• বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ
  • " />

     

    কুমিল্লাকে পাত্তা না দিয়ে ফাইনালে ঢাকা

    কুমিল্লাকে পাত্তা না দিয়ে ফাইনালে ঢাকা    

    ঢাকা ১৯১/৭, ২০ ওভার (লুইস ৪৭, ডেনলি ৩২, পোলার্ড ৩১, আফ্রিদি ৩০, হাসান ৩/১৬ ) 
    কুমিল্লা ৯৬ অল-আউট, ১৮ ওভার (তামিম ৩১, হাসান ১৮, মেহেদি ১৫, আফ্রিদি ৩/১৬, মোসাদ্দেক ২/২৪, সাকিব ২/১৯)
    ফল : ঢাকা ৯৫ রানে জয়ী 


    বিপিএলের ফরম্যাটটাই এমন, গ্রুপপর্বের শীর্ষ দুই দলকে ফাইনালে যেতে দেয় বাড়তি সুযোগ। ঢাকার সঙ্গে প্রথম কোয়ালিফাইয়ার ম্যাচে কুমিল্লার পারফরম্যান্স যেন বলছিল, সেই বাড়তি সুযোগটাই নিতে চান তারা। ১৯২ রানের লক্ষ্যে কুমিল্লা হেরেছে ৯৫ রানের বিশাল ব্যবধানে। ব্যাটে-বলে কুমিল্লার সবচেয়ে বড় হন্তারক হয়ে দাঁড়িয়েছিলেন এ ম্যাচেই দলে ফেরা শহিদ আফ্রিদি। ফাইনালে যেতে হলে এখন রংপুর বাধা পেরুতে হবে কুমিল্লাকে।

    কুমিল্লার শুরুটাই হয়েছিলে এলোমেলো। আগের ম্যাচে নিজের সর্বোচ্চ স্কোর গড়া লিটন ব্যর্থ এদিন। মোসাদ্দেককে ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে খেলতে এসে ফিরতি ক্যাচে লিটন উইকেট দিলেন প্রথম ওভারেই। বাটলার আরেকবার এই বিপিএলটা ভুলে থাকার একটা কারণ যুক্ত করলেন নিজেই, জায়গা বানিয়ে সাকিবকে খেলতে গিয়ে বলের নাগালই পেলেন না! প্রথম বলে ফ্রন্টফুটে শুধু চার মেরেছিলেন একটি। 

    তামিম আউট হতে পারতেন ২ রানেই। লেগস্টাম্পে লাগতে পারতো মোসাদ্দেকের বল, তবে আম্পায়ার দেননি এলবিডাব্লিউ। এরপর মোসাদ্দেককেই জোরের ওপর মারতে গিয়ে স্কয়ার লেগে ক্যাচ দিয়েছিলেন, সেটা মিস করেছেন আবু হায়দার। এরপর দিলেন আরেকটা ক্যাচ, এবার আফ্রিদির বলে নাগাল পেলেন না ঠিক সাকিব। একটা ছয়ে মেরেছিলেন, তবে তামিম তখনও ঠিক স্বস্তিতে ছিলেন না যেন। একবার তো হাত থেকে ছুটেই গেল ব্যাট। শেষ পর্যন্ত তামিমের ইতি ঘটলো আফ্রিদির বলে নাগাল না পেয়ে। তেঁঁড়েফুঁড়ে মারতে এসে হলেন স্টাম্পড। 

     

     

    তামিমের আগেই মোসাদ্দকের নিচু হওয়া বলে বোল্ড হয়েছেন ইমরুল, মিরপুরের উইকেটের অসমান বাউন্সের আরেক শিকার তিনি। স্যামুয়েলস রনির বলের অ্যাঙ্গেলটাই ধরতে পারলেন না, বেরিয়ে যাওয়া বলে উইকেটের পেছনে ইতি ঘটলো তার। ততক্ষনে যাওয়া-আসা শুরু হয়ে গেছে কুমিল্লার ব্যাটসম্যানদের। ডোয়াইন ব্রাভো আফ্রিদির বলে এলবিডাব্লিউ। হয় আম্পায়ার আফ্রিদির আবেদন করার ক্ষমতা দেখছিলেন, আর নাহয় তার আবেদনে আম্পায়ার মত বদলালেন! তামিমের উইকেটও আফ্রিদি নিয়েছিলেন এই ওভারেই, সঙ্গে আবার মেইডেনও। 

    কুমিল্লার রান-তাড়া তখন প্রায় অসম্ভব এক যাত্রায় পরিণত হয়েছে, সেখানে একমাত্র আলোকদিশারি ছিলেন মালিক। নিজের দ্বিতীয় ওভারে এসে সাকিব সেই মালিককেই ফেরালেন, স্লগ সুইপ করতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন কুমিল্লার শেষ ভরসা। তার আগেই সরাসরি থ্রোতে সাইফউদ্দিনকে রান-আউট করেছেন সাকিব। 

    হাসানের ১৬ বলে ১৮ রানের ইনিংস কিছুই করতে পারলো না, মেহেদি অপরাজিত থাকলেন ১৫ বলে সমানসংখ্যক রান করে। আল-আমিন ৮ বলে ০ রান করে লুইসকে ক্যাচ দিলেন আফ্রিদির বলে। কোয়ালাইফাইয়ার ম্যাচটাও যেমন কুমিল্লাকে শূন্যই উপহার দিল! 

    ব্যাটিংয়ে অবশ্য ঢাকা ১৯১ রানে পৌঁছেছিল দীর্ঘ ব্যাটিং লাইন-আপের সমন্বিত প্রচেষ্টায়। ‘নতুন’ ওপেনার মেহেদি মারুফকে শুরুতেই হারানোর ধাক্কা সামাল দিয়েছিলেন এভিন লুইস ও জো ডেনলি। ডেনলি একপ্রান্ত আগলে রাখার দায়িত্ব নিয়েছিলেন, আক্রমণাত্মক ছিলেন লুইস। পাওয়ারপ্লে শেষ করলেন চারের পরে ছয় মেরে, এলো ৬৫ রান। সে লাগাম টেনে ধরলেন শোয়েব মালিক, ৭ম ওভারে তিনি দিলেন ছয় রান, পরের ওভারে হাসান দিলেন চার। চাপ আলগা করতে লুইস মালিকের পরের ওভারে একটা ছয় মারলেন, সেটার পুনরাবৃত্তি করতে গিয়েই ৩২ বলে ৪৭ রান করে হলেন বোল্ড। 

    ঢাকার ইনিংস চলছিল এরপর সমত্বরণেই। ১৮ বলে ৩১ করে ব্রাভোর বলে সোজা ওপরে ক্যাচ তুললেন পোলার্ড, স্যামুয়েলসের সরাসরি থ্রোতে শেষ হলো ২৫ বলে ৩২ রান করা ডেনলির টিকে থাকার লড়াই। পোলার্ডের মতো উপরে তুললেন সাকিবও। আফ্রিদির মরিয়া শটের প্রদর্শনী শুরু হয়েছে আগেই, এর মাঝে অবশ্য ছিল ‘ক্লিন-হিট’ও। হাসানের শর্ট বলে আড়াআড়ি খেলতে গিয়ে ক্যাচ দিলেন তিনি, তার আগের বলেই ফুলটসে লং-অনে ক্যাচ দিয়েছেন মোসাদ্দেক। তৃতীয় আম্পায়ার বেশ কিছুক্ষণ পরীক্ষা করেও সেটা বৈধ বল বলেই রায় দিয়েছেন। 

    সেটা নো না হলেও ১৯তম ওভারে এলো মাত্র ২ রান, সাইফউদ্দিনের শেষ ওভারে ১১ রান নিয়ে সেটা পুষিয়ে দিতে চাইল ঢাকা। তবে ঢাকাকে ঠিক লাগামছাড়া হতে দিলেন না মালিক আর হাসানই। মালিকের বোলিংয়ে অবশ্য উইকেটের সহায়তা থাকলো, অনিয়মিত বাউন্স কাজে দিয়েছে মালিকের টার্ন করা বলগুলোকে খেলার জন্য অসম্ভব বানিয়ে দিতে।

    তবে শেষে গিয়ে ম্লান হয়ে গেছে মালিক-হাসানের বোলিং। ঢাকার রানটা তাড়া করাই যে অসম্ভব বানিয়ে ফেলল কুমিল্লা!