• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    লুইস ঝড়ে চট্টগ্রামের পাহাড় টপকে গেল ঢাকা

    লুইস ঝড়ে চট্টগ্রামের পাহাড় টপকে গেল ঢাকা    

    চিটাগং ভাইকিংস ২০ ওভারে ১৮৭/৫ (এনামুল ৭৩, রঙ্কি ৫৯; নারাইন ১/১১)

    ঢাকা ডায়নামাইটস ১৮.৫ ওভারে ১৯১/৩ (লুইস ৭৫, ডেনলি ৪৪, ডেলপোর্ট ৪৩*)

    ফলঃ ঢাকা ৭ উইকেটে জয়ী


    বিপিএলে এবার এখন পর্যন্ত ১৭৬ রানের বেশি তাড়া করে কেউ জেতেনি। ১৮৮ রানের লক্ষ্যটা তাই জয়ের জন্য যথেষ্টও বেশি ছিল চট্টগ্রামের জন্য। কিন্তু এভিন লুইসের ঝড়ে সেটিই মামুলি বানিয়ে ফেলল ঢাকা। ৭ বল বাকি থাকতেই ৭ উইকেটের সহজ জয়ে ঢাকা ফিরেছে আবার জয়ের ধারায়। আর নয় ম্যাচের ছয়টিতে হেরে পরের পর্বে ওঠার আশা প্রায় শেষই হয়ে গেল চট্টগ্রামের।

    অথচ ১৮৮ রান তাড়া করতে নেমে শুরুতেই হোঁচট খেয়েছিল ঢাকা। বড় স্কোরের জন্যই, শহীদ আফ্রিদি আরও একবার নেমে এসেছিলেন ইনিংসের শুরুতে। কিন্ত সেই ফাটকা কাজে আসেনি, তাসকিনের বলে রঙ্কির দারুণ এক ক্যাচে আফ্রিদি ফিরে গেছেন কোনো রান না করেই। কিন্তু চট্টগ্রামের সেই উল্লাসধ্বনি মিলিয়ে যেতে খুব সময় লাগেনি।

    ডেনলি-লুইসের শুরুটা কিন্তু স্লথই ছিল বেশ। প্রথম তিন ওভারে কোনো ছয় পায়নি ঢাকা, পাওয়ারপ্লেতে এসেছে ৫১ রান। পাওয়ারপ্লের শেষ ওভারেই সিকান্দার রাজাকে চার-ছয় মেরে শুরুটা করেছিলেন লুইস। তবে এক ঝটকায় ম্যাচের মোড় ঘুরিয়ে দেন লুইস নবম ওভারে এসে। সানজামুলের প্রথম তিন বলে পর পর তিন ছয়, শেষ বলে আরেকটি ছয়। ওই ওভার থেকেই লুইস নিলেন ২৬ রান, ফিফটি পেলেন ২৪ বলে। এক ওভার পর তাসকিনকে আরও একটি ছয়ে পৌঁছে গেলেন সত্তরে। বিপিএলের সবচেয়ে দ্রুততম সেঞ্চুরির কীর্তিও তখন খুব দূরে নয়। শেষ পর্যন্ত ৩১ বলে ৭৫ রান করে যখন ফিরে গেলেন, ঢাকার জয়টা তখন অনেকটাই নিশ্চিত।

    এরপর জো ডেনলি ৩৯ বলে ৪৪ রান করে ফিরলেও চট্টগ্রামের জন্য তা ছিল শুধুই সান্ত্বনা। ডেলপোর্টের ২৪ বলে ৪৩ রানের সঙ্গে সাকিবও অপরাজিত ছিলেন ১৭ বলে ২২ রান করে।

    অথচ ম্যাচের শুরুতে দল ঘোষণার সময় চমকেই দিয়েছিল ঢাকা। কাইরন পোলার্ড নেই, মোহাম্মদ আমিরও নেই। বোলিংয়েও যেন শুরু থেকেই দিশেহারা।

    চট্টগ্রামের দারুণ শুরু মানেই এবার রঙ্কির ঝড়ো শুরু। আজও শুরুতে সৌম্য সরকার ১ রানে আউট হওয়ার সঙ্গে চলতে থাকল রঙ্কির তাণ্ডব। পার্থক্য শুধু একটাই, অন্য ম্যাচে রঙ্কি প্রায় সময় একাই ঝড় তুলে গেছেন, অন্য প্রান্তের সঙ্গী ছিলেন দর্শক। আর আজ বরং রঙ্কিকে ছাপিয়েই গেছেন এনামুল হক বিজয়, একটা সময় নিজের সেঞ্চুরির সম্ভাবনাও জাগিয়েছিলেন। শেষ পর্যন্ত অবশ্য সেটা হয়নি।

    শুরুটা হয়েছিল আসলে সাকিবের পঞ্চম ওভার দিয়ে। ওই ওভারে এনামুলের ছয় মারার পর রঙ্কি সাকিবকে মারলেন আরও দুইটি ছয় ও একটি চার। ওই ওভার থেকেই এলো ২৩ রান, কিন্তু কে জানত সাকিবের জন্য আরও বড় দুঃস্বপ্ন অপেক্ষা করছে। পরের দুই ওভারে আফ্রিদি ও আবু হায়দার রনিকে ছয় মারলেন এনামুল, রঙ্কি তখন দর্শক। সাদ্দামের পরের ওভারে রঙ্কি পেয়ে গেলেন আরেকটি ফিফটি, মাত্র ২৭ বলেই। ১০ ওভার শেষে ঢাকার রান হয়ে গেল ৯৩।

    মাঝের এই ওভারগুলোতে চট্টগ্রামের খেই হারিয়ে ফেলা এবারের বিপিএলের নিয়মিত ঘটনা। তবে আজ সেটি হলো না, এনামুলও সুযোগ পেলেই কচুকাটা করছিলেন। ১২তম ওভারে শহীদ আফ্রিদির বলে ছয় মেরে ৩১ বলেই ফিফটি পেয়ে গেলেন এনামুল, উদযাপনও করলেন তাঁর মতোই। দুজনের সেঞ্চুরি জুটিও হয়ে গেল তখন, ১২ ওভার শেষে ঢাকার রান তখন ১১৭।

    এক ওভার পর সাকিব তুলে নিলেন রঙ্কি, ৪০ বলে ৫৯ রান করে ফিরে গেলেন চট্টগ্রামের কিউই অধিনায়ক। তবে এনামুল তখনো দুর্দান্ত, সাকিবকে আরেকটি ছয় মেরে পৌঁছে গেছেন ষাটের ঘরে। সত্তরের ঘরে পৌঁছানোর পরও আরও বাকি চার ওভারেরও বেশি, সেঞ্চুরি তখন খুবই সম্ভব। কিন্তু এরপরেই যেন একটু খোলসে ঢুকে গেলেন, শেষ পর্যন্ত আবু হায়দারের বলে ক্যাচ দিলেন ডেলপোর্টকে। ৪৭ বলে ৭৩ রানের ওই ইনিংসে ছিল ছটি ছয় ও তিনটি চার। শেষদিকে সিকান্দার রাজার ১১ বলে ২৬ রানে চট্টগ্রাম পেরুল ১৮০। এর মধ্যে অবশ্য রাজা পেয়েছেন জীবন, সহজ সুযোগ ছেড়েছেন মোসাদ্দেক। সেটার জন্য অবশ্য মূল্য দিতে হয়নি ঢাকাকে, ম্যাচটা শেষ পর্যন্ত জিতেছে হেসেখেলেই।