বিফলে গেল বাটলার-ইমরুলের ব্যাটিংয়ে।