ব্রাথওয়েটকে আড়াল করে দিলেন পোলার্ড-জহুরুল
খুলনা টাইটানস ২০ ওভারে ১৫৬/৫ (ব্রাথওয়েট ৬৪*, রুশো ৩৪; হায়দার ২/৪০)
ঢাকা ডায়নামাইটস ১৯.৫ ওভারে ১৫৭/৬ (পোলার্ড পোলার্ড ৫৫, জহুরুল ৪৫*; শফিউল ২/২৪)
ফলঃ ঢাকা ৪ উইকেটে জয়ী
পুরো স্কোর ও অন্যান্য স্কোর সরাসরি দেখুন এখানে
শেষ ওভারে দরকার ছিয় রান ৬, প্রথম দুই বলে কোনো রান নিতে পারলেন না জহুরুল ইসলাম অমি। তৃতীয় বলে কোনোমতে এক রান নিলেন, পরের বলে মোসাদ্দেকও নিলেন এক। শেষ দুই বলে দরকার চার রান, বিপিএলে প্রথম টাই ম্যাচের সম্ভাবনা তখন উজ্জ্বল। কিন্তু পঞ্চম বলে স্লিপ ও শর্ট থার্ডম্যানের মধ্য দিয়ে জহুরুলের রিভার্স হিট হয়ে গেল চারম, মাত্র এক বল বাকি থাকতে ৪ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় পেল ঢাকা ডায়নামাইটস। প্রথম ম্যাচ হারের পর এ নিয়ে টানা তিন ম্যাচ জিতল ঢাকা, দুই ম্যাচ জয়ের পর হারল খুলনা টাইটানস।
অথচ নবম ওভারে যখন সাকিব আল হাসানকে হারাল ঢাকা ডায়নামাইটস, ৪১ রানে হারিয়ে ফেলেছে পাঁচ উইকেট। জয়টা তখন দৃষ্টিসীমার অনেক দূরে চলে যাচ্ছে, খুলনার বোলাররা ঢাকার গলায় পরিয়ে রেখেছেন ফাঁস। নারাইনকে ওপেনিংয়ে খেলানোর ফাটকা কাজে লাগেনি, ব্যর্থ আফ্রিদিকে ওয়ান ডাউনে নামানোর জুয়াও। ডেলপোর্টও আউট হয়ে গেছেন শুরুতেই, বিদেশীদের মধ্যে শেষ ভরসা ছিলেন কাইরন পোলার্ড।
সেই পোলার্ডই এরপর ম্যাচে ফেরালেন ঢাকাকে। শুরুটা করেছিলেন মাহমুদউল্লাহর এক ওভারে চারটি ছয় দিয়ে, এরপর সেই ঝড় থেকে পার পাননি ব্রাথওয়েটও। দেখতে দেখতে ১৯ বলে ফিফটি হয়ে গেছে পোলার্ডের, ঢাকার সামনে ওভারপ্রতি রানও নামিয়ে এনেছেন আটের নিচে।
পোলার্ড যখন ম্যাচটা খুব সহজে জিতিয়ে দেবেন মনে হচ্ছিল, তখনই শফিউলের বাউন্সারে আউট হয়ে গেলেন। এরপরও ঢাকার রান দরকার ৩২ বলে ৪৩, মোসাদ্দেকের সঙ্গে ক্রিজে জহুরুল। সিনিয়র হিসেবে পথ দেখানোর কাজটা জহুরুলই নিজের ঘাড়ে তুলে নিলেন। শেষ চার ওভারে অবশ্য খুলনা দারুণ বল করে ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করেছে, কিন্তু ঠাণ্ডা মাথায় জহুরুল সুযোগ পেলেই সিঙ্গেলের সঙ্গে চার মারছিলেন। শেষ দুই ওভারে রান যখন দরকার ১৯, আবু জায়েদের ওই ওভার থেকেই ১৩ রান নিলেন মোসাদ্দেক-জহুরুল। তারপরও ব্রাথওয়েট শেষ ওভারে ফেরার চেষ্টা করেছিলেন, কিন্তু লাভ হয়নি।
তার আগে ব্যাটিংয়ে ঠিক যেন চট্টগ্রামের সঙ্গে আগের ম্যাচের স্মৃতিটাই ফিরিয়ে আনল খুলনা টাইটানস। প্রথম ১৫ ওভার শেষে রান ৯৩, এরপর শেষ ৫ ওভারে উঠল ঝড়। আর তাতেই রান হয়ে গেল ১৫৬। পার্থক্য শুধু একটাই, আগের ম্যাচে আরিফুলের সঙ্গে কাজটা ভাগাভাগি করেছিলেন কার্লোস ব্রাথওয়েট, আর কাজটা আজ একাই করতে হলো ব্রাথওয়েটকে।
অথচ একটা সময় খুলনার রান ১৩০ পেরুনো নিয়েই সংশয়। নাজমুল হোসেন শান্তর সঙ্গে আজ ওপেনিংয়ে নেমেছিলেন মাইকেল ক্লিঙ্গার, কিন্তু আজ আরও একবার ব্যর্থ অস্ট্রেলিয়ান, আউট হলেন ১০ রানে। ২২ রানে খুলনা হারাল প্রথম উইকেট। ধীমান ঘোষ দলে সুযোগ পেয়ে তিনে উঠে এলেন, কিন্তু নয় বলে ২ রানের টেস্ট ইনিংসে খুলনার রানের গতিটা যেন হয়ে গেল মেইল ট্রেনের মতো। এরপর রাইলি রুশো আর শান্ত সেটা একটু সচল করলেন, কিন্তু রান তারপরও ছয়ের ওপর উঠছিল না।
২৫ বলে ২৪ রান করে শান্তর আউটের পর একটু চেষ্টা করলেন মাহমুদউল্লাহ। কিন্তু ১০ বলে ১৪ রান করার পর আফ্রিদির বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরলেন মাহমুদউল্লাহও। ৭১ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে খুলনা তখন ধুঁকছে। প্রথম ওভারে ব্রাথওয়েট একটু দেখেশুনে খেলেছিলেন, ঝড় শুরু করলেন ১৫তম ওভার থেকে।
আফ্রিদির ওই ওভার থেকে এলো ১৫ রান, ব্রাথওয়েট মাওরলেন দুই ছয়। সবচেয়ে বেশি ঝড় উটজল সাকিবের পরের ওভারে, এবারও দুই ছয়ে ব্রাথওয়েট নিলেন ১৭ রান। নারাইন পরের ওভারটা দুর্দান্ত করলেন, তিন রানের বেশি দিলেন না। কিন্তু শেষ ৩ ওভারে আবার উঠল ঝড়। শেষ দুই ওভারেই ব্রাথওয়েট মাওরলেন তিন ছয়, ২৫ বলে পেয়ে গেলেন ফিফটি। ২৯ বলে ৬৪ রান করে অপরাজিত রইলেন, তাতে ছিল ছয়টি ছয়। কিন্তু কে জানত, দিন শেষে একটুর জন্য তা বিফলে যাবে!