• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    'ফ্রম অস্ট্রেলিয়া উইথ লাভ'

    'ফ্রম অস্ট্রেলিয়া উইথ লাভ'    

    ভারতীয় সাংবাদিক সুরেশ মেননের এক বন্ধু তার বিছানার চাদরের একটা অংশ কেটে অনেকদিন আগলে রেখেছিলেন। সে চাদরের ওপর যে বসেছিলেন ভগবত চন্দ্রশেখর। একটা অটোগ্রাফ বা স্মারক কতোজন কত যত্নে রেখে দেন। ক্রিকেটারদের সঙ্গে ভক্তদের আত্মিক যোগাযোগ বোধহয় এমনই। তবে ব্যাপারটা কিছুটা একপক্ষীয়। একপক্ষ দেয়, আরেকপক্ষ নেয়। এ ঘটনাটা অবশ্য কিছুটা উল্টোই। 

    অ্যান্ড্রিউ জোনস নামের এক অস্ট্রেলিয়ানের কাছেও ছিল একজোড়া গ্লাভস। ৩৯ বছর ধরে গ্লাভসজোড়া সযত্নে আগলে রেখেছিলেন তিনি। সাবেক ইংলিশ উইকেটকিপার ডেভিড বেইরস্টোর সই করা ছিল তাতে। সেই গ্লাভসজোড়া জোনস এবার উপহার দিলেন আরেকজনকে। প্রাপকের নাম জনি বেইরস্টো বলে বলায় যায়, জোনস আসলে ফিরিয়ে দিয়েছেন গ্লাভসজোড়া! বাবার গ্লাভস এতদিন পর উপহার পেয়ে আপ্লুত হয়ে পড়েছেন জনি। 

    ‘৩৯ বছর ধরে এগুলো আছে আমার কাছে। বাবা-মা একদিন আমাকে ওয়েস্ট লেকসের (অ্যাডিলেডে) শপিং মলে নিয়ে গিয়েছিলেন, সেখানেই ইংলিশ ক্রিকেটারদের সঙ্গে দেখা করার ব্যবস্থা ছিল’, এবিসি গ্র্যান্ডস্ট্যান্ডকে বলেছেন জোনস। 

    ‘তারা একটা প্রশ্ন জিজ্ঞাসা করেছিল। ইংল্যান্ড দলে অতিরিক্ত উইকেটকিপারের নাম। হাত তুলে আমি উত্তর দিয়েছিলাম। তারাই আমাকে গ্লাভসজোড়া উপহার দেয়, যাতে সই করে দেন ডেভিড বেইরস্টো। ৩৯ বছর ধরে একটা বাক্সে সেগুলো তুলে রেখেছিলাম আমি।’ 

    বেইরস্টোর সই ছিল বলেই তার খবরাখবর রাখতেন জোনস। জনি বেইরস্টোর বয়স যখন আট, তখন তার বাবা আত্মহত্যা করেন। 

    জোনসের জন্ম ইংল্যান্ডে, তবে ১৯৬৬ সালে তার পরিবার চলে আসে অস্ট্রেলিয়ায়। জনি বেইরস্টোর নাম শোনার পর থেকেই ইচ্ছা ছিল, তিনি অ্যাডিলেডে আসলে যোগাযোগের চেষ্টা করবেন। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও অনুসরণ শুরু করেছিলেন তাই। তবে ইন্সটাগ্রামে জনির এক লক্ষ অনুসরণকারী, এ তথ্যে কিছুটা হতাশই হয়ে পড়েছিলেন! তার বার্তা কি আর খেয়াল করবেন ‘ছোট’ বেইরস্টো! 

    ঠিক উল্টোটাই হলো। বেইরস্টোর তরফ থেকে যোগাযোগ করা হলো জোনসের সঙ্গে, দেখা করতে চান বলে। সেটা হয়েও গেল, অ্যাডিলেড টেস্টের তৃতীয় দিন। উত্তেজনা সামলাতে না পেরে নির্ধারিত সময়ের আগেই চলে এসেছিলেন জোনস। বেইরস্টোর সঙ্গে ৪৫ মিনিট সময় কাটিয়েছেন এরপর। সেখানেই তাকে উপহার দিয়েছেন তার বাবার গ্লাভসজোড়া। 

    ‘এ বছরের জুনেই আমি আমার বাবাকে হারিয়েছি। তার জীবনটা অসাধারণ ছিল। আমি তাই জানি, কেউ যদি এসে আমাকে কিছু একটা দেয়, যেটা আমার বাবার ছিল, আমি অবশ্যই সেটা চাইব। জনির জন্যও আমি সেটাই করতে চেয়েছি।’ 

    ‘গ্লাভসগুলো পেয়ে সে আসলে আবেগী হয়ে পড়েছিল।’

    বেইরস্টো নিজে এ অভিজ্ঞতাকে বলেছেন ‘অভাবনীয়’, ‘আসলে আমি ভাগ্যবান। বিশ্বের নানাপ্রান্তে যাই। প্রায় সবখানেই আমার বাবাকে নিয়ে দারুণ কিছু গল্প শুনি!’ 

    এ গল্পটা বোধহয় ছাপিয়ে গেছে সবকিছুকেই!