অস্ট্রেলিয়ার এখন শুধু সময়ের অপেক্ষা
প্রথম টেস্ট, গ্যাবা, চতুর্থ দিনশেষে
টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ৩০২ অল-আউট (ভিনস ৮৩, স্টোনম্যান ৫৩, মালান ৫৬, স্টার্ক ৩/৭৭, কামিন্স ৩/৮৫, লায়ন ২/৭৬) ও ২য় ইনিংস ১৯৫ অল-আউট (রুট ৫১, বেইরস্টো ৪২, মইন ৪০, হ্যাজলউড ৩/৪৬, স্টার্ক ৩/৫১, লায়ন ৩/৬৭)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৩২৮ অল-আউট (স্মিথ ১৪১*, মার্শ ৫১, কামিন্স ৪২, অ্যান্ডারসন ২/৫০, ব্রড ৩/৪৯, মইন ২/৭৪) ও ২য় ইনিংস ১১৪/০ (ওয়ার্নার ৬০, ব্যানক্রফট ৫১)
জিততে অস্ট্রেলিয়ার ১০ উইকেটে ৫৬ রান প্রয়োজন
তিনদিন ধরে সেশন ধরে ধরে রঙ বদলানো গ্যাবা টেস্ট চতুর্থ দিনে এসে প্রায় পাকাপাকিভাবেই ধাতস্থ হয়েছে অস্ট্রেলিয়ার দিকে। অ্যাশেজর প্রথম টেস্ট জিতে এগিয়ে যাওয়াটা এখন অস্ট্রেলিয়ার জন্য শুধু সময়েরই অপেক্ষা। প্রথম ইনিংসের মতো দ্বিতীয় ইনিংসেও ব্যাটিং ধ্বসে পড়ে অস্ট্রেলিয়াকে ১৭০ রানের বেশি লক্ষ্য ছুঁড়তে পারেনি ইংল্যান্ড, ডেভিড ওয়ার্নার ও ক্যামেরন ব্যানক্রফটের দৃঢ় ব্যাটিংয়ে নিশ্চিত হয়েছে, গ্যাবায় প্রায় দুই যুগের বেশি সময় ধরে অপরাজিত থাকার রেকর্ডটাও অক্ষুণ্ণ থাকছে অস্ট্রেলিয়ার।
দিনের প্রথম প্রথম ঘন্টায় ইংল্যান্ড ধাতস্থ হয়েছিল প্রায়, আগের দিনের অপরাজিত ব্যাটসম্যান জো রুট ও মার্ক স্টোনম্যানের ব্যাটিংয়ে। স্টোনম্যানের স্পিন-রক্ষণ ভেঙ্গেছে প্রথম দিন থেকেই দারুণ বোলিং করা ন্যাথান লায়নের ওভারস্পিনে। ফ্রন্টফুটে খেলতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন, স্মিথকে শুধু বাঁদিকে নিচু হতে হয়েছে একটু। স্টোনম্যানের মতো প্রথম ইনিংসে ফিফটি করা ডেভিড মালানের পরিণতিও একই, স্মিথ এবার নিচু হয়েছেন ডানদিকে।
দ্রুত দুই উইকেট হারানোর ধাক্কা ইংল্যান্ড সামাল দিয়েছিল রুট-মইনের ব্যাটে। তাদের ইতিবাচক মানসিকতায় ছেদ পড়েছে হ্যাজলউডের ভেতরের দিকে ঢোকা বলে। প্রথম ইনিংসের মতো এবারও ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ রুট, স্মিথের মতো মহাকাব্যিক ইনিংস নয়, ইংলিশ অধিনায়ক থামলেন ফিফটির পরের বলেই। লাঞ্চের আগে অস্ট্রেলিয়া পেল সবচেয়ে বড় পুরষ্কার।
দ্বিতীয় সেশনটা আবার শুরু থেকে শুরু করেছিলেন বেইরস্টো-মইন। শুরু থেকেই আক্রমণাত্মক মানসিকতার ঝলক দেখিয়েছেন দুইজন। লায়নের প্রথম ওভারেই দুইটি চার, খানিক বাদে বেইরস্টো মারলেন ছয়। লিড ১০০ পেরুলো। তাদের ৪২ রানের জুটি ভাঙলেন টিম পেইন। মইন সামনে পা বাড়িয়ে মিস করেছিলেন লায়নের বল। পেইনের স্টাম্পডের আবেদনে আউট দিয়েছেন টিভি আম্পায়ার ক্রিস গ্যাফানি, মইনের পা লাইনের ওপরই ছিল বলে মত তার। মইনের আউট দিয়েই ধ্বস নামলো ইংল্যান্ডের ইনিংসে, শেষ ৪ উইকেট তারা হারিয়েছে ১০ রানে! টেইল-এন্ডারদের সঙ্গে বেইরস্টোকে ব্যাটিং করানোর কৌশলও তাই বিফলেই গেছে।
সূক্ষ্ণ ব্যবধানে আউট হয়েছেন ব্রডও। এবারও ‘ঘাতক’ পেইন। বোলার স্টার্ক, আম্পায়ার দার, অধিনায়ক স্মিথদের কেউই আউটের পক্ষে ছিলেন না। হটস্পট দেখালো সূক্ষ্ণ চিহ্ন, টিভি আম্পায়ার এবারও খুশি তাতেই। এ আউট নিয়ে অবশ্য মইনের আউটের মতো 'বিতর্কের' সুযোগ নেই। এর আগে ওকস আর বেইরস্টো স্টার্কের শর্ট বলের শিকার, বেইরস্টো অবশ্য আপার কাট করতে গিয়ে নিজেই ধরা দিয়েছেন। শর্ট বলকে অস্ত্র মানা অস্ট্রেলীয় পেসারদের রীতি মেনেই কামিন্স দিয়েছিলেন বাউন্সার, বল নিচু হতে গিয়ে শুধু ক্যাচই দিতে পেরেছেন হ্যান্ডসকম্বের হাতে।
১৬৯ রানের পুঁজি নিয়ে ইংল্যান্ডের লড়াইয়ে টিকে থাকার উপায় ছিল একটিই, দ্রুত উইকেট। কুকাবুরা বলে অ্যান্ডারসন শুধু বারকয়েক ঝলক দেখাতে পেরেছেন। কাজে আসেনি ব্রড, ওকস বা বলের বলও। শুরুতে ওয়ার্নারকে আক্রমণ করা থেকে বিরত রাখতে ডিপে ফিল্ডার রাখার কৌশলও কাজে দেয়নি রুটদের। ফরোয়ার্ড ডিফেন্সিফে ‘আন-অর্থোডক্স’ কৌশলের ক্যামেরন ব্যানক্রফটকেও টলাতে পারেননি তারা। ‘কাটা’ আঙ্গুল নিয়ে মইন হয়ে উঠতে পারেননি লায়ন, বোলিংয়ে আসা রুটকেও হেসেখেলেই খেলেছেন দুই ওপেনার।
সুযোগ পেয়ে ধীরে ধীরে খোলস ছেড়ে বেড়িয়ে এসেছেন ওয়ার্নার-ব্যানক্রফট। ওয়ার্নারের পরে ব্যানক্রফট পেয়েছেন টেস্টের প্রথম ফিফটি। একসময় আধাঘন্টা সময় বাড়িয়ে নিয়ে আজকেই খেলা শেষ করার সম্ভাবনাও তৈরী হয়েছিল।
সে সম্ভাবনা বাস্তবে রুপ নেয়নি। তবে গ্যাবায় অস্ট্রেলিয়ার ‘সম্ভাব্য’ জয়ের পথে যে ইংল্যান্ড খুব বেশি বাধা দিতে পারবে, সে সম্ভাবনায় নেই এখন প্রায়!