• অ্যাশেজ ২০১৭-১৮
  • " />

     

    অতঃপর শুধুই ইংল্যান্ডের দিন

    অতঃপর শুধুই ইংল্যান্ডের দিন    

    চতুর্থ টেস্ট, মেলবোর্ন
    টস- অস্ট্রেলিয়া (ব্যাটিং)
    ২য় দিনশেষে 
    অস্ট্রেলিয়া ১ম ইনিংস ৩২৭ অল-আউট (ওয়ার্নার ১০৩, স্মিথ ৭৬, মার্শ ৬১, ব্রড ৪/৫১, অ্যান্ডারসন ৩/৬১)
     ইংল্যান্ড ১ম ইনিংস ১৯২/২ (কুক ১০৪*, রুট ৪৯*, লায়ন ১/৪৪)


    অ্যালেস্টার কুকের দীর্ঘ প্রতীক্ষিত সেঞ্চুরি, স্টুয়ার্ট ব্রডের দীর্ঘ প্রতিক্ষিত উইকেটগুলো, জিমি অ্যান্ডারসন ছাড়া বাকি পেসারদেরও ধারাবাহিক লাইন-লেংথ, এমসিজিতে ইংল্যান্ডের জন্য এলো সবকিছুই। অস্ট্রেলিয়াকে ৩২৭ রানে আটকিয়ে ইংল্যান্ড এক দুই করে তিনটি সেশনই করে নিল নিজেদের। সব মিলিয়ে এমসিজিতে দিনটাও নিজেদেরই করে নিল ইংল্যান্ড। সে প্রতীক্ষিত দিনটা এলো, শুধু অ্যাশেজ হারানোর পরই। কুক-রুটকে সঙ্গে করে ৮ উইকেট নিয়ে ১৩৫ রানে পিছিয়ে এখন ইংল্যান্ড। 

    দিনের শেষ ওভারে স্টিভ স্মিথকে চার মেরে ৩২ নম্বর সেঞ্চুরি করেছেন কুক। গত ১০ ইনিংসে ফিফটি ছিল না তার, ১২ বছরের ক্যারিয়ারে সবচেয়ে দীর্ঘখরা। আদতে মেলবোর্ন টেস্ট ‘ডেড রাবার’, তবে কুকের প্রমাণের ছিল অনেক কিছুই। ইনিংসের একেবারে শুরুতে একটু নড়বড়ে ভাবটা কাটিয়ে নিয়েছেন খানিক বাদেই। সোজা ব্যাটে খেলা শুরু করেছেন, কন্ডিশন বুঝে ঢুকে গেছেন নিজের ইনিংসে। মনে করিয়েছেন সেই কুককে, বছর সাতেক আগে এই অস্ট্রেলিয়াতেই যিনি কাটিয়েছিলেন তার ক্যারিয়ারের সোনালী এক গ্রীষ্ম।দিনশেষে ১০৪ রানে অপরাজিত আছেন, অস্ট্রেলিয়ানরাও হাত মিলিয়ে গেছেন তার সঙ্গে। 

     

     

    ৩৫ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রা নিয়ে এমসিজি এদিন আক্ষরিক অর্থেই ছিল উত্তপ্ত। ইংল্যান্ডের জন্য আরেকটি দীর্ঘ দিন অপেক্ষা করে ছিল, সেই তারাই অস্ট্রেলিয়ার শেষ ৭ উইকেট নিল ৭৩ রানে। ফ্ল্যাট উইকেট এদিন পেস কেড়ে নিল, বাউন্সও অসমান। অস্ট্রেলিয়ান অধিনায়ক স্টিভ স্মিথসহ তিনজন শট খেলতে গিয়ে বল ডেকে আনলেন স্টাম্পে। টম কারানকে প্রথম টেস্ট উইকেটের স্বাদ দিয়ে শুরুটা করেছিলেন স্মিথই, এরপর ক্রিস ওকসের বলে মিচেল মার্শ, জিমি অ্যান্ডারসনের বলে টিম পেইন। এর আগে শন মার্শকে এলবিডাব্লিউ করেছেন স্টুয়ার্ট ব্রড, সেটাও রিভিউ নিয়ে। পায়ে লাগলেই আবেদনের বদলে উদযাপন শুরু করে দেন ব্রড, মার্শের ক্ষেত্রেও তাই করেছিলেন। আজ ব্রড বা ইংল্যান্ডের সবই ঠিক হবে বলেই যেন রিভিউ নিয়েও সফল তারা! ব্রড তার নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের পুরষ্কার পেলেন। এলবিডাব্লিউ করলেন জ্যাকসন বার্ডকেও।

    অস্ট্রেলিয়া লাঞ্চে গেছে ৮ উইকেটে ৩২৬ রান নিয়ে। এরপর যোগ হয়েছে আর ১ রান। কামিন্স নীচু থাকা বলে ড্রাইভ করতে গিয়ে স্লিপে ক্যাচ দিয়েছেন কুকের কাছে, টেলিভিশন আম্পায়ার মাঠের সফট-সিগন্যাল আউটই বজায় রেখেছেন। আর শেষে লায়ন এলবিডাব্লিউ অ্যান্ডারসনের রিভার্স সুইংয়ে। 

    উত্তপ্ত দিনে অস্ট্রেলিয়ার পেসাররা ব্রেকথ্রু এনে দিতে পারলেন না, উলটো পেটের পীড়া নিয়ে যাওয়া-আসা করলেন প্যাট কামিন্স। দারুণ শুরুর আভাস দেওয়া মার্ক স্টোনম্যানকে ফিরতে হলো ন্যাথান লায়নের দারুণ এক ফিরতি ক্যাচে। এই এমন ক্যাচ বা কখনও রান-আউট করে লায়ন অস্ট্রেলিয়াকে ম্যাচে ফিরিয়ে এনেছেন এর আগে এই সিরিজেই, তবে আজকের দিনটা আলাদা। এমনকি হ্যাজলউডের বলে এলবিডাব্লিউ হয়ে উঠে যাওয়া ভিনসও বেঁচে যেতে পারতেন, বল প্যাডের আগে লেগেছিল ব্যাটে! তিনি বুঝতেই পারেননি, রিভিউও নেননি! 

    এরপর কুক-রুটের প্রদর্শনী। রুট অপরাজিত ৪৯ রানে, পূর্বসূরিকে দিয়েছেন যোগ্য সহায়তা। কুক ১৫টি চার মেরেছেন। ডাউন দ্য গ্রাউন্ড থেকে পয়েন্ট, কাভার, অস্ট্রেলিয়ান বোলারদের রীতিমতো শাস্তি দিয়ে গেছেন। শুধু ৩২তম সেঞ্চুরি নয়, টেস্টে সর্বোচ্চ রান-সংগ্রাহকের তালিকায় মাহেলা জয়াবর্ধনে ছাড়িয়ে তিনিই এখন আটে। 

    সেঞ্চুরি করে হেলমেট খুললেন, ব্যাট উঁচিয়ে ধরলেন। কানের ওপর হাত এনে করলেন তার ‘হেড-ফোন’ ধরনের উদযাপনও। ক্ষীপ্রতা নেই, বাঁধভাঙ্গা উল্লাস নেই। সেটা ক্যারিয়ারে সেভাবে ছিলও না তার। এ উদযাপনে ছিল স্বস্তি। একরাশ স্বস্তি। এই টেস্টেও ইংল্যান্ডের কাজ বাকি অনেক। তবে এই অ্যাশেজে এই প্রথমবার আধিপত্য বিস্তার করা দলটার নাম অস্ট্রেলিয়া নয়। সেটা ইংল্যান্ড।