• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    ইংল্যান্ডকে আটকে দিলেন স্মিথ-মার্শ

    ইংল্যান্ডকে আটকে দিলেন স্মিথ-মার্শ    

    প্রথম টেস্ট, গ্যাবা, প্রথম দিনশেষে
    টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩০২ অল-আউট (ভিনস ৮৩, স্টোনম্যান ৫৩, মালান ৫৬, স্টার্ক ৩/৭৭, কামিন্স ৩/৮৫, লায়ন ২/৭৬)
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ১৬৫/৪* (স্মিথ ৬৪*, মার্শ ৪৪*, ওয়ার্নার ২৬, অ্যান্ডারসন ১/২৬, ব্রড ১/১৮)
    ১ম ইনিংসে অস্ট্রেলিয়া ১৩৭ রানে পিছিয়ে


    একপ্রান্তে স্টুয়ার্ট ব্রডের লেগসাইড দিয়ে বেড়িয়ে যাওয়া বলটা যিনি নিরাপদে খেললেন, এই অস্ট্রেলিয়া দলে তার ফিরে আসায় কম সমালোচনা হয়নি। অন্যপ্রান্তে যিনি দাঁড়িয়ে, তাকেও সামলাতে হয়েছে এ সমালোচনার ঝড়। শন মার্শ, স্টিভ স্মিথ- শুধু ক্রিজের না, একাদশেরই দুই প্রান্তের দুই ব্যাটসম্যানে ভর করেই গ্যাবায় প্রায় ধ্বসে যাওয়া ইনিংস আটকে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। দ্রুত ৪ উইকেট নেওয়ার পর তাদের অবিচ্ছিন্ন জুটিই হতাশ করছে ইংল্যান্ডকে। স্মিথ ২২তম টেস্ট ফিফটি পেয়েছেন, মার্শ করছেন ৮ম-এর অপেক্ষা। 

    দিনের আগের ভাগে বড় স্কোরের সুযোগ হারানো ইংল্যান্ড ৭৬ রানেই হেনেছিল ৪র্থ আঘাত। ৪র্থ ওভারে ব্রডের সুইংয়ে ব্যাট বাড়িয়ে ক্যাচ দিলেন অভিষিক্ত ক্যামেরন ব্যানক্রফট। মার্শের মতো প্রমাণ করার ছিল তারও, তবে সেটার জন্য সময় নিতে হবে আরও। লায়নের বোলিংয়ে উৎসাহিত হয়ে ৯ম ওভারেই মইনকে এনে এক ওভার পরই সফল রুট। স্পিনে গা-বাঁচানো ভাব নিয়ে খেলা উসমান খাওয়াজা সোজা বলে এলবিডাব্লিউ। অফস্পিনে তার সমস্যা নতুন নয়, তবে সে সমস্যার আশু সমাধান না করতে পারলে না অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেই স্পিন-বিষে নীল হয়ে যায় তার ক্যারিয়ার! 

    স্মিথ, ওয়ার্নার। অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং কোষের দুই নিউক্লিয়াস। ওয়ার্নারকে নিষ্ক্রিয়ই রাখলেন জেক বল। তার শর্ট বলে পুল বা ফ্লিক ধরনের কিছু একটা খেলতে গেলেন, শর্ট মিড-উইকেটে দুইবারের চেষ্টায় ক্যাচ নিলেন মালান। স্মিথ-ওয়ার্নারের জুটি টিকলো ২৯ রান। আর অ্যান্ডারসনের ফুললেংথের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে হ্যান্ডসকম্ব নিজেই বললেন, অ্যাশেজে তাকে পাড়ি দিতে হবে দীর্ঘ পথ। 

     

     

    ইংল্যান্ডের জন্য অবশ্য দিনের বাকি সময়টা বেশ দীর্ঘ বানিয়েছেন স্মিথ-মার্শ। একটা পুল করতে গিয়ে দুই ফিল্ডারের মাঝে পড়েছিল স্মিথের শট, আর শেষে রুটের বলে কাট করতে গিয়ে স্লিপের একটু আগে পড়েছে মার্শের শট- দুইজনের ভুল বলতে এতোটুকুই। স্মিথের চেয়ে বেশি আক্রমণাত্মক ছিলেন অবশ্য মার্শ।

     

     


    দিনের শুরু থেকেই ইংল্যান্ডের ব্যাটসম্যানরা শট খেলেছেন, তবে ঠিক সমন্বিত আক্রমণটা করতে পারেননি, হয়েছে শুধু বিচ্ছিন্ন কিছু হুংকার। স্টার্কদের বাউন্স ভুগিয়েছে, ভুগিয়েছে লায়নের স্পিন। ইংল্যান্ড শেষ ৬ উইকেট হারিয়েছে মাত্র ৫৬ রানে।

    ডেভিড মালান ও মইন আলির ৮৩ রানের জুটি ভেঙেছে স্টার্কের বাউন্সারে মালানের দেওয়া ক্যাচে। স্টার্কের একমাত্র অস্ত্র ছিল এদিন শর্ট বল, মালান বা আলি সেসব শুধু সামলাননি, আক্রমণও করেছিলেন। রাউন্ড দ্য উইকেট থেকে করা শর্ট বলে মালান ভারসাম্য রাখতে পারেননি, ‘হেড পজিশন’ আর শটের গতিই বলে দিচ্ছিল, গড়বড় হয়ে গেছে। 

    একটা ব্রেকথ্রু অস্ট্রেলিয়াকে এনে দিল আরেকটা। ন্যাথান লায়নকে ইনিংসভর ভাল বোলিংয়ের পুরষ্কার দিলেন মইন, ভেতরের দিকে ঢোকা বলে এলবিডাব্লিউ, রিভিউ নিয়েও বাঁচেননি। জনি বেইরস্টো বা ক্রিস ওকস, ইংল্যান্ডের শক্তিশালী লোয়ার অর্ডারের দুই গুরুত্বপূর্ণ স্তম্ভও দাঁড় করাতে পারেনি তেমন কিছু। কামিন্সের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে পেইনকে সাত বছর পর টেস্ট ক্যাচের স্বাদ দিয়েছেন বেইরস্টো। আর তার আগে লায়নের অসাধারণ টার্নের শিকারে বোল্ড ওকস। 

    স্টুয়ার্ট ব্রড নামলে অজি সমর্থকরা দুয়ো দেবেই, এবারও তাই হলো। কামিন্সদের সঙ্গেও ভাবের আদান প্রদান করলেন ব্রড। শুরুটা করেছিলেন প্যাডল সুইপে লায়নকে চার মেরে, শেষ হয়েছে হ্যাজলউডের শর্ট বলে পুল করতে গিয়ে। তার আগেও ক্যাচ দিয়েছিলেন, একই জায়গায় নিতে পারেননি মার্শ। দলে ফেরা মার্শকে অবশ্য বেশিক্ষণ ভোগাননি ব্রড। আর লেগ গালিতে দিনের সেরা ক্যাচটা নিয়েছেন ওয়ার্নার, হঠাৎ ঝড় তুলতে চাওয়া বলের। 

    স্কোরটা ইংল্যান্ড যেমন চাইছিল, এটা ঠিক তেমন নয়। তবে লড়াইয়ের পুঁজি তো ছিলই। বোলিং আক্রমণেও অস্ট্রেলিয়ার চেয়ে ‘সৈন্য’ বেশি তাদের। ৪ বোলার দিয়েই ইনিংস শেষ করেছেন স্মিথ, আর স্বীকৃত ৫ বোলারের পর নিজেকেও এনেছেন রুট। 

    সে লড়াইটা শেষ হয়নি, বরং নতুন আর দারুণ এক চিত্রই অপেক্ষা করছে গ্যাবার তৃতীয় দিনে।