রংপুরের 'ডেথ-ওভার' মৃত্যুকূপে হারিয়ে গেল ঢাকা
রংপুর ১৪২ অল-আউট, ১৯.৫ বল (গেইল ৫১, সাকিব ৫/১৬)
ঢাকা ১৩৯ অল-আউট, ২০ ওভার (জহুরুল ২৯, সোহাগ ২/১৮)
ফল : রংপুর ৩ রানে জয়ী
এ টি-টোয়েন্টি ম্যাচটাকে কী বলবেন আসলে? এ ম্যাচের নায়কই বা কে! ক্রিস গেইল? রুবেল হোসেন, লাসিথ মালিঙ্গা, মাশরাফি বিন মুর্তজা, নাকি থিসারা পেরেরা! সোহাগ গাজিকেই বা বাদ দেবেন কেন! ১৪২ রানের পুঁজি নিয়ে, গোটা ম্যাচে অনেক অনেক ভুল করেও ডেথ ওভারের অসাধারণ নিয়ন্ত্রিত বোলিং-ই তো ম্যাচ জিতিয়ে দিল রংপুরকে!
১৮ বলে ঢাকার দরকার ছিল ১৬ রান দরকার, হাতে ৪ উইকেট। সে ওভারে রুবেল দিলেন ৩ রান, সঙ্গে মেহেদি মারুফের উইকেট। ১২ বলে ১৩ রান, ক্রিজে দুই স্বীকৃত ব্যাটসম্যান নাদিফ চৌধুরি ও কাইরন পোলার্ড। শেষ বলে ক্যাচ দিলেন নাদিফ, মালিঙ্গা এ ওভারেই দিয়েছেন ইনিংসের ৬ষ্ঠ ওয়াইড! শেষ ওভারের মাঝে বল বদলাতে চাইলেন আম্পায়াররা, দিলেন না মাশরাফি। পোলার্ড সিঙ্গেল নিলেন না এরপরও, তারপর লো ফুলটসে মারলেন ছয়। আরেকবার যেন ছিটকে গেল রংপুর, পোলার্ড আবার সিঙ্গেল নিতে অস্বীকৃতি জানালেন। ৫ম বলে গিয়ে হলেন বোল্ড, শেষ বলে শেষ ব্যাটসম্যান আবু হায়দার রনিও তাই! বিপিএলের ইতিহাসে মাত্র দ্বিতীয়বার দুই দলই একই ম্যাচে হলো অল-আউট। আর একই দিনে বিপিএল দেখলো দুই রোমাঞ্চ!
শুরুটা অবশ্য সহজ হয়নি ঢাকার। সুনীল নারাইন আউট হলেন প্রথম বলেই। মাশরাফির বেরিয়ে যাওয়া বলটা সামলাতে পারেননি। তিনে এসেও ব্যাটিংয়ে ভাল সময়টা আনতে পারেননি সাকিব, বোল্ড হয়েছেন সোহাগ গাজির নীচু হওয়া বলে।
তিনটি ছয়ে ২৮ করেও গিয়ার বদলাতে পারেননি লুইস, গাজির বলে এলবিডাব্লিউ হয়েছেন। এর আগে জহুরুলের সঙ্গে ৪৪ রানের জুটি গড়েছিলেন। লুইসের পরই ফিরেছেন জহুরুল, মাশরাফির স্লোয়ারে স্টাম্পে ডেকে এনেছেন বল। ১৯ বলে ২৮ রানের ইনিংসের হাইলাইটস পেরেরাকে অসাধারণ টাইমিংয়ে মিড-উইকেট দিয়ে মারা ছয়টিই।
একটা উইকেট ডেকে আনে আরেকটা, ঢাকা পেলো জোড়া ধাক্কা। থিতু হওয়ার বদলে মেহেদি মারুফের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝি হলো মোসাদ্দেকের। দুজন ছুটলেন একই প্রান্তে, বেঁচে গেলেন মারুফ।
১৫তম ওভারের আগে বেশ কিছুক্ষণ সময় নিলেন মাশরাফি। রুবেলকে অনেক্ষণ ধরে বোঝালেন। প্রথম বলেই আফ্রিদি মারলেন ছয়, কাজের কাজ হলো না কিচ্ছু! একটা ওয়াইড, একটা ডট, ১৫ বলে ২১ করা আফ্রিদি বোল্ড এরপরই। তবে এতকিছুর পরও ঢাকা এগিয়ে গেছে অনেকখানি, সঙ্গে আছে মালগাড়ির মতো ব্যাটিং লাইন-আপ! এরপরই তো রংপুরের ডেথ ওভারের কাব্য! এর আগে যেমন দারুণ ছিল ঢাকারও ডেথ ওভারের বোলিং!
শেষ ওভারে ৪ উইকেট। ১ রান। রংপুরের ইনিংসের শেষটা দেখলে মনে হবে, ‘কোথা হতে কোথা এলে!’ ৭ ওভারে ছিল ৭১ রানে, ১ উইকেট। সেই রংপুর রাইডার্স অল-আউটই হয়ে গেল ১ বল বাকি থাকতে, ১৪২ রানে! যেন বিস্মৃত হয়ে গেল গেইলের ঝড়। ১৬ রানে ৫ উইকেট নিলেন সাকিব।
শুরুতেই গেইলের সহজ ক্যাচ ফেলেছিলেন রনি, এরপর তিনি সুনীল নারাইন মানলেন না, মোহাম্মদ আমির মানলেন না, মানলেন না শহীদ আফ্রিদিকেও। গেইলের ব্যাটিং দর্শক হয়ে থাকা ম্যাককালাম বোল্ড হলেন আফ্রিদির প্রথম বলেই, রীতিমতো ধুঁকছিলেনই তিনি! তবে ৭ রানে জীবন পাওয়া গেইল বিপিএলে টানা দ্বিতীয় ফিফটি করলেন, এবার ২৬ বলে।
এরপরই মোসাদ্দেক চমক। আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের শুরুর বলেই উইকেট পেয়েছিলেন, সাকিবের আমন্ত্রণে এসে প্রথম বলেই ফেরালেন গেইলকে। তুলে মারতে গিয়ে ডিপ-মিডউইকেটে ক্যাচ দিলেন গেইল। ফিল্ডার? ক্যাচ ধরার পর রনি যেভাবে প্রতিক্রিয়া দেখালেন, সেটা নিজের ওপর না হয়ে অন্য কারও ওপর হলে তো জরিমানাই গুণে বসতেন!
গেইলের পর রংপুরের ইনিংস যেন নিধুয়া পাথারে হাঁটা শুরু করলো। শাহরিয়ার নাফিসের আউটের পর গতি বাড়াতে ৫ নম্বরে উঠে এলেন মাশরাফি। রনিকে চার মারার পর আফ্রিদিকে একটা ছয় মারলেন,আউটও হলেন তার বলেই। মোহাম্মদ মিথুনকে এরপর তার সংগ্রাম থেকেই রেহাই দিলেন সাকিব, ২৬ বলে ২২ করে মিঠুন আউট হলেন স্লগ করতে গিয়ে। ৯ বলে ১৫ করে আমিরের বলে ক্যাচ দিলেন থিসারা পেরেরা, রংপুরের ইনিংস বড় করার শেষ আশাটাও যেন মিলিয়ে গেল তাতে!
এরপরই সাকিবের শেষ ওভার। ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট বোপারা, যার সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝি সেই জিয়াউর ক্যাচ দিলেন পরের বলেই। মাঝে লাসিথ মালিঙ্গা একটা সিঙ্গেল নিতে পারলেন। পরের দুই বলে এলেন আর গেলেন সোহাগ গাজী ও রুবেল হোসেন। টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারে তৃতীয়বার ইনিংসে ৫ উইকেট পেলেন সাকিব।
তবে সেই সাকিবও ম্লান হয়ে গেলেন। কার কাছে? রংপুরের বোলারদের কাছে!