রাজার ঝড়ে উড়ে গেল সিলেট
চিটাগং ভাইকিংস ২০ ওভারে ২১১/৫ (রাজা ৯৫, রঙ্কি ৪১, ফন জিল ৪০; রাব্বি ২/৩৫)
সিলেট সিক্সারস ২০ ওভারে ১৭১/৮ (ফ্লেচার ৭১, বাবর ৪১; তাসকিন ৩/৩১ ফন জিল ২/১৪, সৌম্য ২/১৭ )
ফলঃ চিটাগং ৪০ রানে জয়ী
আন্দ্রে ফ্লেচার একটু সামনে এগিয়ে ক্যাচটা ধরতেই জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে শ্মশানের নিস্তব্ধতা। উইকেট পেয়েও কোনো ভাবান্তর নেই বোলার কামরুল ইসলাম রাব্বির মুখে, বরং উলটো এগিয়ে ছুটলেন সিকান্দার রাজাকে অভিনন্দন জানাতে। সিলেটের আরও কয়েকজন ফিল্ডারও এগিয়ে এলেন হাত বাড়াতে। তবে সিকান্দার রাজার চোখেমুখে তখন তীরে এসে তরী ডোবার অব্যক্ত বেদনা। পাঁচ রানের জন্য যে টি-টোয়েন্টি ক্যারিয়ারের প্রথম সেঞ্চুরি পাওয়া হয়নি! তবে চট্টগ্রামের ২১১ রানের পাহাড়ে ওঠা নিশ্চিত হয়ে গেছে তার আগেই। বলা যায়, জয়টাও নিশ্চিত হয়ে গেছে একরকম, বিপিএলে ২০০র বেশি রান তাড়া করেই যে জয়ের রেকর্ড নেই! শেষ পর্যন্ত জয়টা যতটা কঠিন মনে হয়েছিল, হয়েছে তার চেয়েও অনেক সহজ।
অবশ্য সিলেট যেভাবে শুরু করেছিল, তাতে এই রান তাড়াও একটা সময় খুব অসম্ভব মনে হচ্ছিল না। ৫ ওভারেই ৫০ পেরিয়ে যায় সিলেট, এর মধ্যে অবশ্য ফিরে গেছেন গুনাতিলাকা। ৩৩ বলেই ফিফটি পেয়ে গেছেন ফ্লেচার, ৯ ওভারে সিলেটের রান তখন ৮৫। ১০ ওভার শেষে সিলেটের দরকার আরও ১২০ রাম, ৯ উইকেট নিয়ে কঠিন হলেও একদম অসম্ভব নয়। ফ্লেচারের সঙ্গে বাবর আজমও সঙ্গ দিচ্ছিলেন ভালোই।
কিন্তু ১৪তম ওভারে এসেই গড়বড় হয়ে গেল সবকিছু। তাসকিনকে দারুণ এক ছয় মারার পরের বলেই আবার উড়িয়ে মারতে গেলেন ফ্লেচার। ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্ট থেকে পেছন দিকে অনেকটা দৌড়ে দুর্দান্ত এক ক্যাচ নিলেন রাজা। ব্যাটের পর ফিল্ডিংয়ে দিনটা এর চেয়ে স্মরণীয় বোধ হয় আর করে রাখতে পারতেন না!
ম্যাচটা আসলে ওখানেই শেষ হয়ে গেছে। ফন জিলের এক ওভারেই ফিরেছেন সাব্বির ও বাবর আজম। এরপর বাকিরা শুধু পরাজয়ের ব্যবধানই কমাতে পেরেছেন। শীতের রাতে চট্টগ্রামের গ্যালারি তখন অবশ্য অনেকটাই ফাঁকা। তবে তারা ফিরে গেছেন রাজার বিধ্বংসী এক ইনিংস দেখার সুখস্মৃতি নিয়ে।
রেকর্ড আজ কম গড়েননি। ৪৫ বলে ৯৫ রানের ইনিংস এবারের বিপিএলের সর্বোচ্চ স্কোর অনেক বড় ব্যবধানেই (রঙ্কির ৭৮ রান ছিল আগের সর্বোচ্চ)। টিম ব্রেসনানের যে বল স্টেডিয়াম ছাড়া করেছেন, ১১৩ মিটারের ওই ছক্কা অনায়াসে এবারের বিপিএলের সবচেয়ে বড় ছয়ও। এবারের বিপিএলে সর্বোচ্চ স্কোরের রেকর্ডও নতুন করে লিখিয়েছে চট্টগ্রাম। তবে রেকর্ড হতে পারত আরও অনেক কিছুই। এবারের বিপিএলের প্রথম সেঞ্চুরি হতে পারত। বিপিএলের তিন বা এর নিচে নেমে প্রথম সেঞ্চুরিও খুবই সম্ভব ছিল। কিন্তু রাব্বির ওই বলে আরেকটু অন্যদিকে গেলেই হয়ে যেত চার। পৌঁছে যেতেন ৯৯ রানে, হয়তো আফসোসেও পুড়তে হতো না।
রাজার এই কীর্তিতে আড়াল হয়ে যাচ্ছে আরও দুজনের অবদান। এবারের বিপিএলে চট্টগ্রামের ঝড়ো শুরু মানেই লুক রঙ্কি। আজও এর ব্যতিক্রম হয়নি, প্রথম ওভারেই ১৫ রান নিয়ে আভাস দিয়েছেন বড় কিছুর। কিন্তু পরের ওভারেই চট্টগ্রামের হোঁচট, ১ রান করেই নাসির হোসেনের বলে স্টাম্পড হয়ে গেলেন সৌম্য সরকারও। এনামুল হক বিজয়ও টিকলেন না বেশিক্ষণ, আউট হয়ে গেলেন চতুর্থ ওভারেই।
তবে ওদিকে রঙ্কি ঝড় চলছেই, ততক্ষণে রান হয়ে গেছে ৩৮। রঙ্কির চার-ছয়ে উন্মাতাল জহুর আহমেদের গ্যালারি। স্টিয়ান ফন জিল শুরুতে একটু দেখে খেললেও তাইজুলের বলে পর পর দুই ছয়-চারে যোগ দিলে অন্য প্রান্তে। তবে ভালো খেলতে খেলতেই ২৪ বলে ৪১ রান করে আউট হয়ে গেলেন রঙ্কি, আবুল হাসানের বলে থার্ডম্যানে ক্যাচ নিলেন ব্রেসনান।
এরপর শুরু হলো ফন জিল ও সিকান্দার রাজা অধ্যায়। ১০ ওভারে চট্টগ্রামের রান ৮৪। আগের ম্যাচগুলোতেও এমন শুরুর পরও খেই হারিয়েছে চট্টগ্রাম। কিন্তু আজ ব্যতিক্রম হলো, মুদাসসরের ১২তম ওভার থেকে এলো ১৭ রান। এরপর প্রতি ওভারে রান উঠতে থাকল দশের বেশি। দারুণ খেলতে থাকা ফন জিল আউট হয়ে গেলেন ২৬ বলে ৪০ রান করে। কিন্তু রাজা এরপর যেন আরও বেশি অপ্রতিরোধ্য, আবুল হাসানের বলে চার ও দুই ছয়ের পর পৌঁছে গেলেন আশির ঘরে। তখনোও দুই ওভার বাকি, সেঞ্চুরি মনে হচ্ছিল খুবই সম্ভব। এরপর ব্রেসনানের বলে ওই ১১৩ মিটারের ছয়ে পৌঁছলেন ৯৫ রানে। কিন্তু তিন অঙ্ক আর হলো না। দিন শেষে সেটা নিয়ে হয়তো একটু আফসোস থাকতে পারে। তবে চট্টগ্রামকে ঘরের মাঠে জয়ে ফিরিয়েছেন, তাই বা কম কী!