উলটো ইংল্যান্ডকেই চাপে রাখলেন স্মিথ
৩য় টেস্ট, পার্থ
২য় দিনশেষে
টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
ইংল্যান্ড ৪০৩ অল-আউট (মালান ১৪০, বেইরস্টো ১১৯, স্টার্ক ৪/৯১, হ্যাজলউড ৩/৯২)
অস্ট্রেলিয়া ২০৩/৩ (স্মিথ ৯২*, খাওয়াজা ৫০, ওভারটন ২/৪৬, ওকস ১/৪২)
এই অ্যাশেজের গল্প যখন অনেকদিন পর ইংল্যান্ডের কেউ করবে, তখন ঘুরেফিরে আসবে কি স্টিভেন স্মিথের নামটাই? ইংলিশ বোলারদের কাছে রীতিমতো বিভীষিকা হয়ে দাঁড়িয়েছেন অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক। জনি বেইরস্টোর সেঞ্চুরি, ডেভিড মালানের সঙ্গে তার রেকর্ড জুটির সুখস্মৃতির পর টেইল-এন্ড চোখের নিমিষে শেষ হয়ে যাওয়ার তিক্ত অভিজ্ঞতা বা দুই অস্ট্রেলিয়ান ওপেনারকে কম সময়ের ব্যবধানে ফেরানোর স্বস্তি, মিশ্র সব অনুভূতির ভীড়ে জো রুটের হয়তো সবচেয়ে বেশি খচখচ করছে তো ওই স্মিথ নামটাই। দিনশেষে ৯২ রানে অপরাজিত তিনি, ৭ উইকেট হাতে নিয়ে পার্থে অস্ট্রেলিয়া পিছিয়ে ২০০ রানে।
সকালের শুরুতে রীতিমত অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের ওপর ছড়ি ঘুড়িয়েছিলেন বেইরস্টো-মালান। দারুণ সব ড্রাইভ ওয়াকা-র বজ্রগতির আউটফিল্ডে শুধু অস্ট্রেলিয়ার হতাশা জাগিয়ে ঘুরে বেড়িয়েছে। প্রথম ঘন্টায় ইংল্যান্ডের রান তোলার গতিও ছিল দারুণ। ১৮ মাস আর ৩৭ ইনিংস পর সেঞ্চুরিখরা ঘুচেছে বেইরস্টোর। নিজের হেলমেট নিজের মাথায় গুঁতো দিয়ে সেঞ্চুরি উদযাপনে থাকলো তার সাম্প্রতিক ঘটনার প্রতিচ্ছবি, আকাশপানে তাকিয়ে স্মরণ করলেন আত্মহত্যা করা বাবাকেও। আর ৫ম উইকেটে মালানের সঙ্গে তার জুটি ভাঙলো ৭৯ বছরের পুরোনো রেকর্ড। ৫ম উইকেটে ১৯৩৮ সালের ট্রেন্টব্রিজ টেস্টে ২০৬ রান যোগ করেছিলেন ডেনিস কম্পটন ও এডি পেইনটার। এ জুটিতে এলো ২৩৭।
যেটা ভাঙলো ইনিংসে মালানের প্রথম ভুলে। প্রথমবার ন্যাথান লায়নকে আড়াআড়ি খেলতে গেলেন মালান, ডাউন দ্য গ্রাউন্ডে এসে খেলা আলগা শট উঠে গেল কাভারে, ছুটে এসে ডাইভ দিয়ে দারুণ ক্যাচ নিলেন বদলি ফিল্ডার পিটার হ্যান্ডসকম্ব। এরপরই আলগা হয়ে গেল ইংলিশ ব্যাটিংয়ের দৃঢ়তা। মইন এলেন, কামিন্সের হঠাৎ লাফিয়ে ওঠা বলে হতচকিত হয়ে গেলেন। তার গ্লাভস ছুঁয়ে পেইনের কাছে গেল ক্যাচ। জশ হ্যাজলউডের ফুললেংথের পরই শর্ট বলের ফাঁদে পা দিলেন ক্রিস ওকস, আরেকটি ভাল ক্যাচ কামিন্সের। ৫ ওভারের মাঝে ৩ উইকেট নেই ইংল্যান্ডের।
উইকেটের স্রোতে গা ভাসালেন বেইরস্টোও। মিচেল স্টার্কের ফুললেংথের বলে ফ্লিকের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়ে তার ইনসাইড-এজ স্টাম্পে পাঠালো বল। ৬ ওভারের মাঝে ৪ উইকেট গেল ইংল্যান্ডের। ক্রেইগ ওভারটন কাবু হ্যাজলউডের স্কেলমাপা বাউন্সারে, শর্ট লেগে ক্যামেরন ব্যানক্রফটকে দেওয়া তার ক্যাচে ২৫ রানের মাঝে ৫ম উইকেট হারালো ইংল্যান্ড। স্টাম্প ছেড়ে গিয়ে শর্ট বল খেলার অভিনব পদ্ধতি কাজে দেয়নি স্টুয়ার্ট ব্রডের, ব্যানক্রফটকে তিনি ক্যাচ দেওয়ার আগে শুধু ৪০০ পেরিয়েছে ইংল্যান্ড। ৩৫ রান, ৬ উইকেট, ইংল্যান্ডের টেইল-এন্ড তাদেরকে শুধু ছলনাই করে যাচ্ছে!
ওয়াকা-র পিচে ফাটল উঁকি মারছে, তবে ওয়ার্নার-ব্যানক্রফট লাঞ্চের পর প্রথম ঘন্টা আধিপত্যই বিস্তার করলেন। পানি পানের বিরতিতেই যেন মনযোগ ছুটে গেল ওয়ার্নানের, ওভারটনের গুডলেংথের বলে ফ্রন্টফুট-ব্যাকফুটের ধন্দে পড়ে গিয়ে বেইরস্টোর হাতে দিলেন ক্যাচ। একটা উইকেট আরেকটা ডেকে আনে এ পিচে, ব্যানক্রফট প্রমাণ করলেন সেটাই। আবারও ঘাতক ওভারটন, ভেতরের দিকে ঢোকা বলে ব্যাট ছোঁয়াতে না পেরে এলবিডাব্লিউ। এটা অবশ্য রিভিউ নিয়ে পেয়েছে ইংল্যান্ড।
উসমান খাওয়াজার প্রমাণ করার ছিল অনেক কিছুই, স্মিথের সঙ্গে জুটি বেঁধে করলেনও অনেকখানি। ক্রিস ওকসের বলে এলবিডাব্লিউ হওয়ার আগে করেছেন ঠিক ঠিক ফিফটি। রিভিউ নিয়েছিলেন, তবে পিচিং ও হিটিং-এ আম্পায়ারস কল বাঁচতে দেয়নি তাকে। ঘুরিয়ে ফিরিয়ে ‘রক এন্ড রোল’ করেছেন টিভি আম্পায়ার আলিম দার, শেষ পর্যন্ত দিয়েছেন আউটই। এর আগে অবশ্য ওভারটনকে ফিরতি ক্যাচের মতো একটা সুযোগ দিয়েছিলেন খাওয়াজা, ঝাঁপিয়ে পড়ে হাত লাগালেও রাখতে পারেননি ইংল্যান্ডের দিনের সেরা বোলার।
এরপর বাকি শুধু স্মিথের গল্পটা। আরেকবার নিজের ব্যতিক্রমী ব্যাটিংয়ে অসাধারণ শক্তিমত্তা দেখিয়েছেন। ফুললেংথ, শর্ট বা গুডলেংথ, তার বিরুদ্ধে কাজে আসেনি কিছুই। লেগসাইডকে প্রাধান্য দিয়ে রুটের সাজানো ফিল্ডিং চিড়েও বের করেছেন বাউন্ডারি। ১৪টি চারের সঙ্গে মেরেছেন ১টি ছয়ও। স্মিথের সঙ্গে আছেন শন মার্শ। ইংল্যান্ড তার বিরুদ্ধেই পেয়েছিল ভাগ্যের ছোঁয়া।
শর্ট লেগে স্টোনম্যানের বুটে লেগে উঠেছিল মার্শের শট, বল বাতাসের ওপর ছিল বেশ কিছুক্ষণ। বেইরস্টো বা স্টোনম্যান, দুজনের নাগালের মধ্যেই ছিল ক্যাচ, ‘কাড়াকাড়ি’র মাঝে সেটা পড়েই গেছে শেষ পর্যন্ত। নাগালে পেয়েও তাই শেষটা দারুণ হয়নি ইংল্যান্ডের।
যেমন সকালের দারুণ শুরুটা মিলিয়ে গেছে দিনশেষে। সঙ্গে আরেকবার যুক্ত হয়েছে স্মিথ-জুজু।