সব ছাপিয়ে রুটের টস-সিদ্ধান্ত?
দ্বিতীয় টেস্ট, অ্যাডিলেড, ১ম দিনশেষে
টস-ইংল্যান্ড (ফিল্ডিং)
অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ২০৯/৪ (খাওয়াজা ৫৩, ওয়ার্নার ৪৭, স্মিথ ৪০, অ্যান্ডারসন ১/৪৫, ওভারটন ১/৪৭)
নাসের হুসেইন, গ্যাবা, ২০০২। রিকি পন্টিং, এজবাস্টন, ২০০৫। অ্যাশেজে টস জিতে নেওয়া সিদ্ধান্তের কথা উঠলেই আসে দুইজনের নাম। ২০১৭ সালে অ্যাডিলেড ওভালে জো রুটও কি সে তালিকায় যুক্ত হলেন? আগের ৭টি দিবা-রাত্রির টেস্টে সব অধিনায়কই টসে জিতে ব্যাটিং নিয়েছিলেন, রুট নিলেন ফিল্ডিং। এ ভেন্যুতে আগের দুইটি দিবা-রাত্রির টেস্টে প্রথমে ফিল্ডিং করে জিতেছিল অস্ট্রেলিয়া, রুটের সিদ্ধান্তে প্রভাব ফেলেছে সেই পরিসংখ্যান? তবে রুটের সিদ্ধান্তের পেছনে যুক্তি, মেঘাচ্ছন্ন আকাশের নিচে তিনি পেসারদের বাড়তি সুবিধা দিতে চেয়েছিলেন। সে সুবিধা তার বোলাররা নিতে পারেননি খুব একটা, প্রথম দিনে অস্ট্রেলিয়ার ৪ উইকেট নিয়েই সন্তুষ্ট থাকতে হয়েছে রুটদের। তবে এ চারজনের তালিকায় আছে স্টিভেন স্মিথের নাম, সেটাই বোধহয় অনেক বড় সন্তুষ্টি!
রুটের এনে দেওয়া ‘সুবিধা’ ইংলিশ পেসাররা নিবেন কি, উলটো তীব্র বাতাসে নিজেরাই পড়লেন অসুবিধায়। ১২তম ওভারে নামলো বৃষ্টি, যে বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিল আগে থেকেই। তবে বৃষ্টির আগে ইংলিশ পেসাররা লাইন-লেংথ ঠিক করতে পারেননি, শর্ট লেংথে বল করেছেন বেশি, অস্ট্রেলিয়ান ওপেনাররাও তাই ফ্রন্টফুটে খেলার ঝুঁকি না নিয়েই টিকে গেছেন। তবে বৃষ্টি যতোই অ্যাডিলেডকে সিক্ত করুক, ততক্ষণে বুঝা গেছে, উইকেট আসলে শুকনো!
প্রথমবার বৃষ্টি থেমে খানিকবাদেই ফিরে এসেছে আবার, চা-বিরতিতে তাই যেতে হয়েছে আগেভাগেই। বিরতির পরই প্রথম সাফল্যের দেখা পেয়েছেন ইংল্যান্ড, তবে তাতে অবশ্য বোলারের অবদান নেই সেভাবে! শর্ট কাভারে ওয়ার্নারের শট মইন মিস করলেন, রানটা তখনোই নিতে চাইলেন দুই ওপেনার। ওয়ার্নার মত বদলিয়ে নিলেন। ব্যানক্রফট ফিরতে পারলেন না, সময় নিয়ে লক্ষ্যভেদ করতে ভুল হয়নি ওকসের। ইংল্যান্ডকে এ উইকেট উজ্জ্বীবিত করলো খানিকটা।
তবে দ্রুতই নড়বড়ে হলেন না ওয়ার্নার বা খাওয়াজারা। অফস্পিনে নিজের জুজু যেন নিজেই কাটিয়ে উঠলেন খাওয়াজা, তবে শর্ট বলে পুল বা হুক করার প্রবণতা ভুগিয়েছে তাকে। ৪৪ রানে ডিপ স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন, স্টোনম্যান ছুটে এসেও রাখতে পারেননি হাতে। দ্বিতীয় অ্যাশেজ ফিফটিটা এরপরই পেয়েছেন তিনি। এর আগে সেই ওকসের ব্যাক অব আ লেংথের বলে লাফিয়ে উঠে আলতো হাতে খেলতে গিয়ে ওয়ার্নার ক্যাচ দিয়েছেন বেইরস্টোকে।
ডিনারের বিরতিটা যেন আশির্বাদ হয়ে এলো ইংল্যান্ডের জন্য। অ্যান্ডারসন-ব্রডরা সুইং পেতে শুরু করলেন, বোলিং করতে লাগলেন আগের চেয়ে ফুললেংথে। লাইনও হলো ঠিকঠাক। অ্যান্ডারসনের বেরিয়ে যাওয়া বলে শরীর থেকে দূরে শট খেলতে চেয়েছিলেন খাওয়াজা, গালিতে হলেন ক্যাচ।
তবে দিনের সবচেয়ে বড় উইকেটটা পেলেন অভিষিক্ত ক্রেইগ ওভারটন। স্মিথের জন্য এদিনও বিচিত্র ফিল্ডিং সাজিয়েছিলেন রুট, ক্যাচিং মিড-অনের পাশে ক্যাচিং মিড-উইকেটও ছিল। অ্যান্ডারসনের সঙ্গে কয়েক দফা কুশল বিনিময় করলেন স্মিথ, ব্যাটিংয়েও থাকলো সেই ‘অনিয়ন্ত্রিত’ নিয়ন্ত্রণ। ওভারটনের ফুললেংথের বলটা আক্রমণ ও রক্ষণের মাঝে থেকে খেলতে গিয়ে মিস করলেন। প্যাড-ব্যাট হয়ে হলেন বোল্ড!
ফ্লাডলাইটের আলোয় ব্যাটিং করাটা ভয়ঙ্কর রীতিমতো, তবে পরিসংখ্যান বলে দিবা-রাত্রির টেস্টে শেষ সেশনের চেয়ে প্রথম সেশনেই উইকেট পড়ে বেশি! ব্যাটসম্যানদের অতি-রক্ষণশীলতায় হয়তো উইকেট হারাতে দেয়না শেষদিকে। হ্যান্ডসকম্ব বা মার্শরাও যেমন দিলেন না। শেষ ১৬ ওভারে ৪২ রান তুলেছেন দুইজন, দ্বিতীয় নতুন বলে অ্যান্ডারসনের এক ওভারও কাটিয়েছেন নিরাপদেই।