স্মিথের মহাকাব্যিক ইনিংসে এগিয়ে অস্ট্রেলিয়া
প্রথম টেস্ট, গ্যাবা, তৃতীয় দিনশেষে
টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩০২ অল-আউট (ভিনস ৮৩, স্টোনম্যান ৫৩, মালান ৫৬, স্টার্ক ৩/৭৭, কামিন্স ৩/৮৫, লায়ন ২/৭৬) ও ২য় ইনিংস ৩৩/২ (স্টোনম্যান ১৯*, রুট ৫*, হ্যাজলউড ২/১১)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৩২৮ অল-আউট (স্মিথ ১৪১*, মার্শ ৫১, কামিন্স ৪২, অ্যান্ডারসন ২/৫০, ব্রড ৩/৪৯, মইন ২/৭৪)
ইংল্যান্ড ৭ রানে এগিয়ে
শেষদিকে ভয়ঙ্কর হয়ে ওঠা হ্যাজলউডের কথা বলা যায়। ইংল্যান্ডকে আরও উইকেট না হারানোর জন্য কৃতিত্ব মার্ক স্টোনম্যান ও জো রুটের, সেটাও বলা যায়। ভুলতে বসা অস্ট্রেলিয়ার টেইল-এন্ডারে নতুন রুপ ফিরিয়ে আনা প্যাট কামিন্সের ইনিংসটাও দারুণ। তবে সবকিছুর পর গ্যাবার তৃতীয় দিনে শুধু একজনের কথাই বলতে হবে। স্টিভেন স্মিথ।
স্টিভ স্মিথের মহাকাব্যিক এক ইনিংসের পর প্রথম ইনিংসে লিড পাওয়া অস্ট্রেলিয়া দিনশেষে চাপে রেখেছে ইংল্যান্ডকে। গ্যাবার ইতিহাসের সঙ্গে প্রথম ইনিংসের লিডটা যেন জড়িয়ে, তবে অস্ট্রেলিয়ার সে লিড পাওয়াতে খুব বেশি করেই জড়িয়ে আছে স্মিথের নাম। অ্যাশেজের তৃতীয় দিনে রোমাঞ্চের অনেকখানিই তাকে ঘিরে। আর দিনশেষে ক্রিজ আঁকড়ে ইংল্যান্ডকে আশা জোগাতে আছেন জো রুট ও মার্ক স্টোনম্যান।
স্মিথ, স্মিথ, স্মিথ। নিয়ন্ত্রণ, শক্তিমত্তা, উদ্ভাবন, পরিকল্পনা। স্টিভ স্মিথের ইনিংস যেন সবকিছুর মিশেল। আধুনিক বডিলাইন বা নিয়ন্ত্রিত লাইন-লেংথ, কাজ হয়নি কিছুতেই। এমন নয়, ইংলিশরা বাজে বোলিং করেছেন। বরং তাদের বোলিং ছিল দারুণ, তবে স্মিথকে টলানো যায়নি কিছুতেই।
কৌশল, উদ্ভাবনী সব ফিল্ডিং বা বোলিংয়ে ইংল্যান্ড চেপে ধরেছিল সকাল থেকেই। শন মার্শ ধরা দিয়েছেন সেভাবেই, স্টুয়ার্ট ব্রডের সিমের ওপর আঙুল ঘোরানো বলের গতি না বুঝে মিড-অফে অ্যান্ডারসনকে ক্যাচ দিয়ে। শেষ ৫৬ রানে ৬ উইকেট হারানো ইংল্যান্ড তখন অস্ট্রেলিয়াকে তেমন কিছু ফিরিয়ে দেওয়ার অপেক্ষায়।
স্মিথের সঙ্গী টিম পেইন, যিনি অভিষেক টেস্টে নেমেছিলেন স্মিথের আগে! টি-টোয়েন্টির টেকনিক, আর টাইমিংয়ের রেশ ধরে খেললেন ৪২ বল। তবে নতুন বল আর জিমি অ্যান্ডারসনের অপেক্ষা ছিল শুধু ইংল্যান্ডের। সেই চিরায়ত জিমি বল, ভেতরের দিকে ঢুকতে গিয়ে বেরিয়ে যাওয়া। পেইন শেষ ওখানেই। ব্রডকে ছয় মেরে স্টার্কও ধোঁকা খেলেন তার সেই গতি ধরে রাখা বলে।
এরপরই স্মিথের আরেক কাব্য শুরু। বলা যায়, স্মিথ সেখানে পার্শ্বনায়ক! এমনিতে কয়েক বছর ধরে অস্ট্রেলিয়ার টেইল-এন্ড বেশ বাজে, সেই টেইল-এন্ডই দেখালো আজ দারুণ কিছু! যার মূলে প্যাট কামিন্স। পুরোদস্তুর ব্যাটসম্যানের মতো খেললেন, করলেন ড্রাইভ, শক্ত থাকলো রক্ষণ। চা-বিরতির আগে ওকসের বলে একমাত্র স্লিপ কুককে ক্যাচ দিয়ে ইংল্যান্ডকে স্বস্তি দিলেন কামিন্স। তার আগেই অবশ্য অস্বস্তি নিয়ে উঠে গেছেন অ্যান্ডারসন। ফিরেছেন আবার যদিও।
আর কামিন্সকে পাশে রেখেই ২১তম সেঞ্চুরিটা পেয়ে গেছেন স্মিথ। ক্যারিয়ারের অন্যতম সেরা ইনিংস যে অস্ট্রেলীয় অধিনায়ক খেললেন আজ, সেটা বলাই যায়! মইনের অফস্পিনে বোল্ড হয়েছেন এরপর হ্যাজলউড, চা-বিরতি থেকে এসে। হ্যাজলউড বা এরপর নামা লায়ন, স্মিথ ভরসা রেখেছেন সবার ওপরেই। শেষেও ওই লায়নই ক্যাচ দিয়েছেন লেগস্লিপে, জো রুটকে।
স্মিথের ইনিংসের পর দারুণ উজ্জ্বীবিত অস্ট্রেলিয়া জেঁকে ধরেছে ইংল্যান্ডকে। হ্যাজলউডকে পুল করতে গিয়ে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছেন কুক, সেটা দারুণভাবে ধরেছেন স্টার্ক। ভিনসও শিকার হয়েছেন হ্যাজলউডের পেস আর সুইংয়ের। দিনের বাকি সময়টাও চরম পরীক্ষা দিতে হয়েছে কুক-স্টোনম্যানকে। স্টার্কের বাউন্সারে হেলমেটে আঘাত পেয়েছিলেন রুট।
এরকম আরও আঘাত সামলানোর প্রস্তুতিটাও তিনি নিয়ে রাখতে পারেন। অন্তত এ টেস্টে ইংল্যান্ডকে ফেরাতে হলে রুট বা তেমন কাউকেই খেলতে হবে দারুণ কোনও ইনিংস।
আজকের দিনে আলোচিত, সেই মহাকাব্যিক স্মিথ ইনিংসের মতো!