একটি ছয়ের পর ইমরুল-বাটলারের ম্যাচ জয়ের গল্প
ভাইকিংস ১৩৯/৪, ২০ ওভার (সৌম্য ৩০, রঙ্কি ৩১, রশীদ ১/১৭, সাইফউদ্দীন ১/৩০)
ভিক্টোরিয়ানস ১৪০/৪, ১৮.১ ওভার (ইমরুল ৪৫, বাটলার ৪৪, মুনাবিরা ২/১৭)
ফল : কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানস ৬ উইকেটে জয়ী
ক্রিকেটে তো বিখ্যাত ছয়ের অভাব নেই। বাংলাদেশের ক্রিকেটের কথায় ধরুন। সেই খালেদ মাসুদের আইসিসি ট্রফির ফাইনালের ছয়, আফতাব আহমেদের কার্ডিফ কাঁপানো ছয়, কিংবা অন্যদিকে বুকভাঙ্গার গল্প লেখা মাশরাফি বিন মুর্তজাকে মারা ব্রেন্ডন টেইলরের ছয়। একটা ছয় কতো গল্পের জন্ম দেয়, কতো উচ্ছ্বাসে ভাসায়, কতো হতাশায় বুক ভরিয়ে দেয়! এ ম্যাচটাও যেমন মারলন স্যামুয়েলস শেষ করলেন ছয় মেরে। এই ছয়ের মতো ইমরুল কায়েসের ছয়টাও তেমন ‘ঐতিহাসিক’ গল্পের জন্ম দেয়নি। তবে ক্রিকেটে মিশে যাওয়া জীবনের নিয়ম মেনে, শুভাশীষ রয়কে মারা ইমরুলের একটা ছয় বদলে দিয়েছে এই টি-টোয়েন্টি ম্যাচের গতিপথ। কুমিল্লার আদতে সহজ রানতাড়ার ভিত্তিটা যেন একলাফে গড়ে উঠেছিল সেই ছয়েই!
কুমিল্লার লক্ষ্যটা বড় ছিল না, তবে ‘স্কিড’ করা পিচে তাদের শুরুটা হলো এবড়োথেবড়ো। ৮ ওভার শেষে ৪৫ রান, প্রয়োজনীয় রানরেট ৮ ছুঁই ছুঁই। দিলশান মুনাবিরা, সিকান্দার রাজাদের সামলাতে হিমশিম খেয়ে ফিরেছেন তামিম ও লিটন। শুভাশীষ বোলিংয়ে এলেন, প্রথম বলটা অফস্টাম্পের একটু বাইরে শর্টলেংথের। যেন ক্রিকেট শুরুর পর থেকেই ইমরুল জানেন, বলটা কেমন হবে। ব্যাট ঘোরালেন, মিড-উইকেট দিয়ে শটটা যে ছয় হবে, সেটা তো মারার সঙ্গে সঙ্গে আর সবার সঙ্গে ইমরুলও বুঝেছিলেন! সে ওভারে এলো ১৪, কুমিল্লা খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এলো, ওই ইমরুল আর জস বাটলারের ওপর ভর করে।
মাঝে ইমরুল চোট পেলেন, খেললেন সেটা নিয়েই। বাটলার কখনও ক্রিকেটে আনলেন বেসবল, কখনও ব্যাটটাকে গলফের ক্লাব বানিয়ে তাসকিনকে মারলেন ছয়। দুজন মিলে স্ট্রাইক অদল বদল করলেন। সানজামুলের বলে তানবিরকে ক্যাচ দিয়ে ফিফটি মিস করলেন ইমরুল, তবে ততক্ষণে কুমিল্লাকে হারতে হলে জন্ম দিতে হতো নতুন এক গল্পের! বাটলারও ফিরলেন খানিক পরে, ইনিংসে প্রথমবার অযাচিত ঝুঁকি নিতে গিয়ে হলেন স্টাম্পড, ফিফটি মিস করলেন তিনিও।
তবে কুমিল্লা ভিক্টোরিয়ানসকে ‘ভিক্টোরি’ মিস করাতে পারলেন না চিটাগংয়ের ভাইকিংসরা। অবশ্য চিটাগং ব্যাটসম্যানরাই মিস করেছিলেন বড় স্কোরের পথটা, মাঝের ওভারগুলোতে মন্থর ব্যাটিং করে।
ভাইকিংসদের ব্যাটিংয়ের লাগাম প্রথম টেনে ধরেছিলেন সাইফউদ্দীন। লুক রঙ্কি যেভাবে খেলছিলেন, সেটাকে সহজে বলা যায়, ‘পাগলা ঘোড়ার দৌড়’! ৩ ওভারে এলো ৩৪, রঙ্কি শুধু ব্যাট চালান, আর হয় বাউন্ডারি! ৪র্থ ওভারে ৪র্থ বোলার হিসেবে এলেন সাইফউদ্দীন। দিলেন ৬ রান। রশীদ খান এলেন, আগের ম্যাচে ৪ ওভারে ৭ রান দেওয়া আফগান লেগিও দিলেন ৬। সাইফউদ্দীনের পরের ওভারেই উড়োধুড়ো রঙ্কি সামনের পা সরিয়ে খেলতে গিয়ে পেছনের পায়ে হলেন এলবিডাব্লিউ।
রশীদ স্বরুপে ফিরলেন। ব্রাভো একটা কঠিন ক্যাচ ধরেই ফেলেছিলেন প্রায়! তবে সৌম্য ও দিলশান মুনাবিরার থেকে থেকে মারা বাউন্ডারি রানের চাকা সচল রাখলো মোটামুটি ভাবে। বাউন্ডারি না পেয়ে যেন হাপিত্যেশ করছিলেন সৌম্য, নবীর বলে যেভাবে এগিয়ে খেলতে গিয়ে স্টাম্পড হলেন, সেটা ওই বড় শট খেলার ছটফটানি থেকেই!
প্রথম ৮ ওভারে ভাইকিংস তুললো ৬৮ রান। পরের ৮ ওভারে এলো মাত্র ৩০! রশীদ দিলেন ৪ ওভারে ১৭। সিকান্দার রাজা ক্রিজে থাকলেন, তবে ফায়দাটা তুলতে পারলেন না। ভাইকিংস আবার পড়লো সেই পুরোনো সমস্যাতেই, মাঝের ওভারগুলোতে রানের চাকা সচল রাখার অসুবিধা! শেষ ৪ ওভারে এলো ৪০, তাতে অবদান থাকলো এ ম্যাচে দলে আসা ক্রিস জর্ডান ও অধিনায়ক মিসবাহ-উল-হকের দুইটি ছোট ক্যামিওতে।
শেষ পর্যন্ত ভাইকিংসরা করেছিল ১৩৯। প্রথম ৮ ওভারে সে পুঁজি নিয়েই চেপে ধরেছিল ভিক্টোরিয়ানসদের। তবে ইমরুলের ওই এক ছক্কায় যেন বদলে দিল অনেক কিছু!