অনিক-মুস্তাফিজে আশা বাঁচিয়ে রাখল রাজশাহী
রাজশাহী কিংস ২০ ওভারে ১৫৭/৬ (স্যামি ৪০; রিস ৩/৩৩)
চিটাগং ভাইকিংস ১৯.২ ওভারে ১২৪ (ফন জিল ২৭, অনিক ৪/১৭, মুস্তাফিজ ২/১৮)
ফলঃ রাজশাহী ৩৩ রানে জয়ী
ঢাকার সঙ্গে ম্যাচে একা মুমিনুলই ছেড়েছিলেন তিনটি ক্যাচ। ফিল্ডিং ভালো হচ্ছে না- আক্ষেপটা বেশ কয়েকবারই জানিয়েছিলেন কোচ সারওয়ার ইমরান ও অধিনায়ক ড্যারেন স্যামি। আজ সেই ফিল্ডিংই জেতাল রাজশাহীকে, তিনটি দারুণ ক্যাচ ও একটি রান আউটেই চিটাগং ভাইকিংসকে হারাল ৩৩ রানে। দশম ম্যাচে এটি রাজশাহীর চতুর্থ জয়, আর চট্টগ্রামের সপ্তম পরাজয়। বিপিএল আনুষ্ঠানিকভাবে শেষ চট্টগ্রামের, আশা বাঁচিয়ে রাখল রাজশাহী।
প্রথম ক্যাচটা অবশ্য সেই অর্থে হাফ চান্স ছিল না। সিকান্দার রাজা দুই ম্যাচ আগেই ৯৫ রানের একটা বিস্ফোরক ইনিংস খেলেছিলেন। আজ শুরুটা মন্থর ছিল, তবে ১৭ বলে ১৭ রান করার পর সেই ইনিংসটা ম্যাচ জেতানো করার ক্ষমতা তাঁর ছিলই। ফন জিলের সঙ্গে তাঁর জুটিটাও হয়ে গিয়েছিল ৩২ রানের। তখনই উসামা মীরকে মারতে গিয়ে বল উঠিয়ে দিলেন, ডিপ স্কয়্যার লেগের সীমানাপ্রান্তে অনেকটা দৌড়ে মাথা ঠান্ডা রেখে ক্যাচ নিলেন নাঈম ইসলাম জুনিয়র।
পরের ক্যাচটা আরও দারুণ, পরিস্থিতির বিচারে আরও মূল্যবান। ফন জিলই ছিলেন চট্টগ্রামের ভরসা, ২৭ রানও করে ফেলেছিলেন। কিন্তু অভিষিক্ত কাজী অনিককে মারতে গিয়ে ক্যাচ তুলে গিয়েছিলেন কাউ কর্নারে। আবারও নাঈম জুনিয়র সেটি ধরেই ফেলেছিলেন, কিন্তু দড়িতে পা দেওয়ার আগে ছুঁড়ে দেন উসামা মীরের দিকে। দুজনের চেষ্টায় আউট হয়ে যান ফন জিল। ঠিক ১০০ রানে চট্টগ্রাম হারিয়ে ফেলে পঞ্চম উইকেট।
জয়ের সমীকরণটা তখন অনেক কঠিন। ৬ ওভারে দরকার ছিল আরও ৫৮ রান, হাতে চার উইকেট। কিন্তু সেখান থেকে তাসের ঘরের মতো গুটিয়ে গেল চট্টগ্রাম। কাজী অনিক নিলেন মোট চার উইকেট, বিপিএল অভিষেকটা হলো স্বপ্নের মতো।
তার আগে চট্টগ্রাম শুরুতেই খায় সবচেয়ে বড় ধাক্কা। লুক রঙ্কি মানেই যেন বিপিএলে চট্টগ্রামের ঝড়ো শুরু। এবারও মোহাম্মদ স্যামির প্রথম ওভারে পেয়েছিলেন দুই চার। কিন্তু স্যামির ওই ওভারে ডিপ মিডউইকেটে তুলে দিয়েছেন ক্যাচ। মিরাজ সেটি নিতে ভুল করনেনি।
তবে এনামুল হক বিজয় ও সৌম্য সরকার তখনও ছিলেন। ৫ ওভারে ৫০ও পার করে ফেলেছিলেন। কিন্তু মুস্তাফিজের বলে সৌম্য ফিরে যাওয়ার পর বিজয়কে আউট করে নিজের প্রথম উইকেট পেয়েছেন অনিক। রাজশাহীর জয়ের পালে জোর হাওয়াও লেগেছে তখনই।
তার আগে রাজশাহীর ইনিংসটা অবশ্য আরও বড় হওয়ার পথে ছিল। কুমিল্লার সঙ্গে এক ম্যাচ আগেই শেষ ওভারের ঝড়ে রাজশাহী ১৮০ পেরিয়ে গিয়েছিল। আজও শেষ দুই ওভারে উইকেটে ছিলেন স্যামি, ক্রিজে সেটও হয়ে গিয়েছিলেন। কিন্তু শেষ ওভারে শুধু একটা ছয় মারতে মারলেন, রাজশাহীও পারল না ঝড় তুলতে। চট্টগ্রামমে তাই ১৫৮ বেশি লক্ষ্য দিতে পারেনি।
মুমিনুল হক শুরুতেই আউট হয়ে যাওয়ার পর লুক রাইট ও জাকির হাসানের ব্যাট পথ দেখাচ্ছিল রাজশাহীকে। জাকির আভাস দিচ্ছিলেন দারুণ কিছুর। কিন্তু রিসকে ছয় মারার পরের বলেই স্লোয়ারে বিভ্রান্ত হয়ে হয়ে যান বোল্ড। ১১ বলে ১৭ রানেই থেমে যায় তাঁর ইনিংস।
রাইট এখন পর্যন্ত তাঁর প্রতি আস্থার সেভাবে প্রতিদান দিতে পারেননি। আজও থিতু হয়ে গিয়েও বড় কিছু করতে না পারার জন্য দুষবেন নিজেকে। ২১ বলে ২৫ রান করে আউট হয়ে গেছেন ইংলিশ এই ওপেনার।
মুশফিক এরপর শুরুই করেছিলেন দুই চারে। এরপর একটু স্লথ হয়ে যান। ১০ ওভার শেষে রাজশাহী ৬৯ রানের বেশি তুলতে পারেনি। সানজামুলের এক ওভারেই ১৫ রান নিয়ে পৌঁছে যান ত্রিশে। কিন্তু সুযোগটা কাজে লাগাতে পারেননি আরও একবার, নাঈম হাসানের বলে ক্যাচ দিয়ে ফিরেছেন ২২ বলে ৩১ রান করে।
এরপর ফ্রাঙ্কলিন ও স্যামি মিলে পথ দেখিয়েছেন রাজশাহীকে। পরের ৮ ওভারে দুজন মিলে তুলেছেন ৬৯ রান। স্যামির কাছ থেকে শেষে অবশ্য যে ঝড়ের আশা ছিল, সেটা মেটাতে পারেননি। ২৫ বলে ৪০ রানের ইনিংসের পর দিন শেষে অবশ্য অতৃপ্তি থাকবে না স্যামির, ম্যাচটা যে জিতেছেন সহজেই।