• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    রুট-এর ওপর ইংল্যান্ডের ইতিহাসের আশা

    রুট-এর ওপর ইংল্যান্ডের ইতিহাসের আশা    

    দ্বিতীয় টেস্ট, অ্যাডিলেড, ৩য় দিনশেষে
    টস-ইংল্যান্ড (ফিল্ডিং)
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৪৪২/৮ ডিক্লে. (মার্শ ১২৬*, পেইন ৫৭, খাওয়াজা ৫৩, ওয়ার্নার ৪৭, স্মিথ ৪০, ওভারটন ৩/১০৫, ব্রড ২/৭২) ও ২য় ইনিংস ১৩৮ অল-আউট (খাওয়াজা ২০, স্টার্ক ২০, মার্শ ১৯, অ্যান্ডারসন ৫/৪৩, ওকস ৪/৩৬)
    ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ২২৭ অল-আউট (ওভারটন ৪১, কুক ৩৭, ওকস ৩৬, লায়ন ৪/৬০, স্টার্ক ৩/৪৯) ও ২য় ইনিংস ১৭৬/৪* (রুট ৬৭*, স্টোনম্যান ৩৬, মালান ২৯, স্টার্ক ২/৬৫, লায়ন ১/৩৭)
    ইংল্যান্ডের ৬ উইকেটে ১৭৮ রান প্রয়োজন 



    সহজেই বলে দেওয়া যায়, এই অ্যাশেজের গতিপথ নির্ভর করছে আগামীকালের ওপর। সহজ হিসাব, প্রয়োজনীয় ১৭৮ রানের অঙ্কটা ইংল্যান্ডের ইতিহাসে বেশ তাৎপর্যপূর্ণ, কারণ এতেই তৈরী হতে পারে নতুন ইতিহাস। এটা আরও সহজ, অস্ট্রেলিয়ার প্রয়োজনীয় ৬ উইকেটের অঙ্কটা তাদের কাছে গুরুত্বপূর্ণ। অ্যাডিলেড টেস্টের চতুর্থ দিনশেষে আপনি সহজেই বলে দিতে পারেন, টেস্ট ক্রিকেটের নতুন সংস্করণে সেই আদি ও অকৃত্রিম রোমাঞ্চের এমন ছোঁয়া আপনি সাম্প্রতিক সময়ে খুব একটা পাননি! 

    জেমস অ্যান্ডারসনের ৫ উইকেট, অস্ট্রেলিয়ার ৩৫৪ রানের ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্য, ইংল্যান্ডের দারুণ শুরু, অস্ট্রেলিয়ার উঠোউঠি আঘাত, রুটের প্রতিরোধ, মালানের প্রতি-আক্রমণ, সবশেষে মালানের উইকেট, মোটা দাগে ফুটে উঠবে এসবই। তবে এসব শুধু গল্পের শিরোনাম মাত্র, এর ভাঁজে ভাঁজে আছে আরও গল্প, আরও নাটক, আরও রোমাঞ্চ! 

     

     

    গোলাপি বলে কাল অ্যান্ডারসন যেন ফিরে পেয়েছিলেন নিজেকে, আজ ছাড়িয়ে গেলেন নিজেকে। অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবার পেলেন ৫ উইকেট। নাইটওয়াচম্যান ন্যাথান লায়নকে ডেরায় ফেরাতে একটু সময় নিলেন অ্যান্ডারসন, সেটাও অবশ্য খুব বেশি নয়। অফসাইডে খেলতে গিয়ে আকাশে তুলেছিলেন, ক্যাচ নিয়েছেন ব্রড। আগেরদিন লায়নের সঙ্গী হ্যান্ডসকম্ব শিকার স্লিপে মালানের দারুণ ক্যাচে। টিম পেইনের ক্যাচটাও দারুণ ছিল ওভারটনের, ওকসের বলে। তার বলেই ইনসাইড-এজে বোল্ড শন মার্শ, সঙ্গে বিচ্ছিন্ন মিচেল স্টার্কের সঙ্গে ছোট কিন্তু গুরুত্বপূর্ণ ৩২ রানের জুটি। স্টার্ক এরপর ক্যাচ দিলেন মইনকে, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে প্রথমবারের মতো বলটা উঁচিয়ে গ্যালারির দিকে তাক করলেন অ্যান্ডারসন। পুরোনো চাল যদি ভাতে বাড়ে, তবে অ্যান্ডারসনের মতো পুরোনো বোলার কারুকার্য দেখাতে পারেন গোলাপি বলেও, অস্ট্রেলিয়ার মাটিতেও! অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসটা শেষ করেছেন ওভারটন, দারুণ শর্ট বলে ক্যাচ দিতে বাধ্য হয়েছেন জশ হ্যাজলউড। 

    প্রথম ইনিংসে ফলো-অন না করানো স্মিথের জন্য এরপর অপেক্ষা করে ছিল বিচিত্র এক দিন। ৩৫৪ রানের ছুঁড়ে দেওয়া লক্ষ্য, জিততে হলে ইংল্যান্ডকে ভাঙতে হবে রান-তাড়ায় নিজেদের রেকর্ড। অ্যালেস্টার কুক ও মার্ক স্টোনম্যানের শুরুটা হলো ধীরস্থির। স্টার্ককে পরপর তিন বলে প্যাডের ওপরের বলে ফ্লিক করে চার মেরে পরের গিয়ারে গেলেন স্টোনম্যান। সিরিজে প্রথমবার প্রথম উইকেট জুটি ৫০ পেরুলো ইংল্যান্ডের। তবে তারা কাটাতে পারলেন না লায়ন-জুজু। দুই বাঁহাতিকে পেয়ে বসলেন অস্ট্রেলিয়ান ‘গোট’, সোজা বলে ফ্লিক করতে গিয়ে এলবিডাব্লিউ কুক। ২,৭, ৩৭, ১৬-কুকের অ্যাশেজটা ভাল যাচ্ছে না মোটেও। কুকের উইকেটও অস্ট্রলিয়া পেলো রিভিউ নিয়ে। স্মিথ পেলেন দায়মোচনের সুযোগ। ১ রানে দাঁড়িয়েই এলবিডাব্লিউ হতে পারতেন কুক, আম্পায়ার আউট দেননি, স্মিথও নেননি রিভিউ। 

    একটা উইকেট আরেকটা ডেকে আনে, কুকের বিদায়ে ছন্দপতন হলো স্টোনম্যানেরও। স্টার্কের অফস্টাম্পের বাইরের বল আগবাড়িয়ে খেলতে গিয়ে গালিতে ক্যাচ, ৩৬ রানের মচমচে ইনিংসও শেষ। ভিনস আর রুট ডিনারে গেলেন, সঙ্গী হলো পরের সেশনের চ্যালেঞ্জ। ফ্লাডলাইট, গোধূলি, গোলাপি বল- অ্যান্ডারসনরা আগেরদিন যেসব পেয়ে হয়ে উঠেছিলেন ভয়ঙ্কর। ভিনস উইকেটটা বিলিয়ে দিলেন, আলগা শট খেলার ইচ্ছা ভর করেছিল তার ওপর। 

    স্মিথের জোড়া রিভিউ হতাশা এরপর। রুট-মালান, দুজনের বিপক্ষেই নিলেন এলবিডাব্লিউর রিভিউ, দুবারই ব্যর্থ। এর আগে আবার রুট নিজেই বাঁচলেন রিভিউ নিয়ে, কট-বিহাইন্ড থেকে। পরে মালানের ক্যাচ স্লিপে ছাড়লেন স্মিথ নিজেই, অন্তত ফিল্ডার তিনি বলে হতাশাটা আরও বেশি তার! 

    এ জুটির সময় শুধু ‘উহ, আহ, ইশ’ করে গেছেন অস্ট্রেলিয়ানরা। ব্যাটের দুইদিকে এজে লেগে বেরিয়ে গেছে বল, ক্যাচ পড়েছে সামনে, বল গেছে গ্যাপে। শেষ পর্যন্ত কামিন্সের রাউন্ড দ্য উইকেট ডেলিভারিতে রক্ষণ ভেঙ্গে গেছে মালানের, অস্ট্রেলিয়ার উদযাপনটাই বলে দিচ্ছিল, কতো দরকার ছিল সে উইকেটটা। 

    পরের কঠিন সময়টা সামলেছেন রুট-ওকস। অ্যাডিলেডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি দর্শকের রেকর্ড হয়ে গেছে এরই মাঝে। ইংল্যান্ডের ইতিহাসে সবচেয়ে বেশি রান-তাড়ায় আশা হয়ে আছেন তাদের ‘রাজকুমার’, জো রুট। যিনি টস জিতে নিয়েছিলেন ফিল্ডিং। স্মিথ তার বোলারদের নিয়ে টলাতে পারবেন তাকে? সেই স্মিথ, যিনি ইংল্যান্ডকে ফলো-অন না করিয়ে ফ্লাডলাইটের আলোর নিচে নিজের ব্যাটসম্যানদের ঠেলে দিয়েছিলেন! 

    স্মিথ বা রুট, একজন করবেন কাল দায়মোচন। অ্যাশেজ ঝুঁকে পড়বে সেভাবেই।