মাশরাফির কাজটা সিনেমার মতো শেষ করলেন পেরেরা
চিটাগং ভাইকিংস ২০ ওভারে ১৭৬/৭ (ফন জিল ৬৮; )
রংপুর রাইডার্স ২০ ওভারে ১৮০/৭ ( মিঠুন ৪৪, মাশরাফি ৪২ )
ফলঃ রংপুর ৭ উইকেটে জয়ী
শেষ ওভারে দরকার ১৪ রান, আগের ওভারেই আউট হয়ে গেছেন মিঠুন। প্রথম বলে দুই রান পেরেরা, সমীকরণ দাঁড়াল ৫ বলে ১৩। পরের বলেই ডিপ ব্যাকওয়ার্ড কাভারের ওপর দিয়ে ছয় মারলেন পেরেরা। সমীকরণ চার বলে ছয়, তাসকিনের পরের বলে রান আউট নাহিদুল। পরের বলে ক্যাচ দিলেন নাফীসও, এবার দুই বলে দরকার ছয়। থিসারা পেরেরা দুই রান নিয়ে নিজের কাছে রাখলেন স্ট্রাইক। শেষ বলে দরকার চার, তাসকিন দিইলেন ওয়াইড। জয়ের জন্য দরকার তিন রান, এবার পেরেরা মারলেন ছয়। শেষ বলে ৩ উইকেটের দুর্দান্ত এক জয় পেল রংপুর।
অথচ গেইল বা ম্যাককালাম নন, এই ম্যাচটা রংপুরের মুঠোয় এনে দিয়েছিলেন মাশরাফি। বল নয়, ব্যাট হাতেই। বিপিএলে এখন পর্যন্ত একেবারেই বিবর্ণ ব্রেন্ডন ম্যাককালাম। আজ ২০ বলে ১৫ রান করে যখন আউট হলেন, রংপুরের সঙ্গে জয়ের দূরত্বটা বেড়ে গেছে একটু। এর পরেই চমক, তিনে উঠে এলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। সেই ফাটকাটা এমনভাবে কাজে এলো, ম্যাচটাই তাতে জিতে গেল রংপুর। ১৭৭ রানের লক্ষ্য শেষ বলে গিয়ে টপকে গেল মাশরাফিরা, এক ম্যাচ হারের পর আবারও ফিরল জয়ের ধারায়। আট ম্যাচে চতুর্থ জয় পেল রংপুর, চট্টগ্রাম থাকল পয়েন্ট তালিকার তলানিতেই।
এমন নয়, বিপিএলে এই প্রথম ওপরে ব্যাট করেছেন। দুই বছর আগে কুমিল্লার হয়ে ৩২ বলে ৫৬ রানের এক দুর্দান্ত ইনিংসে নিজেকে ব্যাট হাতে চিনিয়েছিলেন। সেবার নিজেকে নিয়ে এসেছিলেন পাঁচে। তবে তিনে নিয়ে আসবেন, সেটা নিশ্চয় ভাবেনি চট্টগ্রামও। সেই হকচকিত ভাব যখন কাটল, জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামের ওপর দিয়ে বয়ে গেছে একটুকরো ঝড়।
মুখোমুখি দ্বিতীয় বলেই চার মেরে শুরু মাশরাফির। পরের ওভারে সৌম্যকে পর পর দুই বলে দুই চার। যেন জানালেন, আজ ব্যাট হাতে অন্যরকম কিছুই করবেন। তবে এতক্ষণ ছিল ট্রেলার। ছবি শুরু হলো এর পরের ওভারে। আল আমিন বল করছিলেন দারুণ, ম্যাককালামকেও তিনিই ফিরিয়েছিলেন। তাঁর এক ওভারে মাশরাফি মারলেন চার-ছয়। মাশরাফি নামার পর দুই ওভারের মধ্যে তখনো কোনো বাউন্ডারি মারেননি গেইল, আক্ষরিক অর্থেই তখন তিনি দর্শক।
এরপর ফন জিল এলে গেইলও যোগ দিলেন মাশরাফির সঙ্গে, দুজন মিলে নিলেন ১৮ রান। সানজামুলের বলে ছয় মেরে পৌঁছে গেলেন চল্লিশের ঘরে। কিন্তু আবার ছয় মারতে গিয়েই লাইন মিস করে হলেন বোল্ড, কিন্তু মাশরাফির ১৭ বলে ৪২ রানে ইনিংসে রংপুরের আশার পালে তখন জোর হাওয়া।
সেই হাওয়ার গতি একটু পর কমে গেল। তানভীর হায়দারের হাফ ট্র্যাকারটা গেইল যেভাবে মেরেছিলেন, ছয়টাই মনে হচ্ছিল সম্ভাব্য পরিণতি। কিন্তু বাউন্ডারি লাইনে স্নায়ু ঠিক রেখে দারুণ এক ক্যাচ ধরলেন রঙ্কি। যদিও রিপ্লে দেখে মনে হয়েছে, তাঁর পা সীমানাদড়িতে একটু হলেও স্পর্শ করেছে। তবে টিভি আম্পায়ার বার বার দেখেও বদলাতে পারেননি সিদ্ধান্ত, গেইল ফিরেছেন ২৫ বলে ৩৩ রান করে।
তারপরও রংপুরের সামনে সমীকরণ তখন খুব কঠিন নয়, ৯ ওভারে দরকার ৮০ রান। তবে একজনকে থাকতে হতো শেষ পর্যন্ত। সেই কাজটা মোহাম্মদ মিঠুন করবেন বলেই মনে হচ্ছিল। শেষ ২ ওভারেও যখন দরকার ১৯ রান, মিঠুন-পেরেরা ক্রিজে। কিন্তু ১৯তম ওভারে ২৯ বলে ৪৪ রান করে বোল্ড মিঠুন, হঠাৎ করে কঠিন হয়ে গেল জয়ের সমীকরণ। পেরেরার ১৪ বলে ২৮ রানের ইনিংসটাই শেষ পর্যন্ত ম্যাচ জিতিয়েছে।
অথচ চট্টগ্রাম ১৭৬ রানের পর আশায় বুক বাঁধতেই পারত। দারুণ শুরুর পর মাঝের সময়ে গিয়ে খেই হারিয়ে ফেলা- এতোদিন পর্যন্ত এটা ছিল চট্টগ্রামের চিত্রনাট্য। কিন্তু চট্টগ্রাম পর্বেই যেন বদলে গেল। কাল সিকান্দার রাজা আলো ছড়িয়েছিলেন, আজ সেই দায়িত্বটা কাঁধে নিলেন স্টিয়ান ফন জিল।
অথচ এতোদিন চট্টগ্রামকে যিনি পথ দেখিয়েছিলেন, সেই লুক রঙ্কি আজ ফিরে গেছেন অল্পতেই। সৌম্য সরকারের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝিতে যখন রান আউট হয়ে গেছেন, চট্টগ্রাম তখন করেছে মাত্র ১৩ রান। ৩০ রান উঠতে ফিরে গেলেন এনামুল হক বিজয়ও। সৌম্য সরকার শুরুটা ভালোই করেছিলেন, কিন্তু আরও একবার ত্রিশের ঘরে গিয়েই দিলেন আত্মাহুতি। ২৬ বলে ৩০ রানের ইনিংসটা শেষ হলো নাহিদুল ইসলামের বলে বোল্ড হয়ে।
৩ উইকেটে চট্টগ্রামের রান যখন ৫৬, আরও একবার হাল ধরলেন রাজা ও ফন জিল। কাল রাজা ছিলেন মূল কুশীলব, দোসর ছিলেন ফন জিল। আজ সেই ভূমিকা বদলে গেল। ফন জিল অবশ্য শুরুতে একটু সাবধানী ছিলেন, প্রথম ২০ রান করতে খেলেছিলেন ১৮ রান। কিন্তু পেরেরার এক ওভারে চার ছয় মারার পরেই যেন হয়ে উঠলেন অপ্রতিরোধ্য। মালিঙ্গাকে ছয় মেরে ৩০ বলেই করে ফেলেছেন ফিফটি। ওদিকে রাজা ১৮ বলে ২২ রান করে ফেলেছেন। তখনই ভেঙে গেল দুজনের ৭৬ রানের জুটি, রুবেলের বলে নাফিসকে ক্যাচ দিলেন রাজা।
তবে ফন জিল ঝড় চালিয়ে যাচ্ছেন তখনো, ১৬ ওভার শেষে চট্টগ্রাম করে ফেলেছে ১৪৪। পরের ওভারে নজিবুল্লাহ জাদরানও যোগ দিলেন তাঁর সঙ্গে, ১৭ ওভার শেষে রান ১৫৮। কিন্তু শেষ তিন ওভারে তিন উইকেট হারিয়ে রান ১৮০ আর হলো না। পেরেরার বলে ফন জিল আউট হলেন ৪০ বলে ৬৮ রানের বিস্ফোরক এক ইনিংস খেলে। ওই ওভারেই রান আউট লুইস রিস, পরের ওভারে জাদরান আউট হলে রান শেষ পর্যন্ত ১৮০ হলো না। ম্যাচ শেষে সেটির জন্য আফসোস করতেই পারে!