• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    অ্যাশেজপানে অস্ট্রেলিয়া, আকাশপানে তাকিয়ে ইংল্যান্ড

    অ্যাশেজপানে অস্ট্রেলিয়া, আকাশপানে তাকিয়ে ইংল্যান্ড    

    ৩য় টেস্ট, পার্থ 
    ৪র্থ দিনশেষে 
    টস- ইংল্যান্ড (ব্যাটিং)
    ইংল্যান্ড ৪০৩ অল-আউট (মালান ১৪০, বেইরস্টো ১১৯, স্টার্ক ৪/৯১, হ্যাজলউড ৩/৯২) ও ১৩২/৪ (ভিনস ৫৫, মালান ২৮*, হ্যাজলউড ২/২৩, স্টার্ক ১/৩২)
    অস্ট্রেলিয়া ৬৬২/৯ ডিক্লে. (স্মিথ ২৩৯, মিচেল মার্শ ১৮১, অ্যান্ডারসন ৪/১১৬, ওভারটন ২/১১০)
    ইংল্যান্ড ৬ উইকেট নিয়ে ১২৭ রানে পিছিয়ে 


    অ্যাশেজে বলতে গেলে এক হাত দিয়ে রেখেছে অস্ট্রেলিয়া। আর এখনই অ্যাশেজ হাতছাড়া না করতে ইংল্যান্ড তাকিয়ে পার্থ টেস্টের শেষদিনে বৃষ্টির পূর্বাভাসে। প্রকৃতির খেলা বাদ দিয়ে মাঠের খেলা হিসেব করলে, শেষদিনে অস্ট্রেলিয়াকে আবার ব্যাটিং করাতে ইংল্যান্ডের প্রয়োজন ১২৭ রান। আর এই রানের আগে শেষ ৬ উইকেট তুলে নিলেই অ্যাশেজ ফিরে পাবে অস্ট্রেলিয়া। এখন পর্যন্ত অ্যাশেজে দুই দলের যা গতিবিধি, তাতে অস্ট্রেলিয়ার জন্য কাজটা খুব একটা কঠিন হওয়ার কথা নয়। তবে ইংল্যান্ডের জন্য কাজটা শুধু কঠিন না। বেশ কঠিন। 

    পার্থে এদিন বৃষ্টির পূর্বাভাস ছিলই। তবে বৃষ্টি নামলো চা বিরতির মিনিট চারেক আগে। ততক্ষণে দ্বিতীয় ইনিংসে ৩ উইকেট হারিয়ে ফেলেছে ইংল্যান্ড। দ্বিতীয় দফা বৃষ্টি এসে খেলা পরিত্যক্ত করে দেওয়ার আগে ওয়াকা সাক্ষী হয়েছে মিচেল স্টার্কের অসাধারণ এক ডেলিভারির। যাতে বোল্ড হয়েছেন জেমস ভিনস।

    গতকাল সারাদিনে একটি উইকেট নিয়েছিল ইংল্যান্ড, আজ প্রথম পাঁচ ওভারের মাঝেই নিল তিনটি। মিচেল মার্শকে দিনের দ্বিতীয় বলেই এলবিডাব্লিউ করে ডাবল সেঞ্চুরি করতে দিলেন না জেমস অ্যান্ডারসন, খানিক বাদে ২৫০ মিস হলো স্টিভ স্মিথেরও। অ্যান্ডারসনের বলে তিনিও হলেন এলবিডাব্লিউ, এটা অবশ্য রিভিউ নিয়ে পেয়েছে ইংল্যান্ড। দুই ক্ষেত্রেই অ্যান্ডারসন সহায়তা পেয়েছেন পিচের ফাটলের, বা বলা ভাল, গতকাল যে সহায়তাটা আদায় করতে পারেননি, আজ সেটা পেরেছেন। মিচেল স্টার্ক টিম পেইনের সঙ্গে ভুল বুঝাবুঝিতে রান-আউট, ইংল্যান্ড নতুন দিনে নতুন শুরুটা করে ফেলেছে। তবে অস্ট্রেলিয়াকে শেষ করার আগে যে তারা শেষ হন না, তার প্রমাণ মিললো একটু পর। 

    ইংলিশদের ভুলতে বসা হতাশা ফিরিয়ে দিলেন টিম পেইন ও প্যাট কামিন্স। পেইন অপরাজিত ছিলেন ৪৯ রানে, আর ৪১ রান করে কামিন্স এলবিডাব্লিউ হয়েছেন অ্যান্ডারসনের বলেই। পেসের অভাব বুঝতে না দিয়ে কন্ডিশনের সঙ্গে মানিয়ে নিতে পেরেছেন যা অ্যান্ডারসনই, তাকে বাদ দিলে ইংলিশ বোলিং হয়ে থেকেছে করে নাকো ফোঁসফাঁস ধরনেরই। ন্যাথান লায়ন মইনকে ক্যাচ দিয়েছেন অ্যান্ডারসনের বলেই, এরপরই ৬৬২ রানে ইনিংস ঘোষণা করে দিয়েছেন স্মিথ। দেশের মাটিতে অস্ট্রেলিয়ার এটি তৃতীয় সর্বোচ্চ স্কোর, প্রথম সর্বোচ্চ ৭৩৫ রানও এসেছিল এই পার্থেই। 

    ২৫৯ রানের লিডের বোঝা সামলাতে পারেননি কুক, তাকে অনুসরণ করে আরেকবার ব্যর্থ হয়েছেন রুট। হ্যাজলউডের অফস্টাম্পঘেঁষা বলে পেইনকে ক্যাচ দিয়ে শুরুটা করেছিলেন অবশ্য মার্ক স্টোনম্যান। একই বোলারকে ফিরতি ক্যাচ দিয়েছেন কুক, এ নিয়ে টানা ১০ ইনিংসে ফিফটিশূন্য থাকলেন তিনি। অ্যাশেজে ইংলিশদের পারফরম্যান্সের অনেকখানিই ফুটে উঠছে তার ব্যাটে। এক্ষেত্রে কুকের অফফর্ম যথেষ্ট না হলে সেটা ফুটিয়ে তুলছেন রুট। ন্যাথান লায়নের প্রথম বলেই স্লিপে স্মিথকে ক্যাচ দিয়েছেন ইংলিশ অধিনায়ক, সেটা আবার দিক পরিবর্তন করেছিল পেইনের প্যাডে লেগে। স্মিথ যখন স্বপ্নের ফর্মে আছেন, রুট তখন দুঃস্বপ্ন কাটিয়ে ওঠার আশায়। সে আশা সহসাই পূরণ হচ্ছে না তার। 

    ডেভিড মালান-জনি বেইরস্টোর ব্যাটিংয়ের আগে জেমস ভিনসই যা আশা জুগিয়েছিলেন। ১২ চারে করেছেন ৫৫, তার স্ট্রোকপ্লে ইংল্যান্ডকে কতখানি আশা দিতে পেরেছে, সেটা অবশ্য নিশ্চিত নয়। এরপরই স্টার্কের সেই ডেলিভারি, যাতে আক্ষরিক অর্থেই কিছু করার ছিল না ভিনসের। রাউন্ড দ্য উইকেটে রিটার্ন ক্রিজ ঘেঁষে বল করছিলেন স্টার্ক, মিডল স্টাম্পে পড়ে সেটা টার্ন করলো লেগস্পিনের মতো। এরপর ভেঙ্গে দিল অফ আর মিডল স্টাম্প। স্টার্কের ডেলিভারি নিয়ে শুরু হয়ে গেছে আলোচনা, অনেকেই বলছেন এটা শতাব্দিসেরা বল, কারও মতে অ্যাশেজের ইতিহাসেরই সেরা বল। 

    এত কিছু ভাবার অবশ্য সময় নেই ইংল্যান্ডের। ড্রেসিংরুম বা রাতে হোটেলরুমে ফিরেও নিশ্চয়ই কেউ একটু পর পর তাকাবেন আকাশপানে। এমসিজি পর্যন্ত অ্যাশেজ তাদের কাছে রাখতে একমাত্র আশা জোগাতে পারে ওই ঘন কালো মেঘে ঢাকা আকাশই। উজ্জ্বল আকাশের নিচে যে ঘোর অন্ধকার সঙ্গী তাদের এখন!